❐ সঠিক উত্তরটি চিহ্নিত করে লেখো:
১। সাগরে যে (মণি/পাথর/অগ্নি/জল) থাকে কল্পনা সে নয়।
উত্তরঃ সাগরে যে অগ্নি থাকে, কল্পনা সে নয়।
২। নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে (কৃপায়/দয়ার/করুণার/ভালোবাসার) অবতার।
উত্তরঃ নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে দয়ার করুণার অবতার।
৩। কোথাও তবু নোেয়াওনি (মস্তক/ মাথা/ সম্মান /শির) জীবনে একবার।
উত্তরঃ কোথাও তবু নোয়াওনি শির জীবনে একবার।
৪। নামলে একা মাথায় নিয়ে (গুরুর/মায়ের/পিতার/ ঠাকুর দাদার) আর্শীবাদ।
উত্তরঃ নামলে একা মাথায় নিয়ে মায়ের আর্শীবাদ।
❐ অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:
১। সিংহশিশু কোথায় জন্মেছিলেন?
উত্তরঃ বীরসিংহ গ্রামে।
২। কাকে সিংহ শিশু বলা হয়েছে?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগরকে।
৩। সাগরে কীভাবে অগ্নি থাকে?
উত্তরঃ সাগরের নিচে অগ্নিয় শিবির মধ্যে অগ্নি থাকে।
৪। কাকে দেখে অবিশ্বাসীর বিশ্বাস হয়েছে?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগরকে।
৫। দয়ার অবতার কোন্ অবস্থায় পৃথিবীতে এসেছিলেন?
উত্তরঃ নিঃস্ব হয়ে।
৬। তিনি কাদের অস্ত্র দিয়েছেন?
উত্তরঃ অক্তহীনকে।
৭। কার অভাব আজও পূরণ হয়নি?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগরের।
৮। 'অদৃষ্ট' বলতে কী বোবা?
উত্তরঃ ভাগ্য বা ললাট।
❐ সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:
১। বিদ্যাসাগরকে কেন সিংহশিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ সিংহ হল বনের রাজা। তাকে অন্যান্য পশু সম্মান করে চলে, তেমনি বিদ্যাসাগরও হলেন তেজদীপ্ত, সুগম্ভীর, বলীয়ান পুরুষ। তাই তাকে সিংহশিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২। 'বীর্যে সুগম্ভীর' বাক্যাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ উক্ত বাক্যাংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'বিদ্যাসাগর' কবিতা থেকে সংকলিত হয়েছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় শুধু দয়ার সাগরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বীর, সাহসী, সিদ্ধান্তে অবিচল এক মহান পুরুষ। তাই তিনি বিদ্যাসাগরকে 'বীর্যে সুগম্ভীর' বলেছেন।
৩। 'নামলে একা মাথায় নিয়ে আর্শীবাদ'। আশীবাদ পাওয়ার পর তিনি কোন্ কোন্ কাজ করেছেন?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর মহাশয় মায়ের আর্শীবাদ পাওয়ার পর অনেক কাজই করেছেন। তারই মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল অসুস্থ, অনাথ শিশুদের তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। যারা অন্নহীন, বস্ত্রহীন ছিল তাদের খাদ্য ও বস্ত্র দিয়ে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে ছিলেন।
৪। 'এত দিনেও তোমার অভাব পূরল নাকো, হায়' - অভাব পূরণ না হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর মহাশয় এই পৃথিবীতে যে সব অবদান রেখে গেছেন, সেগুলোকে কোনোদিনই ভুলবার নয়। তিনি গরীব, অসহায়, নিঃস্ব মানুষদের সেবায় যে ভাবে নিজেকে নিয়োজিত করে গেছেন তা বারবার মানুষকে স্মরণ করিয়া দেয়। বর্তমান কালে আমরা প্রাত্যহিক জীবনযাপনের সময় তারা অনুপস্থিত বারবার অনুভব করি।
৫। 'তাইতো আজি অশ্রুধারা ঝরে নিরন্তর কেন আজও অশ্রুধারা ঝরে?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগরের কথা মনে পড়লে আজও বাঙালির চোখে জল আসে। তাঁর অমর কীর্তি মানুষ কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। তিনি হিন্দু বিধবাদের পুনরায় বিবাহ দেওয়ার রীতি চালু করেছিলেন। যার ফলশ্রুতি আজও অক্ষুন্ন আছে।
৬। 'নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে দয়ার অবতার' - কে নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলেছিলেন? তাকে দয়ার অবতার বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর মহাশয়।
তিনি ছিলেন দয়াশীল ব্যাক্তি। মানুষের দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। বহু গরীব মানুষ তাঁর দানের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। এজন্য তাঁকে দয়ার অবতারা বলা হয়েছে।
৭। 'বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর বীর' 'সিংহশিশু' কথাটির অর্থ কী? বিদ্যাসাগরকে কেন সিংহশিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ সিংহশিশু কথাটির অর্থ হল সিংহের ন্যায় শিশু। বিদ্যাসাগর ছিলেন সুগম্ভীর, সিদ্ধান্তে অটল, অবিচল, তেজদীপ্ত, সুমহান, দায়িত্ববান, তাই তাঁকে সিংহশিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
৮। 'করলে পূরণ অনাথ আতুর অকিঞ্চনের সাধ' অনাথ মানুষের জন্য বিদ্যাসাগর কী করেছেন? তাঁর সমস্ত কাজের সঙ্গে কী জড়িয়ে ছিল?
উত্তরঃ অনাথ মানুষদের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য, বস্ত্র দিয়েছেন। অসুস্থ মানুষদের সেবা করে তিনি সুস্থ করে তুলেছেন। তাঁর সমস্ত কাজের সঙ্গে দয়া, মায়া, ভালোবাসা, সততা জড়িয়ে ছিল।
৯। 'কীর্তিঘন মূর্তি' তোমার জাগে প্রাণের পর'-'কীর্তিঘন মূর্তি' কথাটির মধ্যে যে ভাব নিহিত আছে তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কীর্তিঘন মূর্তি সমস্ত বাঙালির প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেন। তাঁর অমর কীর্তিগুলি বাঙালির জীবনে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত আছে। বাঙালি নারীদের জন্য তিনি যে কাজ করে রেখে গেছেন তা ভুলবার নয়। তিনি হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। হিন্দু বিধবাদের পুর্নবিবাহ আইনসিদ্ধ করেছিলেন। তিনি বহুবিবাহ নিরোধের চেষ্টাও করেন। গণশিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।
১০। 'অদৃষ্টেরে ব্যর্থ তুমি করলে বারংবার' কার প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে অদৃষ্টকে ব্যর্থ করেছেন?
উত্তরঃ বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে।
তিনি তাঁর মায়ের আর্শীবাদ মাথায় নিয়ে খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন, মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। এভাবেই তিনি ভাগ্যের লিখনকে পরিহাস করেছেন বারবার।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন:
১। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বিদ্যাসাগরকে এই কবিতায় যে ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তরঃ ছান্দসিক সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর 'বিদ্যাসাগর' কবিতায় বিদ্যাসাগরকে সিংহশিশুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি ছিলেন দয়ার সাগর। কারোর দুঃখ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে অনেক অবিশ্বাসী বিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তিনি নিঃস্ব হয়ে পৃথিবীতে এলেও তিনি ছিলেন দয়ার সাগরে। এই সুমহান পুরুষ জীবনে কখনও মাথা নোয়ান নি। তিনি তাঁর মায়ের আর্শীবাদ মাথায় নিয়ে - অনাথ মানুষদের অনেক অভাব পূরণ করেছিলেন। অন্তহীনকে অস্ত, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিয়ে অদৃষ্টকে ব্যর্থ করেছিলেন বারবার। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এই কবিতার মাধ্যমে বারবার প্রমাণ করতে চেয়েছেন তাঁর মহানুভবতা, তাঁর অমর, অক্ষয় কীর্তিগুলোর কথা স্মরণ করে আজও বাঙালির নয়ন অশ্রুসিক্ত - হয়ে ওঠে।
২। কী কী কারণে প্রতিদিন বিদ্যাসাগরের কথা আমাদের মনে রাখা উচিত?
উত্তরঃ বর্তমান ভারতবর্ষে তথা বাঙালির জীবনে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতি মুহূর্তে আমাদের তাঁকে স্মরণ করা উচিত। তিনি নিদারুন দারিদ্রতার মধ্যেও পড়াশুনা ছাড়েননি। আলোর অভাবে তিনি রাস্তার আলোয় বিদ্যাভাস করতেন। এজন্যই তিনি সদা সর্বদা গরীব মানুষদের পাশে থাকতেন। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি বেথুন সাহেবকে সহযোগিতা করেন। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে বাংলায় গ্রামাঞ্চলে ১০০টির বেশি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি হিন্দু বিধবাদের পুর্নবিবাহ আইনসিদ্ধ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যাসাগর নব্য বাঙালির বর্ণপরিচয় ঘটিয়েছেন।
৩। বিদ্যাসাগরের 'কীর্তিঘন মূর্তি'র পরিচয় দাও।
উত্তরঃ প্রাতঃস্মরণীয় পুণ্যশ্লোক বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এদেশের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। শিক্ষাবিস্তার এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলনে তিনি এ যুগের প্রেরণস্থল। এদেশে বিদ্যাসাগরের মতো পূর্ণাঙ্গ মানুষের জন্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কীর্তি কাহিনী বাঙালি জীবনে অমর হয়ে আছে। তিনি বাংলা সাহিত্যে ভাষার সিংহদ্বার উদঘাটন করেছিলেন। তাঁর গদ্য ভাষারীতি বাংলা ভাষা সাহিত্য রচনার পথ দেখিয়েছে। সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত শিক্ষার ধারা তিনি আব্রাহ্মণদের জন্যও খুলে দিয়েছিলেন। গণশিক্ষা প্রসারের জন্যে তিনি 'বর্ণপরিচয়', 'বোধোদয়', 'কথামালা' প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে তিনি অগ্রণী ভূ মিকা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিধাবাদের পুর্নবিবাহ আইনসিদ্ধ করেছিলেন। তিনি বহুবিবাহ নিরোধের চেষ্টাও করেন। নিজের ছেলের সঙ্গে বিধবার বিবাহ দেন। জ্বলন্ত দেশপ্রেম, প্রবল জাতীয়তাবোধ ও বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা হল তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর মাতৃভিক্ত ছিল অসাধারণ।
বিদ্যাসাগরের জীবনাদর্শ অনুসরণেই বাঙালির আত্মশিক্ত জাগবে, হৃদয়ে লাগবে বোধোদয়ের ফাগ। তাঁর অজেয় পৌরুষ ও অক্ষয় মনুষ্যত্ব চির অমর হয়ে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।
❐ পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ:
১। বাক্যরচনা করো:
সিংহশিশু, কল্পনা, নিঃস্ব, আর্শীবাদ, ব্যর্থ।
সিংহশিশু - বিদ্যাসাগরকে সিংহশিশু বলা হয়।
কল্পনা - চাঁদের বুড়ি অলীক কল্পনা।
নিঃস্ব - রামবাবু মেয়ের বিয়ে দিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
আর্শীবাদ- সন্তানের উপর পিতামাতার আর্শীবাদ সম সময় থাকে।
ব্যর্থ - শ্যামবাবু কাজটি করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন।
২। অর্থ লেখো:
প্রত্যয়, নিঃস্ব, অবিশ্বাসী, শির, নিরন্তর।
প্রত্যয় - বিশ্বাস;
নিঃস্ব - যার কিছু নেই।
শির - মস্তক;
নিরন্তর - সর্বদা।
৩। রেখাঙ্কিত পদগুলির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করোঃ
i. সাগরে যে অগ্নি থাকে- (অধিকরণ কারকে 'এ' বিভক্তি)।
ii. তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয় (কর্তৃকারকে 'শূন্য' বিভক্তি)।
iii. নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে- (অধিকরণ কারকে 'এ' বিভক্তি)।
iv. নোয়াওনি শিব জীবনে একবার। কর্তৃকারকে 'শূ ন্য' বিভক্তি।
৪। সমার্থক শব্দ লেখো:
প্রত্যয়, বিশ্ব, শির, আর্শীবাদ, অক্ত নিররন্তর।
প্রত্যয় - বিশ্বাস;
বিশ্ব- জগ্র;
শির - মস্তক;
আর্শীবাদ - দয়া;
অক্ত- খাদ্য;
নিরন্তর - সর্বদা
No comments:
Post a Comment