প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার নিদর্শন প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার নিদর্শন প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Prachin Bharoter Bigyan Chorchar Nidorshon Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 24 June 2025

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার নিদর্শন প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার নিদর্শন প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Prachin Bharoter Bigyan Chorchar Nidorshon Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চার নিদর্শন 
প্রশ উত্তর




👉(পল্লীসমাজ  প্রশ উত্তর )



"প্রাচীন-পুরাণের"। 

"বিজ্ঞানচর্চা-বিজ্ঞান নিয়ে কাজ ও গবেষণা"। 

"নিদর্শন-চিহ্ন, লক্ষণ বা উদাহরণ"।


 ❒ লেখক পরিচিতি: জন্ম ১৮৬১ খ্রিঃ ২ আগস্ট বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাডুলি গ্রামে। ভারতের বিজ্ঞান চর্চায় তাঁর নাম উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে। বিজ্ঞান গবেষণার মধ্যে থেকেও তিনি সমাজ দেশ বা রাষ্ট্রচিন্তাও করেছেন। তিনি লেখক হিসাবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল কেমিক্যাল্স। 'হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস', 'আত্মচরিত' ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। ১৯৪৪ খ্রিঃ ১৬ জুন ইনি ইহধাম ত্যাগ করেন।


❒ বিষয় পরিচিতি: প্রাচীনকালেও যে আমাদের সংমিশ্রণে কীভাবে মানুষের দরকারি জিনিস তৈরি হয়। সেটাই হল রসায়নের গোড়ার কথা ছানা ও চিনি থেকে তৈরি হয় সন্দেশ। ছানা এসেছে দুধ থেকে আবার দুধ কী কী পদার্থ থেকে তৈরি তাও বিশ্লেষণে জানা যাবে। তাই কোন্ উপাদানের সঙ্গে কী মেশালে কী খাবার হবে তা জানায় রসায়ন বিজ্ঞান।

আমরা লেখার কালি, কাচ, কাপ, ডিস যত কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করি সবেতেই আছে:. রসায়নের দান। বর্তমানে ইউরোপের কাছে আমরা বিজ্ঞান শিখছি, কিন্তু একদিন বিজ্ঞান বিষয়ে ভারতই ছিল অগ্রণী। প্রাচীন ভারতর নানান মন্দির তাদের দান, 'চরক' ও 'সুশ্রুত' দুখানি গ্রন্থে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে জানা যায়। ক্ষার সম্পর্কে ভারতে যিশুখ্রিস্টের জন্মের বহুবছর পূর্বেই চর্চা হত। উদ্ভিদ পোড়ালে মৃদুক্ষার হয়। পটাশকে যবক্ষার বলা হত। দিল্লির একটি লৌহস্তম্ভ নির্মিত হয় খ্রিস্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে। এতে আজও মরিচা পড়েনি। এত বড়ো আশ্চর্য লোহা আজও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এরকম পুরির কোনারক সূর্য মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে এরকম লোহার তৈরি। ভারতবর্ষে প্রাচীন গৌরব আবার ফিরিয়ে আনা যাবে বলে লেখকের বিশ্বাস।


⬛নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: 


❐ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:  (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার নিদর্শন গদ্যাংশটি (গল্প/প্রবন্ধ/রচনা) জাতীয় লেখা।

উত্তর: প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চা নিদর্শন গদ্যাংশটি প্রবন্ধ জাতীয় লেখা।


(খ) উক্ত গদ্যাংশটির লেখক হলেন (প্রফুল্লচন্দ্র/সুনীত কুমার/জগদীশচন্দ্র)

উত্তর: উক্ত গদ্যাংশটির লেখক হলেন প্রফুল্লচন্দ্র।


(গ) সন্দেশ প্রস্তুত হয়েছে (দুধ ও চিনি/ছানা ও দুধ/ছানা ও চিনি)-র সংযোগে।

উত্তর: সন্দেশ প্রস্তুত হয়েছে ছানা ও চিনির সংযোগে।


(ঘ) দিল্লির লৌহস্তম্ভটি (দুতলা/পাঁচতলা) বাড়ির চেয়ে উঁচু।

উত্তর: দিল্লির লৌহস্তম্ভটি পাঁচতলা বাড়ির চেয়ে উঁচু।


❐ শূন্যস্থান পূরণ করো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) সার্জিকাক্ষারের বর্তমান নাম ------। 

উত্তর: সার্জিকাক্ষারের বর্তমান নাম সোডা।


(খ) পুরীর কাছে ------ বিশাল কড়ি পড়ে আছে। প্রাচীন সূর্যমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মরিচাবিরোধী অনেকগুলি

উত্তর: পুরীর কাছে কোনারক প্রাচীন সূর্যমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মরিচাবিরোধী অনেকগুলি বিশাল কড়ি পড়ে আছে।


(গ) গাঁয়ের গরিব লোকেরা ----- পুড়িয়ে ছাই করত।

উত্তর: গাঁয়ের গরিব লোকেরা কলার বাস্না পুড়িয়ে ছাই করত।


(ঘ) ------ পোড়ালে যে মৃদুক্ষার হয় তাকে পটাশ বলে।

উত্তর: স্থলজ উদ্ভিদ, পোড়ালে যে মৃদুক্ষার হয় তাকে পটাশ বলে।


(ঙ) ------ ও ------ নামে দুখানি প্রসিদ্ধ প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র আছে।

উত্তর: চরক ও সুশ্রুত নামে দুখানি প্রসিদ্ধ প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র আছে।


(চ) দেশের শিক্ষা ও সভ্যতার মূল ভিত্তিই হচ্ছে ------

উত্তর: দেশের শিক্ষা ও সভ্যতার মূল ভিত্তিই হচ্ছে বিজ্ঞান।


❐ বাক্যের ভুল অংশটি সংশোধন করে লেখো: প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) সেকালে সোডার নাম ছিল ক্ষার।

উত্তর: সেকালে সোডার নাম ছিল সার্জিকাক্ষার।


(খ) এই কাষ্ঠস্তন্ত নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টপরবর্তী চতুর্থ শতকে।

উত্তর: এই লৌহস্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টপরবর্তী চতুর্থ শতকে।


(গ) এ যে মন্ত্র শুভ লক্ষণ সে বিষয়ে চিন্তা নেই।

উত্তর: এ যে মস্ত শুভ লক্ষণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।


(ঘ) আশা করি, তোমরা উত্তরজীবনে এই বড়ো কার্যে ব্রতী হবে।

উত্তর: আশা করি, তোমরা উত্তরজীবনে এই বড়ো কার্যে ব্রতী হবে।


❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:  (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) রঙিন শাড়িতে, ব্লাউজে যে সমস্ত রঙের ছিটে, তা বিজ্ঞানের কোন্ শাখার দান?

উত্তর: রঙিন শাড়িতে, ব্লাউজে যে সমস্ত রঙের ছিটে, তা বিজ্ঞানের রসায়ন শাখার দান?


(খ) নাগার্জুন কে? তিনি কোন সময়ের লেখক ছিলেন?

উত্তর: নাগার্জুন একজন বৌদ্ধভিক্ষুক ছিলেন। তিনি রসায়নচর্চায় অশেষ খ্যাতিলাভ করেন। তিনি তিনশো খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমান ছিলেন।


(গ) কাপড় কাচবার জন্য যে সোডা ব্যবহার করা হয় তার নাম কী?

উত্তর: কাপড় কাচবার জন্য. যে সোডা ব্যবহার করা হয় তার নাম মৃদুক্ষার।


(ঘ) প্রাচীন ভারতের দুখানি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নাম লেখো।

উত্তর: চরক ও সুশ্রুত।।


(ঙ) সাজিমাটি কী?

উত্তর: বিহার, যুক্তপ্রদেশে বা পাঞ্জাবে কোনো স্থানে জমির ওপর ছাতনা ধারার মতো একটি জিনিস ফুটে উঠতে দেখা যায়, একে বলে সাজিমাটি। আগেকার দিনে সাজিমাটিকে বলা হত সার্জিকাক্ষার।


(চ) বৌদ্ধ ভিক্ষু বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বৌদ্ধ ভিক্ষু বলতে বোঝায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা শ্রমণ।


(ছ) রসায়ন বিজ্ঞানের সাহায্যে পাওয়া কয়েকটি উপাদানের নাম করো।

উত্তর: রসায়ন বিজ্ঞানের সাহায্যে পাওয়া কয়েকটি উপাদানের নাম হল-পটাশিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম কার্বনেট, কস্টিক পটাশ ইত্যাদি।


(জ) প্রাচীন ভারতে রসায়নচর্চায় কে অশেষ খ্যাতি লাভ করেন? তিনি কোন্ সময়ের মানুষ ছিলেন।

উত্তর: প্রাচীন ভারতের নাগার্জুন রসায়ন শাস্ত্রে অশেষ খ্যাতি লাভ করেন। তিনি খ্রিস্ট জন্মের তিনশো বছর পূর্বের মানুষ ছিলেন।


(বা) চরক ও সুশ্রুত কী? এখানে কীসের বিবরণ আছে?

উত্তর: চরক ও সুশ্রুত প্রাচীন ভারতের দুখানি প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র। এই দুখানি গ্রন্থে অনেক রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রস্তুত করার পদ্ধতি বিবৃত আছে।


(ঞ) ক্ষার কত প্রকার ও কী কী? সেগুলি কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?

উত্তর: ক্ষার দু প্রকার-মৃদু ক্ষার বা Mild Alkali এবং তীক্ষ্ণক্ষার বা Caustic Alkali। স্থলজ উদ্ভিদ পোড়ালে যে মৃদু ক্ষার উৎপন্ন হয় তাকে বলে পটাশিয়াম কার্বনেট। সামুদ্রিক উদ্ভিদ পোড়ালে যে মৃদু ক্ষার উৎপন্ন হয় তাকে বলে সোডিয়াম কার্বনেট। এদের সঙ্গে চুন মিশিয়ে ফোটালে যে তীক্ষ্ণ ক্ষার। উৎপন্ন হয় তাকে বলে কস্টিক আলকালি কস্টিক পটাশ বা কস্টিক সোডা।


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-২/৩)

(ক) 'সুশ্রুতের ক্ষার প্রস্তুতকরণ অধ্যায়ে এইসব বিবরণ সুন্দরভাবে বলা আছে'-সুশ্রুত কে ছিলেন? তিনি কীজন্য বিখ্যাত? তাঁর লেখা কিছু বিবরণের পরিচয় দাও।

উত্তর: সুশ্রুত ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন অতি বিখ্যাত রাসায়নিক আয়ুর্বেদ শাস্ত্র রচয়িতা। তিনি বিবিধ রাসায়নিক পদ্ধতি এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রস্তুতের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

তাঁর রাসায়নিক আবিষ্কারের মধ্যে ক্ষার প্রস্তুতের বিবরণ দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায়। কাপড় কাচা ও গায়ে মাখার সাবানের উপাদান হল এই ক্ষার। সাধারণ দু'রকম ক্ষার হয়-মৃদু ক্ষার বা Mild Alkali এবং তীক্ষ্ণ ক্ষার বা Caustic Alkali। কাপড় কাচার সাবানে যে ক্ষার ব্যবহার হয় তা হল মৃদু ক্ষার কিন্তু গায়ে মাখার সাবানে ব্যবহৃত হয় তীক্ষ্ণক্ষার। সুশ্রুতের ক্ষার প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি অধ্যায়ে এ বিষয়ে সুন্দর বিবরণ রয়েছে।


(খ) 'মৃদু ক্ষার' এবং 'তীক্ষ্ণ ক্ষার' কাকে বলে? 'যবক্ষার' কী?

উত্তর: 

মৃদুক্ষার: যে ক্ষারের ক্ষারধর্ম প্রবল নয় তাকে মৃদুক্ষার বলে। যেমন-কাপড় কাচার জন্য যে ক্ষার ব্যবহৃত হয় তা হলো মৃদুক্ষার [সোডিয়াম কার্বনেট বা পটাসিয়াম কার্বনেট]

তীক্ষ্ণক্ষার: যে ক্ষারের ক্ষারধর্ম প্রবল হয় তাকে তীক্ষ্ণক্ষার বলে। মৃদুক্ষারের সঙ্গে চুন মিশিয়ে তীক্ষ্ণ ক্ষার প্রস্তুত করা যায়। যেমন, কস্টিক অ্যালকালি, কস্টিক পটাশ ইত্যাদি। গায়ে মাখা সাবান তৈরিতে এই ক্ষার ব্যবহৃত হয়।

যব ক্ষার: তখনকার দিনে পটাশকে যবক্ষার বলা হতো কারণ যবের শিষ পুড়িয়ে এই ক্ষার প্রস্তুত হতো।


(গ) সাজিমাটি কাকে বলে? ভারতবর্ষে কোথায় কোথায় এই মাটি দেখা যায়? এই মাটির ব্যবহার ক্রমে উঠে যাচ্ছে কেন?

উত্তর: ভারতবর্ষের বিহার, যুক্তপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের কোনো কোনো স্থানে ছাতনা ধরার মতো স্তর ফুটে উঠতে দেখা যেত যাকে সাজিমাটি বলা হতো। বর্তমান বিলিতি সোডার আমদানি হওয়াতে দেশীয় সাজিমাটির ব্যবহার ক্রমে কমে যাচ্ছে।


❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)

(ক) প্রাচীন ভারতে ভারতের বিজ্ঞানচর্চার কয়েকটি নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার স্থান ছিল অত্যন্ত উচ্চ। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারণ অতীতের বিজ্ঞানচর্চার বহু নিদর্শন এখনও বর্তমান।

খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিনশো বছর পূর্বে নাগার্জুন নামে এক বৌদ্ধ শ্রমণ রসায়নচর্চার অশেষ খ্যাতি লাভ করেন। সেই প্রাচীনকালেও তিনি বিবিধ রাসায়নিক প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তাঁর গবেষণাগার নাগপুরের কাছাকাছি পাহাড়ের একটি গুহায় এখনও বর্তমান।

খনিজ ধাতুর ব্যবহারেও সে সময়ে বৈজ্ঞানিকরা প্রভুত উন্নতি লাভ করেন। উদাহরণ হিসাবে দিল্লির কাছে প্রায় ষাট ফুট উঁচু লৌহস্তম্ভটির কথা বলা যায়। এটি নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্ট পরবর্তী চতুর্থ শতকে। জলবায়ুর সংস্পর্শে থাকা সত্ত্বেও এটাতে কোনো রকম মরিচা ধরেনি। তাছাড়া অত বড়ো স্তম্ভটি কীভাবে তখনকার দিনে বানানো সম্ভব হয়েছিল তা ভাবা বিস্মিত হতে হয়। প্রাসঙ্গিকভাগে কোনারক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এরকম মরিচাবিরোধী লোহা কড়ি ও একটি ছাতার কথা জানা যায়।


(খ) রসায়ন বিজ্ঞানের দান সম্পর্কে বিস্তারিত লেখো।

উত্তর: মানবসভ্যতার অগ্রগতির রসায়ন বিজ্ঞানের দান অসীম। রসায়ন বিজ্ঞানের এই উন্নতির আগে মানুষ শারক রোগের আক্রমণে মৃতু এর মুখে পড়ে যেত। রসায়নের সবচেয়ে বড়ো দাম তাই ভেষজ শিল্পে। সে রোগ আগেকার দিনে নিরাময় করা যেত না, নিবিড় চর্চার মধ্যে দিয়ে মানুষ সেই রোগকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। একথা অবশ্য স্বীকার্য যে রসায়নবিদগণ নিরন্তর গবেষণার মধ্যে দিয়ে মানুষের প্রভূত উপকার সাধন করেছেন এবং করে চলেছেন।

এছাড়া জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রসায়নের অবদান আছে, তা মনে রাখা উচিত। আমরা যে আহার্য গ্রহণ করি তার মধ্যেও রসায়ন বিজ্ঞানের একটি গার্হস্থ্য সংস্করণ লুকিয়ে আছে সে কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। এছাড়া মরিচাবিরোধী উপাদানসমূহ এবং নানাপ্রকারের মশলা ইত্যাদি রসায়ন শিল্পের অবদান।


(গ) রসায়ন বিজ্ঞানচর্চার প্রাচীন ভারত উন্নত ছিল না অনুন্নত ছিল?-তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: রসায়ন বিজ্ঞানচর্চার প্রাচীন ভারতে যে উচ্চস্থান অধিকার করত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং সেই প্রাচীন যুগের বিজ্ঞানচর্চার বহু নিদর্শন এখনও বর্তমান।

চরক ও সুশ্রুত দুখানি প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থে যে সমস্ত রাসায়নিক বস্তু প্রস্তুত করার প্রণালী ও তার বর্ণনা রয়েছে সেইসব বর্ণনা সতেরোশো খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে রচিত বিজ্ঞানবিষয়ক রচনায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ ইউরোপে এইসব তথ্য বা প্রণালী আবিষ্কৃত হবার বহু পূর্বেই ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এগুলি আবিষ্কার ও সুনিপুণভাবে লিপিবদ্ধ করেন।

খনিজ ধাতুর ব্যবহারেও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। দিল্লির কাছে লৌহস্তম্ভটি রয়েছে তা প্রায় ঘাট ফুট উঁচু এবং মরিচাশূন্য। এত দীর্ঘ লৌহস্তম্ভ তৈরি করা আজকালকার দিনেও সহজ নয়। তাছাড়া স্তম্ভটি মরিচাশূন্য হওয়ায় একথা সহজেই অনুমান করা যায় যে সে সময়ে বিজ্ঞানীরা ধাতু রসায়নে পারদর্শী ছিলেন। কোন্ ধাতুর সঙ্গে কোন্ ধাতু কী পরিমাণে মেশালে কী জাতীয় ধাতু উৎপন্ন হয় এসব তত্ত্ব তাদের অজানা ছিল না। কোনারকের সুর্যমন্দিরের কাছে যেসব লোহার কড়ি ও লোহার ছাতাটি দেখতে পাওয়া যায় তাও এই অনুমানের পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়।

কাজেই প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানবিন্দ্রা যে রসায়নবিজ্ঞানের চর্চার অত্যন্ত সম্মানজনক স্থান অধিকার করতেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।


(ঘ) ভারতের উন্নতির জন্য আচার্যদেব কী পরামর্শ দিয়েছেন?

উত্তর: যেসব পদার্থ আমরা ব্যবহার করি তার উপাদান কী, সে বিষয়ে সাম্যক জ্ঞানলাভ করা এবং কোন উপাদানের সঙ্গে কোন্ উপাদান কী পরিমাণে মেশালে নানা জিনিস উৎপন্ন হয় তার প্রণালী উদ্ভাবন করাই রসায়ন বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। বর্তমানকালে বিজ্ঞানজগতে ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপান বিশেয়ভাবে অগ্রণী হলেও অতীতে কৃষি, পশুপালন ও বিজ্ঞানচর্চার ভারত শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার - করেছিল। আচার্যদেবের মতে, বর্তমান ভারতবর্ষ সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানচর্চার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এবং অনেকে বিশেষ সম্মানজনক স্থানও লাভ করেছে। কিন্তু তাঁর মতে এটুকুই যথেষ্ট নয়। যতদিন না সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রচার ও প্রসার হচ্ছে ততদিন আমাদের দুঃখ দারিদ্র পরাধীনতা ঘুচবে না। তাই তিনি দেশের ভবিষ্যতস্বরূপ যে ছাত্র যুবসমাজ, তাদের আহ্বান জানিয়েছেন মহৎ কার্যে ব্রতী হতে। তাদের আশীর্বাদ জানিয়েছে তাদের শিক্ষা, সাধনা ও প্রচেষ্টা সার্থক হবার।


(ঙ) ক্ষার প্রস্তুতের বিবরণ দাও।

উত্তর: সাধারণত ময়লা কাপড় কাচার জন্য ক্ষারের ব্যবহার হয়। গায়ে মাখার জন্য যে সাবান ব্যবহৃত হয় তার উপাদানও ক্ষার। ক্ষার সাধারণত দু'রকম। মৃদু ক্ষার বা Mild Alkali এবং তীক্ষ্ণক্ষার বা Caustic Alkali

লেখকের বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি, কলার বাসনা অর্থাৎ শুকনো পাতা পুড়িয়ে ছাই করা হত, সেই ছাই এর সঙ্গে চুন মিশিয়ে ফোটালে তার ক্ষার তৈরি হত। স্থলজ উদ্ভিদ পোড়ালে যে মৃদু ক্ষার প্রস্তুত হয় তাঁকে বলে পটাশ বা পটাশিয়াম কার্বনেট এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ পোড়ালে যে ক্ষার উৎপন্ন হয় তাকে বলে সোডা বা সোডিয়াম কার্বনেট। আবার এদের সঙ্গে চুন মিশিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণক্ষার তৈরি হতো তাকে বলা হতো কস্টিক অ্যালকালি বা কস্টিক পটাশ বা কস্টিক সোডা। পটাশকে আগেকার দিনে যবক্ষার বলা হত কারণ যবের শিষ পুড়িয়ে এই ক্ষার তৈরি হত। বাংলায় যাকে সাজিমাটি বলা হয়। তখনকার দিনে সোডাকে বলা হত সার্জিকা ক্ষার। বিহার, যুক্তপ্রদেশ বা পাঞ্জাবের কিছু কিছু স্থানে জমির ওপর এই সাজিমাটি ছাতনা ধরার মতো ফুটে ওঠে।

ইউরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীর রসায়নবিদদের লেখায় এইসব বিবরণ পাওয়া গেলেও খ্রিস্টজন্মের বহু পূর্বে ভারতীয় ঋষিদের গ্রন্থে এইসব বিষয়ের সুন্দর বর্ণনা আছে। সুশ্রুতের ক্ষার প্রস্তুতকরণ অধ্যায়টি তা প্রমাণ করে।


❐ ব্যাকরণ:


(ক) 'সন্দেশ', 'মন্দির', 'বাসনা', 'উত্তর' শব্দগুলি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করো।

উত্তর: 

সন্দেশ-  (সংবাদ)-কী সন্দেশ এনেছ দূত?

সন্দেশ-  (মিষ্টান্ন বিশেষ)- কড়াপাকের সন্দেশ তাঁর প্রিয় ছিল।


মন্দির-  (বাসগৃহ)-মন্দির বাহিরে কঠিন কপাট।

মন্দির-  (দেবালয়)-মন্দিরে মন্দিরে বাজছিল শখ।


বাসনা-  (ইচ্ছা, আশা)-বড়োলোক হবার বাসনা তার।

বাসনা-  (কলাগাছের শুকনো পাতা)-বাসনায় আগুন দাও।


উত্তর-  (দিকবিশেষ)-উত্তরদিক তার কাছে খুব পয়া।

উত্তর- (জবাব)-সে কোনো কথার উত্তর দিল না।


(খ) সমাস নির্ণয় করো: প্রসিদ্ধ, চিনেমাটি, শিক্ষার্থী, রসায়নগার, স্থলজ, উদ্ভিদ, লৌহস্তম্ভ, পাঁচতলা।

উত্তর:

প্রসিদ্ধ = প্রকৃষ্ঠ রূপে সিদ্ধ-রূপক কর্মধারয় সমাস।

চিনেমাটি = চিন দেশের মাটি-মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।

শিক্ষার্থী = শিক্ষায় ব্রতী যে-উপপদ তৎপুরুষ সমাস।

রসায়ানাগার = রসায়নের নিমিত্ত গৃহ-নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস। স্থলজ = স্থলে জন্মে যাহা-উপপদ তৎপুরুষ সমাস।

উদ্ভিদ = উদ্‌ (মাটি) ভেদ করে যে-উপপদ তৎপুরুষ সমাস।

লৌহস্তম্ভ = লৌহ নির্মিত স্তম্ভ-মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।

পাঁচতলা = পাঁচতলা বিশিষ্ট বাড়ি-বহুব্রীহি সমাস।


(গ) সন্ধি বিচ্ছেদ করো: উদ্ভাবন, রসায়ন, শিক্ষার্থী, অতীত, আবিষ্কার, পাঞ্জাব।

উত্তর:

উদ্ভাবন = উৎ + ভাবন।

অতীত = অতি + ইত।

রসায়ন = রস + আয়ন।

আবিষ্কার আবিঃ + কার।

শিক্ষার্থী = শিক্ষা + অর্থী।

পাঞ্জাব = পান্ + জাব।


(ঘ) পদান্তর করো: রসায়ন, পশু, ঋষি, সুন্দর, উজ্জ্বল, অত্যন্দ, সন্দেহ, দারিদ্র।

উত্তর:

রসায়ন-রাসায়নিক।

সুন্দর-সৌন্দর্য।

সন্দেহ-স্নিগ্ধ।

পশু-পাশবিক।

উজ্জ্বল-ঔজ্জ্বল্য।

দারিদ্র-দরিদ্র।

ঋষি-আর্য।

অত্যন্ত-আত্যন্তিকতা।


(ঙ) বাক্যে ব্যবহার করে অর্থের পার্থক্য দেখাও উপাদান/উপাধান, কালি/কালী, ধনী/ধ্বনি/ধনি।

উত্তর:

উপাদান- (উপকরণ)-পরীক্ষাগারে উপাদানই প্রস্তুত আছে।

 উপাধান- (বালিশ)-উপাধান তুলো দিয়ে তৈরি হয়।


কালি- (লেখার কালি)-উত্তর কালি দিয়ে লিখতে হবে।

কালী- (হিন্দু দেবী)-কালীপুজো রাতে হয়।


ধ্বনি-  (শব্দ)-চরণধ্বনি শুনতে না পাই।

ধনী-  (বড়োলোক)-তিনি ধনী ব্যক্তি ছিলেন।

ধনি-  (সুন্দরী যুবতী)-ধনিটি কে বটে।

No comments:

Post a Comment