সাজাহান প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা সাজাহান প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Sahajan Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Friday, 27 June 2025

সাজাহান প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা সাজাহান প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Sahajan Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

সাজাহান 
প্রশ উত্তর 




👉(এলিশাবা কুই প্রশ উত্তর)


❒ লেখক পরিচিতি: জন্ম ১৮৬৩ খ্রিঃ ১৯ জুলাই নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। পিতা শ্রী কার্তিক চন্দ্র রায় রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন। তিনি স্থানীয় লেখাপড়া শেষ করে বিলাতে যান কৃষি বিজ্ঞান পড়ার জন্য। দেশে ফিরে এসে নানারকম কাজ করতে হয়েছিল তাঁকে। সেটেলমেন্ট অফিসার, ল্যান্ড রেকর্ড ও এগ্রিকালচার বিভাগের সহকারী ডাইরেক্টর, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও আবগারি বিভাগের পরিদর্শক ছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন নাট্যকার ও কবি। সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, মেবার পতন, প্রতাপ সিংহ, দুর্গাদাস ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত নাটক।


❒ বিষয় পরিচিতি: আলোচ্য নাটকটি লেখকের সাজাহান নাটক থেকে গৃহীত হয়েছে। এখানে সাজাহানের বার্ধক্য এসে শুরু হয় তার ছেলেদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি লড়াই। কূট কৌশলী ঔরঙ্গজেব সাজাহানের বন্দি করে পিতৃসত্ত্ব ও সম্রাট সত্ত্বার দ্বন্দুকে তুলে ধরাই বর্তমান নাটকটির বিষয়বস্তু।


❐ সারাংশ: সাজাহান ও জাহানারা ঔরঙ্গজীবকে মিথ্যাবাদী শঠ বলে উল্লেখ করেছেন। জাহানারা তাকে বন্দি করতে চাইলে সাজাহান বাধা দিলেন। সাজাহান পুত্রের কাছে ভিক্ষা করে লজ্জিত নন। এর মধ্যে ঔরঙ্গজীবের পুত্র মহম্মদের আগমন ঘটল। সে জানাল প্রাসাদ দুর্গ দখল করবে। এতে জাহানারা রেগে তাকেই বন্দি করতে চাইল। মহম্মদ আরও বেশি প্রহরী নিয়ে এল। পক্ষান্তরে সে দাদু সাজাহানকে বন্দিই করে ফেলল। এতে সাজাহান প্রতিজ্ঞা করে বললেন তিনি মহম্মদের শিরেই মুকুট পরাবেন। কিন্তু মহম্মদ একথা শুনল না। জাহানারা সাজাহানকে বললেন মহম্মদ বড়ই পিতৃভক্ত আর আপনার পুত্র অকৃতজ্ঞ। সাজহান বললেন, পুত্রদের কষ্ট করে আদর দিয়ে মানুষ করতে নেই, সে অকৃতজ্ঞ ও অবাধ্য হবে। তাদের আধপেটা খাইয়ে শাসনে রেখে মানুষ করলে মহম্মদের মতো বাধ্য পুত্র হবে। জাহানারা সম্রাট সাজাহানকে জেগে উঠে ক্রুর নিষ্ঠুর হতে বললেন। সাজহানও মেয়ের কথায় উত্তেজিত হয়ে যুদ্ধ ও ভয়ঙ্করতাকে ডেকে আনতে চাইলেন।


❐ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: 


❐ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) 'সাজাহান নাট্যাংশটির নাট্যকার হলেন- (সৈয়দ মুজতবা আলী/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/দ্বিজেন্দ্রলাল রায়)।

উত্তর: 'সাজাহান' নাট্যাংশটির নাট্যকার হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।


(খ) 'সাজাহান' নাট্যাংশটি যে নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে তার নাম- (মেবার পতন/সাজাহান/জাহানারা)।

উত্তর: 'সাজাহান' নাট্যাংশটি যে নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে তার নাম সাজাহান।


(গ) সাজাহানের চরিত্রে যে প্রধান গুণটি প্রকাশ পেয়েছে তা হল- (সন্তানস্নেহ/তেজস্বিতা/আত্মবিশ্বাস)।

উত্তর: সাজাহানের চরিত্রে যে প্রধান গুণটি প্রকাশ পেয়েছে তা হল সন্তানস্নেহ।


(ঘ) “পুত্রের কাছে ভিক্ষার অপমান নাই।"-এখানে 'পুত্রের' পিতা হলেন (সাজাহান/ঔরঙ্গজীব/দারা)।

উত্তর: "পুত্রের কাছে ভিক্ষার অপমান নাই।"-এখানে 'পুত্রের' পিতা হলেন সাজাহান।



❐ শূন্যস্থান পূরণ করো:  (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)


(ক) আমার উদ্ধত পুত্র; আমার ----- আমার গৌরব।

উত্তর: আমার উদ্ধত পুত্র; আমার লজ্জা আমার গৌরব।


(খ) পুত্রের কাছে ভিক্ষার  ------- নাই।

উত্তর: পুত্রের কাছে ভিক্ষার অপমান নাই।


(গ) ভেবেছ এই কেশরী ------- বলে তোমরা তাকে পদাঘাত করে যাবে।

উত্তর: ভেবেছ এই কেশরী স্থবির বলে তোমরা তাকে পদাঘাত করে যাবে।


(ঘ) আমি আমার পিতার ------- মাত্র।

উত্তর: আমি আমার পিতার আজ্ঞাবহ মাত্র।


❐ বাক্যটির ভুল অংশটি সংশোধন করে লেখো:


(ক) সে আমার পুত্র, আমার অনুগত পুত্র।

উত্তর: সে আমার পুত্র সে আমার উদ্ধত পুত্র।


(খ) আমি কৌশলে তাকে মুক্ত করব।

উত্তর: আমি কৌশলে তাকে বন্দি করব।


(গ) আমি আমার পিতার পত্রবহ মাত্র।

উত্তর: আমি আমার পিতার আজ্ঞাবহ মাত্র।


(ঘ) আমি স্বয়ং সম্রাট সাজাহান-কোরান বুকে শপথ করছি।

উত্তর: আমি স্বয়ং সম্রাট সাজাহান-কোরান স্পর্শ করে আমি শপথ করছি।


(ঙ) তাদের সারা জীবনটা চোখ দেখিয়ে শাসিয়ে রেখো।

উত্তর: তাদের সারা জীবনটা চোখ রাঙিয়ে শাসিয়ে রেখো।


❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:  (প্রতিটি প্রশ্নের মান-২/৩) (দু একটি কথায় উত্তর দাও)


(ক) তোমার পাঠ্যাংশের 'সাজাহান' নাটকটির ঘটনাস্থল কোথায়?

উত্তর : আমার পাঠ্যাংশের 'সাজাহান' নাটকটির ঘটনাস্থল আগ্রা দুর্গে সাজাহানের কক্ষে।


(খ) "আমি আমার পিতার আজ্ঞাবহ মাত্র"-উক্তিটি কে, কাকে করেছিলেন? বক্তার পিতার নাম কী?

উত্তর: উক্তিটি সাজাহানের পৌত্র মহম্মদ সাজাহানকে করেছেন। বক্তার পিতার নাম ঔরঙ্গজীব।


(গ) সাজাহান যে বইটি স্পর্শ করে শপথ করেছিলেন, তার নাম কী?

উত্তর: সাজাহান যে বইটি স্পর্শ করে শপথ করেছিলেন, তার নাম কোরান (মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ)।


(ঘ) না ঠাকুরদা, এ সত্য কথা।"-উক্তিটি কার? ঠাকুরদা কে? কোন্ কথাটি সত্যি?

উত্তর: উক্তিটি মহম্মদের। মহম্মদের ঠাকুরদা হলেন সাজাহান।

একথা সত্য যে মহম্মদ আগ্রা দুর্গ অধিকার করতে এসেছে।


(ঙ) “সে অপমান থেকে আমি আপনাকে রক্ষা করব বাবা"-কে, কাকে কোন্ অপমান থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন?

উত্তর: সাজাহানের কন্যা জাহানারা সাজাহানকে পুত্র ঔরঙ্গজীবের কাছে প্রাণভিক্ষা করার অপমান থেকে রক্ষা করতে চেয়েছেন।


(চ) সাজাহান কার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছেন?

উত্তর : সাজাহান সাগ্রহে তার পুত্র ঔরঙ্গজীবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।


(ছ) জাহানারা কে?

উত্তর: জাহানারা সাজাহানের কন্যা, ঔরঙ্গজীবের ভগ্নী।


(জ) মহম্মদ কার পুত্র?

উত্তর: মহম্মদ ঔরঙ্গজেবের পুত্র, সাজাহানের পৌত্র।


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩)


(ক) "আমি তোমাকেই বন্দী করব।"-এখানে আমি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তিনি কাকে, কেন বন্দী করতে চেয়েছিলেন?

উত্তর: এখানে আমি বলতে জাহানারাকে বোঝানো হয়েছে।

ঔরঙ্গজীবকে বন্দি করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই সময়ে ঔরঙ্গজীবের পুত্র মহম্মদ সেখানে এলে জাহানারা মহম্মদকে এই কথা বলেন।


(খ) “সব দোষ আমার"-কে, কী করেছিলেন? এর পরিণতি কী হয়েছিল?

উত্তর: সাজাহান অন্ধ পুত্রস্নেহের বশবর্তী হয়ে ঔরঙ্গজীব পত্রে যা চেয়েছিলেন সবই দিতে রাজি হয়েছিলেন।

এক পরিণতিস্বরূপ ঔরঙ্গজেব পুত্র মহম্মদকে প্রেরণ করে সাজাহানের দেহরক্ষীর সৈন্যদের দুর্গ থেকে বিতাড়িত করে দুর্গ দখল করেন এবং সাজাহানকে গৃহবন্দি করেন।


(গ) “এই কোরান স্পর্শ করে আমি শপথ করছি যে"-' কোরান' কী? কে 'কোরান' স্পর্শ করে শপথ করেছিলেন? তিনি কী শপথ করেছিলেন?

উত্তর: কোরান মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। সাজাহান কোরান স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।

সাজাহান কোরান স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে মহম্মদ যদি তাকে মুক্ত করে দেন তাহলে তিনি দুর্গের বাইরে গিয়ে সমবেত প্রজাদের সামনে রাজমুকুট মহম্মদের মাথায় পরিয়ে দেবেন এবং এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।


(ঘ) সাজাহান অগ্নির মতো জ্বলে উঠতে চেয়েছেন কেন?

উত্তর: পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে সাজাহান ঔরঙ্গজীবের সব শর্তে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তার বিনিময়ে। তিনি আগ্রা দুর্গে বন্দি হন। পৌত্র মহম্মদ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি মুক্তির জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করেন তা সত্ত্বেও কোনো ফল না হওয়ায় কোরান স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেন যে মহম্মদ যদি তাঁকে মুক্তি দেন তাঁর পরিবর্তে ভারতের রাজমুকুট তিনি মহম্মদের মাথায় পরিয়ে দেবেন। কিন্তু তার এই আবেদনও ব্যর্থ হয়। মহম্মদ তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দুর্গ ত্যাগ করে। তখন ক্ষুব্ধ সাজাহান এই উক্তি করেন।


(ঙ) "আমি কৌশলে তাকে বন্দি করব"-কে, কাকে বন্দি করবেন? যাকে বন্দি করবেন তার জন্য কী ব্যবস্থা করেছিলেন?

উত্তর: জাহানারা তার ভ্রাতা ঔরঙ্গজেবকে বন্দি করার জন্য এক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। দুর্গের এক সুদৃঢ় কক্ষে তিনি একশত সশস্ত্র সৈন্য গুপ্তভাবে রেখেছিলেন, যাতে ঔরঙ্গজীব সাজাহানের সঙ্গে দেখা করতে আসামাত্র তিনি সৈন্যদের হাতে বন্দি হন।


❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)


(ক) "তারা সব কৃতঘ্নতার অঙ্কুর-তারা সব শিশু শয়তান"-বক্তা কে, তারা বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের সম্পর্কে বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী? 'কৃতঘ্নতার অঙ্কুর' কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বৃদ্ধ সম্রাট সাজাহান একথা বলেছিলেন। সম্রাট সাজাহান পুত্রস্নেহে অন্ধ। তিনি পুত্র ঔরঙ্গজীবের শঠতা কপটতা জানা সত্ত্বেও তার প্রেরিত পত্রের সমস্ত শর্ত মেনে নিয়েছিলেন। ফলত তিনি পুত্রের হাতে আগ্রা দুর্গে বন্দি। প্রচুর স্নেহমমতা ভালবাসা দিয়ে পালন করা সন্তানের এহেন ব্যবহার তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না, অথচ প্রতিপদে এ সত্য প্রমাণিত হচ্ছে যে ক্রুদ্ধ সাজাহানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঔরঙ্গজীব ক্রমশ রাজসিংহাসন দখল করে নিচ্ছে।


(খ) "আর আমি এখানে দাঁড়িয়ে একথা শুনব না।"-কে, কার কোন্ কথা শুনতে চাননি? উক্তিটি আলোকে বক্তার চরিত্রের কোন্ পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখো।

উত্তর: পৌত্র মহম্মদ সাজাহানের কথা শুনতে চায়নি। পুত্র ঔরঙ্গজেবের হাতে সাজাহান আগ্রা দুর্গে বন্দি। তিনি বৃদ্ধ, স্থবির এবং পুত্রের শঠতার শিকার। অন্তরের সমস্ত স্নেহ দিয়ে লালনপালন করা সত্ত্বেও ঔরঙ্গজীব বিশ্বাসঘাতক। পিতার অন্ধ স্নেহের সুযোগ নিয়ে সম্রাটের সমস্ত ক্ষমতা হস্তগত করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে পুত্রের কাছ থেকে এই শঠতা সাজাহানের কল্পনাতীত ছিল। তাই তিনি নির্ধিদায় ঔরঙ্গজীবের সমস্ত শর্তে রাজি হয়েছিলেন।

বিপরীতপক্ষে আমরা দেখি মহম্মদকে। সে ঔরঙ্গজীবের পুত্র, সাজাহানের পৌত্র। কিন্তু সে পিতার আজ্ঞাবহমাত্র। পিতার আদেশই তার কাছে একমাত্র পালনীয় কাজ। এমনকি সাজাহান যখন কোরান স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেন যে তাদের বন্দি থেকে মুক্তি দিলে তার পরিবর্তে তিনি পৌত্র মহম্মদের হাতে সমগ্র মোগল সাম্রাজ্যের শাসনভার তুলে দেবেন, তখনও মহম্মদ পিতার আদেশ মনে করে নিজের কর্তব্যে অচল থাকেন। যদি আমরা আলোচ্য উক্তিটির আলোকে মহম্মদের চরিত্র বিচার করি তাহলে দেখব যে সাজাহানকে কোরান স্পর্শ করে তাকে সাম্রাজ্য দিয়ে দেবার প্রতিজ্ঞা করতে দেখে সে কিছুটা দোলাচলচিত্রতার শিকার হয়েছে। কারণ তার চোখের সামনে পিতার শঠতা পিতার কপটতার দৃষ্টান্ত তো রয়েইছে উপরন্তু সমগ্র ভারতের অধীশ্বর হবার লোভের হাতছানি তো এক বিশাল আকর্ষণ। সেই আকর্ষণ উপেক্ষা করা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু আমরা দেখি যে বিশাল লোভের হাতছানি উপেক্ষা করে সে নিজের কর্তব্য অচল থেকেছে তার চরিত্রের দৃঢ়তা অতুলনীয়। বিশেষত ঔরঙ্গজীবের মতো লোভী, শঠ, কপট চরিত্রের বিপরীতে মহম্মদের নির্লোভ তাই তার চরিত্রকে এক উজ্জ্বল মহিমায় প্রতিষ্ঠা করেছে।


(গ) "আয় তো; একবার সাম্রাজ্য তোলপাড় করে দিয়ে চলে যাই।"-কে কাকে ডাকছেন? কীভাবে তিনি ওই কাজ করবেন বলে মনে করেন? তিনি কেন ওই কাজ করতে চান?

উত্তর: বৃদ্ধ অশক্ত সাজাহান কন্যা জাহানারাকে এই কথা বলেছেন।

তিনি জাহানারার সাহায্যে সমগ্র সাম্রাজ্য ছারখার করে দিতে চান। কারণ তাঁর এই প্রচেষ্টায় কন্যা জাহানারাই তাঁর একমাত্র সঙ্গী। প্রজ্জ্বল অগ্নিশিখা যেমন বায়ুতাড়িত হয়ে সমস্ত কিছুকে ভষ্ম করে দেয়; কম্পজল বা বাণ যেমন প্রবলবেগে ধেয়ে এসে সমস্ত কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় বৃদ্ধকেশরী সাজাহান তেমনি করে সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিতে চান। যুদ্ধের কন্যাস্বরূপ মড়ক মহামারি আর লোকক্ষয়ে সবকিছু শেষ করে দিয়ে যাবেন।

সারাজীবন দোদণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করে সাজাহান অন্ধ পুত্রস্নেহের বশে আগ্রা দুর্গে বন্দি। তিনি বৃদ্ধ, অশক্ত ও অথর্ব। সাম্রাজ্য চালনায় হয়তো অক্ষমও কিন্তু পুত্রের এই শঠতা, এই প্রবঞ্চনা তিনি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তিনি কেবল বন্দিই নন। তার দেহরক্ষী সৈন্যরাও ঔরঙ্গজীবের আদেশে দুর্গ থেকে বহিষ্কৃত। কোনোভাবেই যুদ্ধ করার সুযোগ তার নেই। তার সেই ব্যর্থ, মনের হাহাকার প্রকাশ পেয়েছে এইভাবে।


(ঘ) 'সাজাহান' নাট্যাংশ অবলম্বনে সাজাহান চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: আলোচ্য অংশের শুরুতে আমরা দেখি, আগ্রা দুর্গে সাজাহানের শয়নকক্ষে সাজাহান ও জাহানারা আলোচনারত। সাজাহান ঔরঙ্গজেবের আগমনের প্রতিক্ষা করছেন। ঔরঙ্গজীবের ঔদ্ধত্য বা নির্লজ্জতা সম্পর্কে তিনি সচেতন তবু কন্যা জাহানারা যখন বলেন যে, শঠতা করে মিথ্যা কথা বলে, পিতার প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি দেখিয়ে ছলনা করে দারার পক্ষের সমস্ত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নাম জেনে নিয়ে তাদের বন্দি না করে আর একবার নতুন করে সৌহার্দ্য স্থাপনের চেষ্টা করতে।

অর্থাৎ সবকিছু জানার পরেও চিরন্তন স্নেহাল্ব পিতৃসত্তা প্রকট হয়ে উঠেছে। তিনি সবকিছু জানার পরেও নতুন করে ভালোবাসার অবকাশ চান জাহানারার কাছে। এমনকি তার জন্য তিনি নতজানু হয়ে প্রাণভিক্ষা করতেও রাজি। কারণ তার মতে পুত্রের কাছে ভিক্ষার অপমান নেই। অর্থাৎ তাঁর প্রত্যেক কথায় আমরা অন্ধ অবুঝ এক পিতাকেই খুঁজে পাই, যাকে সমগ্র ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি প্রবল পরাক্রান্ত সম্রাট সাজাহান বলে মনে করা যায় না। কিন্তু চিত্রটি দ্রুত বদলে যায়। প্রতীক্ষার শেষে ঔরঙ্গজীবের পরিবর্তে মহম্মদ আসে পিতার আজ্ঞাবহ হয়ে। সাজাহান জানতে পারেন তিনি বন্দি; এমনকি ঔরঙ্গজীবের আদেশে তার দেহরক্ষীরাও দুর্গ থেকে বহিষ্কৃত। মহম্মদ সেখানে এসেছেন দুর্গ দখলের জন্য, পিতামহের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নয়। এমনকি সে পিতার এতই অনুগত যে ভারত সম্রাটের রাজমুকুটের পরিবর্তেও সে সাজাহানকে মুক্তি দিতে রাজি নয়।

আমরা দেখি এই ঘটনার অভিঘাতে খুলে যায় সাজাহান চরিত্রের অপর একটি দিক। সম্রাট সাজাহান তখন প্রবল হয়ে ওঠেন। কন্যা জাহানারার সাহায্য নিয়ে তিনি সমগ্র সাম্রাজ্যের ছারখার করে দিতে চান। অনুভব করেন গভীর স্নেহ দিয়ে, অজস্র মমতার আড়ালে সন্তানকে পালন করা নিতান্তই নিরর্থক। কঠিন শাসনের মধ্যে প্রতিপালিত সন্তানরাই মহম্মদের মতো পিতৃভক্ত। পিতার আজ্ঞার বশবর্তী হয়।

এই নিষ্ঠুর সত্য অনুধাবন করে জেগে ওঠে তার সম্রাটসত্তা, তিনি সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিতে চান। কিন্তু জীবনের পরিহাসে তিনি বয়সের ভারে আক্রান্ত হয়ে যুদ্ধে অক্ষম হয়ে পড়েন।


❐ ব্যাকরণ:


(ক) সন্ধি বিচ্ছেদ করো: জলোচ্ছ্বাস, অত্যাচার, পদাঘাত, অধীশ্বর, অশ্বরূঢ়, উদ্ধত, হিতৈষী।

উত্তর: 

জলোচ্ছ্বাস = জল উৎ শ্বাস (জল উচ্ছ্বাস)।

অশ্বরূঢ় = অশ্ব + রুঢ়।

অত্যাচার = অতি + আচার।

উদ্ধত = উৎ(উদ্‌) + হত।

পদাঘাত = পদ + আঘাত।

হিতৈষী = হিত + এষী।

অধীশ্বর = অধি+ ঈশ্বর।


(খ) ব্যাসবাক্য সহ সমাস নির্ণয় করো: কেশরী, প্রাণভিক্ষা, নিঃশঙ্কচিত্ত, দুর্বল।

উত্তর: 

কেশরী = কেশর আছে যার (বহুব্রীহি সমাস)।

প্রাণভিক্ষা = প্রাণের নিমিত্ত ভিক্ষা (নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস)।

নিঃশঙ্কচিত্ত = নাই শঙ্কা যাহার (নঞ তৎপুরুষ সমাস)।

নিঃশঙ্ক যে চিত্ত (কর্মধারয় সমাস)।

দুর্বল = দুঃ বল যাহার (বহুব্রীহি সমাস)।


(গ) বাক্যে ব্যবহার করে অর্থের পার্থক্য দেখাও প্রাসাদ/প্রসাদ; কৃতজ্ঞ/কৃতঘ্ন; সব/শব।

উত্তর: 

(প্রাসাদ-অট্টালিকা-বিশাল রাজপ্রাসাদে তিনি বাস করতেন।

(প্রসাদ-অনুগ্রহ-তার প্রসাদে বেঁচেবর্তে আছি।


(কৃতজ্ঞ-ঋণী-আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।

কৃতঘ্ন-অকৃতজ্ঞ-যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না।


(সব-সমস্ত-আমার সব দেনা শোধ হয়েছে।

শব-মৃতদেহ-তারা শব বহন করে নিয়ে গেল।


(ঘ) পদান্তর করো: বৃদ্ধ, স্নেহ, গৌরব, অগ্নি, গ্রাস।

উত্তর: 

বৃদ্ধ-বার্ধক্য।

গৌরব-গৌরবান্বিত।

গ্রাস-গ্রস্ত।

স্নেহ-স্নিগ্ধ।

অগ্নি-আগ্নেয়।


(ঙ) কারক বিভক্তি নির্ণয় করো: যে পত্র হস্তগত করেছে। আমি কৌশলে তাকে বন্দি করব। তাদের সারাজীবনটা চোখ রাঙিয়ে শাসিয়ে রেখো।

উত্তর:

পত্র-কর্মকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।

কৌশলে-করণকারকে 'এ' বিভক্তি।

তাকে-কর্মকারকে 'এ' বিভক্তি।

সারাজীবনটা-অধিকরণ কারকে 'শূন্য' বিভক্তি।

No comments:

Post a Comment