শেয়খুল হিন্দ মৌলনা মাহমুদুল হাসান প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা শেয়খুল হিন্দ মৌলনা মাহমুদুল হাসান প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 30 June 2025

শেয়খুল হিন্দ মৌলনা মাহমুদুল হাসান প্রশ উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা | মাদ্রাসা বোর্ড অষ্টম শ্রেণীর বাংলা সহায়িকা শেয়খুল হিন্দ মৌলনা মাহমুদুল হাসান প্রশ্ন উত্তর | Class 8th Bengoli Questions and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

শেয়খুল হিন্দ মৌলনা মাহমুদুল হাসান
মুহাম্মদ তাহির




👉(শিল্প-ভাবনা প্রশ উত্তর )


❒ লেখক পরিচিতি:  জন্ম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে অসমের করিমগঞ্জ জেলার সিঙ্গারিয়া গ্রামে।

পিতার নাম মৌলনা মোঃ হাজিম এবং মাতার নাম নাসিমা খাতুন। ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন। সব পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান করেন। তারপর দেশ স্বাধীন হলে ১৯৪৯ খ্রিঃ থেকে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি দমদম বিমান বন্দরের কাছে জামিয়া ইসলামিয়া মদীনা প্রতিষ্ঠা করেন। 'মাল্টার বন্দী', 'প্রেমের পঞ্চ অধ্যায়', 'ইনকেলাব' ইত্যাদি তার রচিত গ্রন্থ। ১৯৯৪ খ্রিঃ ২৬ নভেম্বর তাঁর প্রয়াণ ঘটে।


❒ বিষয় পরিচিতি:  ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে সব মুসলিম নেতা স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে শায়খুল হিন্দ অন্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি কীভাবে ভারতের বাইরে থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন সেই বিষয়েই আলোচ্য প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে।


❐ সারাংশ:   মাওলানা কাসেম ও মাওলানা গাঙ্গুহী (র) ব্রিটিশ বাহিনীর অত্যাচারের সম্মুখীন হন তবুও দমবার পাত্র ছিলেন না তাঁরা।

এঁরই ছাত্র ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুল হাসান শায়খুল হিন্দ। একজন শাস্ত্রীয় পণ্ডিত হলেও স্বাধীনতা ছিল প্রাণের প্রার্থনা। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী সত্তায় মানুষ হন। অধ্যাপনার সূত্রে তার ছাত্ররা ছড়িয়ে ছিল মুসলিম বিশ্বের নানা প্রান্তে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিনি সকলকেই স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে পর্যুদস্ত করাই ছিল তাঁর ধ্যান। তিনি তাঁর আক্রমণের কেন্দ্র গড়েন ভারতের বাইরে। সেখানে তিনি পেয়েছিলেন তাঁর কয়েকজন ছাত্রকে। আফগানিস্থানে অস্ত্র থাকলেও রসদ নিয়ে যেতে হত ভারতবর্ষ থেকে। এতে ছিল নানা সমস্যা। তবুও কয়েকজন নেতার সক্রিয় সাহায্যে তিনি সফল হয়েছিলেন। ব্রিটিশরাও তাদের উপর তীব্র আক্রমণ চালাতে থাকে। তবু বিপ্লবীদের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে যায়।

প্রথম মহাযুদ্ধে ইনি সুযোগ পেলেন ব্রিটিশকে শেষ কামড় কামড়াতে শায়খুলের নেতৃত্বে পির হাজি তুরংজয় সংগ্রামে যোগ দেন। ব্যর্থ করে দেন ইংরেজদের আক্রমণকে। বেলুচিস্তানের বাসভিলা অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিলে ইংরেজরা তা দমন করে থাকে। মি. টমসন কয়েক সপ্তাহ পরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে বাধ্য হন। এতে টমসনের ১৭ হাজার সৈন্য নিহত হয়।


❐ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন: 


❐ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) আচার্য কৃপালিনীর অগ্রজের নাম- (শেখ আবদুর রহিম/জে. কৃপালিনী/মৌলানা আবদুর রহিম রায়পুরী)।

উত্তর: শেখ আবদুর রহিম।


(খ) শায়খুল হিন্দের লড়াই-এর কেন্দ্রভূমি ছিল- (দিল্লি/ইয়াগিস্তান/কলকাতা)।

উত্তর : ইয়াগিস্তান।


(গ) ব্রিটিশ সৈন্য অবরুদ্ধ হয়- (বাসভিলা/ইরাক/দিল্লি)-তে।

উত্তর: বাসভিলায়।


❐ শূন্যস্থান পূরণ করো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)


(ক) "শেয়খুল হিন্দ” শব্দের অর্থ ----

উত্তর: ভারতের শিক্ষক।


(খ) শেয়খুল হিন্দের পুরো নাম -----

উত্তর: মৌলানা মাহমুদুল হাসান।


(গ) শেয়খুল হিন্দ ছিলেন -----

উত্তর: দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান অধ্যাপক।


(ঘ) শ্যামলী এলাকায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন ------

উত্তর: মৌলানা কাসেম ও মৌলানা গাঙ্গুহী (রঃ)।



❐ বাক্যটির ভুল অংশটি সংশোধন করে লেখো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)

(ক) দেওবন্দ একটি মসজিদের নাম।

উত্তর: দেওবন্দ একটি মাদ্রাসার নাম।


(খ) শাহ ওলীউল্লাহর জ্বালানো আগুন নিভিবার নয়।

উত্তর: শাহ ওলীউল্লাহর জ্বালানো আগুন নিভিবার নয়।


(গ) মৌলানা মাহমুদুল হাসান শেয়খুল হিন্দের কবি।

উত্তর: মৌলানা মাহমুদুল হাসান শেয়খুল হিন্দ (রঃ)।


(ঘ) মৌলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি ছিলেন শেয়খুল হিন্দের বন্ধু।

উত্তর: মৌলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি ছিলেন শেয়খুল হিন্দের ছাত্র।


(ঙ) হাজি তুরুংজেয় ছিলেন পেশোয়ারের প্রভাবশালী রাজা।

উত্তর: হাজি তুরুংজেয় ছিলেন পেশোয়ারের প্রভাবশালী পির।


❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ (দু একটি কথায় উত্তর দাও) (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)


(ক) শেয়খুল হিন্দ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য কোন্ পথ অবলম্বন করেন?

উত্তর : শেয়খুল হিন্দ ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বহিরাক্রমণ ও অন্তবিপ্লবের পথ অবলম্বন করেন।


(খ) সুভাষচন্দ্র বসুর আগে কে বিদেশ থেকে ব্রিটিশ রাজত্বের উপর আক্রমণ শুরু করেন?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসুর আগে শেয়খুল হিন্দ প্রথম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাইরে সীমান্তবর্তী স্বাধীন উপজাতীয় রাষ্ট্রে তাঁর বহিরাক্রমণের কেন্দ্র স্থাপন করেন।


(গ) দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কারণ কী?

উত্তর: মৌলানা কাসেম ও মৌলানা গাঙ্গুহী (রঃ) সক্রিয় অংশগ্রহণে যুক্তদেশের শ্যামলী এলাকার স্বাধীনতা পতাকা উত্তেলিত হয়। কিন্তু সংগ্রামে ব্যর্থতার পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদদের কঠোর নির্যাতনের হাত থেকে কেউই রেহাই পান না। যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেও মানুষ ভয় পেত সেই বিভীষিকাময় দিনে অতি সন্তর্পণে, সতর্কভাবে বিপ্লবী বীর মৌলানা মোহাম্মদ কাসেম পুনরায় সংগ্রামের আয়োজন করেন। এর থেকেই সুবিখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসার জন্ম।


(ঘ) মি. টমসন কে?

উত্তর: ইংরেজরা যখন ইরান আক্রমণ করে তখন ব্রিটিশ সেনাপতি ছিলেন মি. টমসন।


(ঙ) শ্যামলী এলাকায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন কারা?

উত্তর: যুক্তপ্রদেশের শ্যামলী এলাকায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মৌলানা কাসেম ও মৌলানা গাঙ্গুহী (রঃ)।


(চ) আচার্য কৃপালনীর অগ্রজের নাম কী?

উত্তর: আচার্য কৃপালনীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার নাম শেখ আব্দুর রহিম।


(ছ) শেয়খুল হিন্দের লড়াই-এর কেন্দ্রভূমি কোথায় ছিল?

উত্তর: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী স্বাধীন উপজাতীয় রাষ্ট্রই হিন্দের লড়াইয়ের কেন্দ্রভূমি।


(জ) কোথাায় ব্রিটিশ সৈন্যরা অবরুদ্ধ হয়েছিল?

উত্তর: 'কুতুল উমরা' নামক স্থানে ইংরেজ সেনাপতি মি. টমসন ত্রিশ হাজার সৈন্যসমেত অবরুদ্ধ হন।


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-২/৩)


(ক) প্রথম মহাযুদ্ধকে শেয়খুল হিন্দ কীভাবে গ্রহণ করেন?

উত্তর: শেয়খুল হিন্দের সীমান্ত আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সীমান্ত এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। কিন্তু পর্বত, গরিব অরণ্যসমন্বিত অঞ্চলে ব্রিটিশ সৈন্য পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে।

এই সময় দেখা দিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ব্রিটিশ সৈন্য বিভিন্ন দিকে প্রেরিত হল। শেয়খুল হিন্দের সামনে দেখা দিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে বিদায় করা ও স্বাধীনতা অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে হাজি তুরুংজেয় সীমান্ত এলাকায় ও ইয়াগিস্থানের এক অদ্বিতীয় প্রভাবসম্পন্ন পির। শেয়খুল হিন্দ তাঁকে ইয়াগিস্তান যাত্রা ও সংগ্রাম পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করেন এবং শেয়খুল হিন্দের নির্দেশে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। ইংরেজের তোপ কামান ব্যর্থ করে হাজার হাজার সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন মুজাহিদিনের অব্যর্থ লক্ষ্যে।


(খ) সশস্ত্র সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: শেয়খুল হিন্দ ছিলেন 'অন্দর-বাহির' সংঘাতে বিশ্বাসী। তিনি ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান অধ্যাপক বীর মুজাহিদ মৌলানা মো কাসেম (রাঃ) এর ছাত্র। বিপ্লবের আগুন তাঁর শিরায়। স্বাধীনতার পবিত্র মন্ত্রে দীক্ষিত করতে থাকেন জাতিধর্ম নির্বিশেষে তবে অতি সংগোপনে। বেছে নেন সীমান্তবর্তী স্বাধীন উপজাতীয় রাষ্ট্রগুলোকে, তাঁর বহিরাক্রমণের কেন্দ্র হিসাবে। একই সঙ্গে অন্তবিপ্লব ও বহিরাক্রমণের দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরাভূত করা এবং স্বাধীনতা অর্জন করার উদ্দেশ্যে, ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের মতে-বহুসংখ্যক ইংরেজ সৈন্য নিহত হয় তাদের হাতে ইয়াগিস্তান সীমান্ত এলাকায় শেয়খুল হিন্দের নির্দেশক্রমে তাঁর শিষ্যরা সশস্ত্র বিপ্লব চালাতে থাকে। গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু শেয়খুল হিন্দের বিচক্ষণতা ছিল অসাধারণ। এই সময় দেখা দিল প্রথম মহাযুদ্ধ। ব্রিটিশ সৈন্যকার বিভিন্ন স্থানে প্রেরিত হতে লাগল। শেয়খুল হিন্দ বুঝলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে পেশোয়ারের অদ্বিতীয় পিয়। তাকে সংগ্রাম পীরচালানায় উদ্বুদ্ধ করে ইয়াগিস্তান গমন করে ব্রিটিশ সরকারের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। এই সময় টমসন ইংরেজ সৈন্যদলের সেনাপতি হয়ে ইরাক আক্রমণ করেন। কিন্তু এই সময়ে বেলুচিস্তান বাসভিলা অঞ্চলের অধিবাসীরা বিদ্রোহ করায় ইংরেজ সৈন্য দল ইরাক যাত্রা মুলতুবি রেখে সিন্ধু এলাকায় বিদ্রোহ করায় ইংরেজ সৈন্যদল ইরামযাত্রা মুলতুবি রেখে সিন্ধু এলাকায় বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই সুযোগে তুর্কিরা ত্রিশ হাজার সৈন্যসমেত মি. টমসনকে অবরুদ্ধ করে, সবরকম সাহায্য থেকে বঞ্চিত মি. টমসনের পরাজয় স্বীকার ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এই দীর্ঘ ও দ্বিমুখী আন্দোলনকে সর্বোতভাবে পরিচালনা করে শেয়খুল হিন্দ।


(গ) শেয়খুল হিন্দের কয়েকজন সহযোদ্ধার নাম লেখো।

উত্তর: শেয়খুল হিন্দের কয়েকজন যোদ্ধার নাম-মৌলানা উবায়দুল্লাহ, মৌলানা উযায়ের গুল, ড. আনসারি, সীমান্ত গান্ধি খান আবদুল গফ্র খান, শেখ আবদুর রহমান, মৌলানা মহম্মদ সাদেক প্রভৃতি।


(ঘ) রাওলাট কমিটির রিপোর্টের সারমর্ম কী?

উত্তর: রাওলাট কমিটির রিপোর্টে প্রকাশিত যে অন্দর বাহিরে সংঘাত এই শেয়খুল হিন্দের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যুগপৎ অন্তবিপ্লব ও বহিরাক্রমণ দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সংহার করা ও স্বাধীনতা অর্জন করাই ছিল শেয়খুল হিন্দের আন্দোলনের উদ্দেশ্য।


(ঙ) 'ব্রিটিশ সৈন্য বিপন্ন সরকার নাজেহাল' হয়েছিল কখন?

উত্তর: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আওতার বাইরে সীমান্তবর্তী স্বাধীন উপজাতীয় রাষ্ট্রগুলিতে কেন্দ্র স্থাপন করে বাইরে থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালানো। ইয়াগিস্তান কেন্দ্র থেকে আক্রমণ চলতে থাকে। গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে এই কাজ চালিয়ে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু শেয়খুল হিন্দ তাঁর সংকল্পে অটল। দেওবন্দে তাঁর সদর দপ্তর। সীমান্তে এই আক্রমণ রুখতে ব্রিটিশ সরকারও পালটা আক্রমণ চালাতে থাকে। কিন্তু গেরিলাযুদ্ধে অত্যন্ত বিদ্রোহীদের সঙ্গে পার্বত্য অরণ্য অঞ্চলে যুদ্ধে পেরে ওঠা কঠিন। এহেন অবস্থায় ব্রিটিশ সৈন্য বিপন্ন, ব্রিটিশ সরকার নাজেহাল হয়ে পড়ে।


❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন:  (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)

(ক) বাসভিলা বিদ্রোহের বিবরণ দাও।

উত্তর: শেয়খুল হিন্দ মৌলানা মাহমুদুল হাসানের পরিকল্পনা ছিল এক দ্বিমুখী আক্রমণের। অর্থাৎ একদিকে অন্তর্বিপ্লব ও অন্যদিকে বহিরাক্রমণ দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাভূত করা। এই বহিরাক্রমণে কেন্দ্র হিসাবে তিনি বেছে নেন সীমান্তবর্তী উপজাতীয় স্বাধীন রাষ্ট্রগুলিকে। ইয়াগিস্তান কেন্দ্র থেকে আক্রমণ চলতে থাকে। আর অসাধারণ বিচক্ষণতার সঙ্গে ভারতবর্ষ থেকে শেয়খুল হিন্দ এই আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকেন। পর্বতের গভীর অরণ্যে যুদ্ধ করতে যখন ব্রিটিশ সেনা বিপন্ন সেই সময় শুরু হয় প্রথম মহাযুদ্ধ। ফলে যে ব্রিটিশ সৈন্য সীমান্তে যুদ্ধরত ছিল তারা বিভিন্ন রণক্ষেত্রে প্রেরিত হয়। শায়খুল হিন্দের দেখা দেয় সুবর্ণ ইংরেজদের সমস্ত প্রতিরোধ ব্যর্থ হতে থাকে বিদ্রোহীদের সামনে। এই সময়ে ব্রিটিশ সৈন্য ইরাক মি. টমসনের সেনাপতিত্বে আক্রমণ করে। করাচি থেকে সৈন্য সরবরাহ চলতে থাকে। মি. টমসন একজন দক্ষ সেনাপতি। তাঁর জয়ের নেশা অদম্য।

কিন্তু এই সময়ে বেলুচিস্তানের বাসভিলা অধিবাসীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের... ছিল শায়খুল হিন্দের করাচি শাখার অধিনায়ক ও শায়খুল হিন্দের ছাত্র মৌলানা মোহাম্মদ সাদিকের ষড়যন্ত্র। এই বিদ্রোহের ফলে ইংরেজকে তাদের ইরাক আক্রমণের পরিকল্পনা বদল করে সিন্ধু এলাকায় ঘাঁটি করতে হয় বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে। ফলে মি. টমসনের রসদ সরবরাহ কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগ তুর্কিরা ত্রিশ হাজার সৈন্য সমেত মি. টমসনকে বন্দি করে। বিদ্রোহ দমনের পর ইংরেজ সৈন্য মি. টমসনকেউদ্ধার করতে এলেও তুর্কি অবরোধ এড়াতে পারে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে মি. টমসন পরাজয় স্বীকার করেন। এই ছিল বাসভিলা বিদ্রোহের কাহিনী যা সম্পূর্ণতই শেয়খুল হিন্দের বিজয় কাহিনী।


(খ) স্বাধীনতা সংগ্রামে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা বর্ণনা করো।

উত্তর: স্বাধীনতা সংগ্রামে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে এর জন্মকাহিনী। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে যুক্তপ্রদেশের শ্যামলী অঞ্চলে স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন মৌলানা কাসেম ও মৌলানা গাঙ্গুহী (রাঃ)। কিন্তু এই সংগ্রামের ব্যর্থতার পর ইংরেজ শাসকদের নির্মম নির্যাতন থেকে তাঁহারা রেহাই পাননি। কিন্তু শাহ ওলীউল্লাহর জ্বালানো আগুনে তখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাও সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত ভীতিপ্রদ একটি বিষয়, সেই সময়ে বিপ্লবী বীর মৌলানা মোহাম্মদ কাসেম অতি সন্তর্পণে, সতর্কভাবে গোপনে সংগ্রামের আয়োজন করতে থাকেন। এইভাবে গোপনে ব্রিটিশ শাসকের চোখের আড়ালে জন্ম দেয় দেওবন্দ মাদ্রাসা।

এই মাদ্রাসার প্রধান অধ্যাপক মৌলানা মাহমুদুল শেখ শেয়খুল হিন্দ ছিলেন বীর বিপ্লবী দেশ বিদেশে বিপুল খ্যাতি ও অসাধারণ প্রতিভা ও দক্ষতা ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে শুরু করে নানা দেশের ছাত্রকে আকৃষ্ট করে। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্রের দল। কিন্তু ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বেলিত তাঁর মন। অতি সন্তর্পণে শুরু হয় তাঁর তথা দেওবন্দ মাদ্রাসার স্বাধীনতা সংগ্রাম। রাউলাট কমিটির রিপোর্টে প্রকাশ-"যুগপৎ অন্তবিপ্লবও বহিরাক্রমণ দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংহার ও স্বাধীনতা অর্জন করাই ছিল শায়খুল হিন্দের এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য।" যার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই দেওবন্দ মাদ্রাসা। বহিরাক্রমণের জন্য যে কোনো জায়গায় বেছে নেওয়া হোক না কেন তা পরিচালিত হত এই দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমার উপজাতীয় স্বাধীন রাষ্ট্রগুলিকে শায়খুল হিন্দ বেছে নেন তাঁর বহিরাক্রমণের কেন্দ্র হিসাবে। ইয়াগিস্তানের কেন্দ্র থেকে আক্রমণ চলতে থাকে ব্রিটিশ সরকারের ওপর, নির্দেশ আসে দেওবন্দ থেকে, পরিচালনা করেন তারই শিষ্যরা। সেই সময় দেওবন্দ থেকে সুদূর আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, বিশেষত গোয়েন্দাদের চোখে ফাঁকি দেওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু শেয়খুল হিন্দের দক্ষতা অসাধারণ। মৌলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি, মৌলানা উযায়ের গুল, ড. আনসারি, সীমান্ত গান্ধি খান আব্দুল গফফর খান, শেখ আবদুল রহিম, মৌলানা আবদুর রহিম, মৌলানা আবদুর রহিম রায়পুরী এঁরই সব ছিলেন এই আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, দেওবন্দ ছিল তাদের সদর দপ্তর। সীমান্ত ব্রিটিশ সৈন্য ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রবলযুদ্ধ। প্রথম মহাযুদ্ধের সুযোগে হাজি তুরুৎজয়ের পরিচালনায় ব্রিটিশ সরকারকে পরাভূত করে সব কিছুর নেপথ্যেই সক্রিয় ছিল দেওবন্দ মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ও অনুগামীদের হস্তক্ষেপ। ইংরেজদের করাচি আক্রমণ ও তাদের ব্যর্থতার পেছনে হিন্দের ছাত্র মৌলানা মহম্মদ সাদিক। এর ফলে তুর্কি সৈন্যরা ইংরেজ সেনাপতি মি. টমসনকে উদ্ধার করতে এলেও তুর্কিদের আক্রমণে প্রতিহত হয়। মি. টমসন বাধ্য হন পরাজয় স্বীকার করতে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে যে, স্বাধীনতা আন্দোলনের এই পর্যায়ে ভারতে সীমান্ত অঞ্চলে ইংরেজদের প্রতিহত করার যে প্রচণ্ড সংগ্রাম চলেছিল তার প্রাণকেন্দ্র ছিল দেওবন্দ মাদ্রাসা আর সংগ্রামীরা ছিলেন এই মাদ্রাসারই উত্তরসূরী। তাই একথা অনস্বীকার্য যে ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা অবিস্মরণীয়।


(গ) শেয়খুল হিন্দের কর্ম সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তর: শেয়খুল হিন্দ ছিলেন 'অন্দর-বাহির' সংঘাতে বিশ্বাসী। তিনি ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান অধ্যাপক বীর মুজাহিদ মৌলানা মো কাসেম (রাঃ) এর ছাত্র। বিপ্লবের আগুন তাঁর শিরায়। স্বাধীনতার পবিত্র মন্ত্রে দীক্ষিত করতে থাকেন জাতিধর্ম নির্বিশেষে তবে অতি সংগোপনে। বেছে নেন সীমান্তবর্তী স্বাধীন উপজাতির রাষ্ট্রগুলিকে, তাঁর বহিরাক্রমণের কেন্দ্র হিসাবে। একই সঙ্গে অন্তর্বিপ্লব ও বহিরাক্রমণের দ্বারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরাভূত করা এবং স্বাধীনতা অর্জন করার উদ্দেশ্যে। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের মতে-বহুসংখ্যক ইংরেজ সৈন্য নিহত হয় তাদের হাতে ইয়াগিস্তান সীমান্ত এলাকায় শায়খুল হিন্দের নির্দেশক্রমে তাঁর শিষ্যরা সশস্ত্র বিপ্লব চালাতে থাকে। গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু শেয়খুল হিন্দের বিচক্ষণতা ছিল অসাধারণ। এই সময় দেখা দিল প্রথম মহাযুদ্ধ। ব্রিটিশ সৈন্যকার বিভিন্ন স্থানে প্রেরিত হতে লাগল। শেয়খুল হিন্দ বুঝলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে পেশোয়ারের অদ্বিতীয় পির। তবে সংগ্রাম পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করে ইয়াগিস্তানে গমন করে ব্রিটিশ সরকারের ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। এই সময় মি. টমসন ইংরেজ সৈন্যদলের সেনাপতি হয়ে ইরাক আক্রমণ করেন। কিন্তু এই সময়ে বেলুচিস্তান বাসভিলা অঞ্চলের অধিবাসীরা বিদ্রোহ করায় ইংরেজ সৈন্য দল ইরাক যাত্রা মুলতুবি রেখে এলাকায় বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই সুযোগ তুর্কিরা ত্রিশ হাজার সৈন্য সমেত মি. টমসনকে অবরুদ্ধ করে, সবরকম সাহায্য থেকে বঞ্চিত মি. টমসনের পরাজয় স্বীকার ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

এই দীর্ঘ ও দ্বিমুখী আন্দোলনকে সর্বতোভাবেই পরিচালনা করেন শায়খুল হিন্দ।


❐ ব্যাকরণ:

(ক) অর্থ বলো ও বাক্যে প্রয়োগ করো: যুগপৎ, অমানুষিক, সন্তর্পণ, অটল, সীমান্ত, সংগ্রাম, অর্জন।

উত্তর: যুগপৎ= সাবধানে-তিনি অমানুষিক পরিশ্রম করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন।

সন্তর্পণে = সাবধানে-তিনি সন্তর্পণে অন্ধকার পথ পেরিয়ে এলেন।

অটল = স্থির-জমিদারমশাই তার সিদ্ধান্তে অটল হয়ে রইলেন।

সীমান্ত = শেষ সীমা-ভারতের কার্গিল সীমান্তের লড়াইয়ে বহু সৈন্য হতাহত হয়েছিল।

সংগ্রাম = লড়াই-এ সংগ্রামে আমাদের জয় হবেই।

অর্জন = রোজগার-তাঁর উপার্জন মোটেই ভালো নয়।


(খ) বিপরীত শব্দ লেখো: নিভৃত, দেশ, অর্জন, মরণ, উদ্বুদ্ধ, অসম্ভব, পরাজয়, অবরোধ।

উত্তর: নিভৃত-কোলাহলপূর্ণ।

দেশ-বিদেশ।

অর্জন-বর্জন।

মরণ-বাঁচন।

উদ্বুদ্ধ-নিরুৎসাহিত।

অসম্ভব-সম্ভব।

পরাজয়-জয়।

অবরোধ-উন্মুক্ত।


(গ) পদান্তর করো: মুগ্ধ, স্বাধীনতা, অংশ, কেন্দ্র, অরণ্য, পর্বত, বিপন্ন, প্রেরণ, জয়, দমন, মুক্তি।

উত্তর:মুগ্ধ-মুগ্ধতা।

অরণ্য-আরণ্যক।

জয়-জয়ী।

স্বাধীনতা-স্বাধীন।

পর্বত-পার্বত্য।

দমন-দমিত।

অংশ-আংশিক।

বিপন্ন-বিপদ।

মুক্তি-মুক্ত।

কেন্দ্র-কেন্দ্রীয়।

প্রেরণ-প্রেরিত।


(ঘ) সন্ধি বিচ্ছেদ করো: স্বাধীন, অত্যাচার, সমাধান, পশ্চাদপসরণ, অন্তবিপ্লব।

উত্তর:স্বাধীন = স্ব + অধীন।

পশ্চাদপসরণ= পশ্চাৎ + অপসারণ।

অত্যাচার = অতি + আচার।

অন্তর্বিপ্লব = অন্তঃ + বিপ্লব।

সমাধান সম+ আধান।

No comments:

Post a Comment