❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. মাহেশে কে গিয়েছিল?
উত্তরঃ রাধারাণী নামের এক বালিকা মাহেশে রথ দেখতে গিয়েছিল।
2. কাদের 'বড়োমানুষের মেয়ে' বলা হয়েছে?
উত্তরঃ জ্ঞাতির কাছে মোকদ্দমায় হেরে যাওয়ার আগে রাধারাণী ও তার মায়ের অবস্থা খুব ভালো ছিল। তাই তাদের 'বড়োমানুষের মেয়ে' বলা হয়েছে।
3. 'সর্বস্ব লইয়া মোকদ্দমা'-কার সঙ্গে কার মোকদ্দমা চলেছিল লেখো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্রের 'রাধারাণী' উপন্যাসাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাধারাণীর মায়ের সঙ্গে তাদেরই এক জ্ঞাতির বাড়ি-ঘর, বিষয়-সম্পত্তি সবকিছু নিয়েই মোকদ্দমা চলেছিল।
4. মোকদ্দমাটি বিধবা হাইকোর্টে হারিল'-এর ফল কী হয়েছিল?
উত্তরঃ মোকদ্দমাটি হাইকোর্টে হারার পর ডিক্রিদার ডিক্রি জারি করে রাধারাণী ও তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি সব নিয়ে গিয়েছিল।
5. ডিক্রিদার সব নেবার পর রাধারাণীরা কী?
উত্তরঃ ডিক্রিদার তাদের সব সম্পত্তি নেবার পর রাধারাণীদের নগদ যা ছিল তা খরচ ও ওয়াশিলাত দিতে শেষ হয়। শেষে গহনাদি বিক্রি করে তা মা প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করেন।
6. রাধারাণীর মায়ের নগদ টাকা কীভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তরঃ মামলার খরচ এবং ওয়াশিলাত বা ক্ষতিপূরণ দিতেই রাধারাণীর মায়ের নগদ টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল।
7. 'রাধারাণীর বিবাহ দিতে পারিল না'-কেন?
উত্তরঃ ভিটেমাটি চ্যুত হয়ে রাধারাণীর মা কুঁড়েঘরে থেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দৈহিক পরিশ্রম করে কোনোক্রমে দিন কাটাত। তাই আর মেয়ের বিয়ে দিতে পারেনি।
8. রাধারাণীর মা কখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল?
উত্তরঃ অনাহারে-অর্ধাহারে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে রাধারাণীর মা রথের ঠিক আগেই অসুস্থ হয়েছিল, তবে রথের দিন তার অবস্থা খুব গুরুতর হয়ে পড়েছিল।
9. রাধারাণী মায়ের পথ্যের জন্য কী করেছিল?
উত্তরঃ অসহায় রাধারাণী অভুক্ত অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে বনফুল সংগ্রহ করে, মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করে মায়ের পথ্য জোগাড় করতে চেয়েছিল।
10. 'মালা কেহ কিনিল না' বলার কারণ কী?
উত্তরঃ রথের টান অর্ধেক হতে না হতেই প্রবল বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় রাধারাণীর মালা আর কেউ কিনল না।
11. রাধারাণীর 'চক্ষু বারিবর্ষণ করিতেছিল' কেন?
উত্তরঃ মায়ের অসুস্থতা-অনাহার-অন্নাভাবের কথা ভেবে রাধারাণী কাঁদছিল। এখানে লেখক রথের মেলার শ্রাবণধারার সঙ্গে নিরুপায় রাধারাণীর অসহায় কান্নাকে একাকার করে দেখিয়েছেন।
12. 'ফেলে নাই'-কী?
উত্তরঃ রাধারাণী নিজের হাতে তৈরি বনফুলের মালাটিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও বুকে আঁকড়ে রেখেছিল, ফেলে দেয়নি।
13. রাধারাণীর উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠার কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ বর্ষণমুখর রথের দিনে অন্ধকার রাস্তায়, সহসা রাধারাণীর ঘাড়ের উপর একজন এসে পড়ায় সে উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে উঠেছিল।
14. 'রোদন বন্ধ হইল' কেন?
উত্তরঃ রাধারাণী অপরিচিত ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বরে দয়ার স্পর্শ পেয়ে কান্না বন্ধ করেছিল।
15. 'কেবল মা আছে'-বক্তা কে?
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী' গদ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা রাধারাণী।
16. অপরিচিত ব্যক্তি রাধারাণীকে হাত ধরতে বলেছিল কেন?
উত্তরঃ পিছল রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ভয় থাকায় অপরিচিত ব্যক্তিটি রাধারাণীকে হাত ধরতে বলেছিল।
17. 'রাধারাণীর বয়স অনুমান করিতে পারে নাই'-কেন?
উত্তরঃ গাঢ় অন্ধকারের কারণে অপরিচিত পথিক রাধারাণীর বয়স অনুমান করতে পারেনি।
18. 'রাধারাণী বড়ো বালিকা'-বক্তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ বক্তা রাধারাণীর কণ্ঠস্বরে তাকে নিতান্ত বালিকা বলে বোধ করেছিল, পরে অন্ধকারে হাঁটার সময় তার হাতের স্পর্শে টের পায়, সে বড়ো বালিকা।
19. মেলার সেই অপরিচিত ব্যক্তি মালা কিনতে চেয়েছিল কেন?
উত্তরঃ মেলার সেই অপরিচিত ব্যক্তি বাড়ির গৃহদেবতার পুজোর প্রয়োজনে মালা কিনতে চেয়েছিল।
20. 'আমি তাই মালা কিনিতে পারি নাই।-বলার কারণ কী?
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে তাড়াতাড়ি মেলা ভেঙে যাওয়ায় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মালা কিনতে পারেনি বলে জানিয়েছিল।
21. 'রাধারাণীর আনন্দ হইল-রাধারাণীর আনন্দ হল কেন?
উত্তরঃ ঝড়-বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় রাধারাণীর মালা বিক্রিই হয়নি। অবশেষে জনৈক ব্যক্তি তা কিনতে চাইলে তার আনন্দ হয়।
22. 'তুমি ভুলে টাকা দাও নাই তো?'-বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তরঃ রাধারাণী অপরিচিত ব্যক্তিটির কাছ থেকে মালার দাম হিসেবে পাওয়া পয়সার আকার ও ঔজ্জ্বল্য দেখে, প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছিল।
23. 'তাই চকচক করছে। -এমন বলেছে কেন?
উত্তরঃ অপরিচিত ভদ্রলোক রাধারাণীকে বলেছিল, নতুন কলের নতুন পয়সা হওয়ায় তা এমন চকচক করছে।
24. করো। 'তারপর প্রদীপ জ্বালিয়ো।'-প্রসঙ্গ উল্লেখ
উত্তরঃ অপরিচিত লোকের কাছ থেকে প্রাপ্ত পয়সা সম্পর্কে সন্দেহ জাগায় রাধারাণী ফিরে আগে প্রদীপ জ্বলে তা দেখতে গেলে ভদ্রলোক তাকে আগে ভেজা কাপড় ছেড়ে পরে প্রদীপ জ্বালাবার পরামর্শ দেন।
25. 'আমার ব্যামো হয় না'-বলার কারণ কী?
উত্তরঃ রাধারাণীর দুটি মাত্র কাপড় সম্বল। তাই সে ভিজে কাপড়ে থাকতে অভ্যস্ত। এ সত্ত্বেও তার ব্যামো হয় না বলেই সে এমন মন্তব্য করেছে।
26. রাধারাণীর আলো জ্বালাতে বিলম্ব হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ রাধারাণীদের ঘরে তেল না থাকায়, চাল থেকে খড় পেড়ে চকমকি ঠুকে তাকে আগুন জ্বালাতে বিলম্ব হয়েছিল।
27. 'আলো জ্বালিয়া রাধারাণী দেখিল-রাধারাণী কী দেখেছিল?
উত্তরঃ আলো জ্বেলে রাধারাণী দেখেছিল, বনফুলের মালার দাম হিসেবে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাকে পয়সা নয়, টাকা দিয়ে গিয়েছিল।
28. 'সে নাই-চলিয়া গিয়াছে।' - কে চলে গেছে?
উত্তরঃ আলো জ্বেলে রাধারাণী বাইরে এসে দেখেছিল, মেলার সেই অপরিচিত ভদ্রলোেক যে বনফুলের মালার দাম বাবদ পয়সার বদলে টাকা দিয়েছে, সে চলে গেছে।
29. 'আমরাও ভিখারি হইয়াছি'- উক্তিটি কার? কেন তার এমন উক্তি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি রাধারাণীর মায়ের।
এক জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় রাধারাণীর মা সর্বস্ব হারিয়েছিল। তাই সে নিজেদের নিঃস্ব-সর্বস্বহারা ভিখারি বলে মনে করেছে।
30. 'বড় শোরগোল উপস্থিত করিল'- কে কেন শোরগোল উপস্থিত করেছিল?
উত্তরঃ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা দেওয়া টাকা নিয়ে যখন রাধারাণী ও তার মা কথাবার্তায় ব্যস্ত তখন কাপড় ব্যবসায়ী পদ্মলোচন একজোড়া শান্তিপুরী শাড়ি নিয়ে এলে শোরগোল পড়ে যায়।
31. 'মনে করিয়াছিল যে, সেই তিনিই বুঝি আবার ফিরিয়া আসিয়াছেন'-রাধারাণী কার কথা মনে করেছিল?
উত্তরঃ মেলায় রাধারাণীর সাহায্যকারী এবং বনফুলের মালার দাম হিসেবে পয়সার বদলে টাকা দিয়েছিল যে ভদ্রলোক, রাধারাণী ভেবেছিল সে-ই বুঝি ফিরে এসেছে।
32. পদ্মলোচনকে 'পোড়ারমুখো কাপুড়ে মিনেন্স'- বলার কারণ কী?
উত্তরঃ রাধারাণীর বাবার আমল থেকেই পদ্মলোচনের চড়া দামে কাপড়ের কারবারের কথা জানায় তারা পদ্মলোচনকে এরূপ সম্বোধন করেছে।
33. 'রাধারাণীর কথা শুনিয়া কিছু বিস্মিত হইল'-বিস্মিত হয়ে সে কী বলেছিল?
উত্তরঃ বিস্মিত পদ্মলোচন জানিয়েছিল, এক অপরিচিত ভদ্রলোক দুটি কাপড়ের নগদ দাম দিয়ে, তাকে ওই দুটি রাধারাণীকে দিয়ে আসতে বলেছিল।
34. পদ্মলোচন অপরিচিত ক্রেতাকে কী ভেবেছিল?
উত্তরঃ পদ্মলোচন অপরিচিত রুক্মিণীকুমারকে রাধারাণীদের আত্মীয়-কুটুম্ব বলে ভেবেছিল।
35. 'প্রসন্নমনে দোকানে ফিরিয়া গেলেন'-তার এমন প্রসন্নতার কারণ কী?
উত্তরঃ পদ্মলোচন চার টাকার কাপড় রুক্মিণীকুমারকে আট টাকা সাড়ে চোদ্দো আনায় বিক্রি করে অত্যন্ত প্রসন্ন বা খুশি হয়েছিল।
36. রাধারাণী টাকা ভাঙিয়ে কী করেছিল?
উত্তরঃ রাধারাণী প্রাপ্ত টাকা ভাঙিয়ে বাজার করে এবং প্রদীপের জন্য প্রয়োজনীয় তেল নিয়ে ফিরেছিল।
37. রাধারাণী ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে কী পেয়েছিল?
উত্তরঃ রাধারাণী ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে একখানি কাগজ তথা নোট কুড়িয়ে পেয়েছিল।
38. রাধারাণীকে 'বড়োঘরের মেয়ে' বলা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ রাধারাণীর অক্ষরপরিচয় ছিল বলে তাকে 'বড়োঘরের মেয়ে' বলা হয়েছে।
39. রাধারাণীর কুড়িয়ে পাওয়া নোটে কী লেখা ছিল?
উত্তরঃ কুড়িয়ে পাওয়া নোটে রুক্মিণীকুমার রায় এবং রাধারাণীর নাম লেখা ছিল।
40. রুক্মিণীকুমার নোটে নিজের নাম লিখেছিলেন কেন?
উত্তরঃ পাছে নোটটিকে কেউ চোরা নোট বলে রাধারাণীদের যাতে অপদস্থ করতে না পারে, সেজন্য রুক্মিণীকুমার তাতে নিজের নাম লিখে রেখেছিলেন।
41. 'এমত কোনো সন্ধান পাইল না'-কার সন্ধান পেল না?
উত্তরঃ রাধারাণী ও তার মা শ্রীরামপুর বা নিকটবর্তী অঞ্চলে রুক্মিণীকুমারের অনেক খোঁজখবর করেও কোনো সন্ধান পেল না।
42. নোটখানি তারা ভাঙায়নি কেন?
উত্তরঃ রাধারাণীদের কাছে এই নোটখানি ছিল প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আর তারা দরিদ্র হলেও লোভী ছিল না, তাই নোটখানি রাধারাণীরা ভাঙায়নি।
43. 'তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।'- কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে রাধারাণী ও তার মায়ের কথা বলা হয়েছে। রুক্মিণীকুমার রায়ের রেখে যাওয়া নোট না ভাঙিয়ে রাখাই তাদের নির্লোভিতার প্রমাণ।
❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'কিন্তু আর আহারের সংস্থান রহিল না'-কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? তাদের আহারের সংস্থান রইল না কেন?
উত্তরঃ 'রাধারাণী' গল্পে মোকদ্দমা-জনিত কারণে তাদের বিষয় সম্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে অলংকারাদি ও নগদ টাকাপয়সাও শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের সর্বস্ব হারানোর প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে।
পিতার মৃত্যুর পর রাধারাণীদের সঙ্গে তাদের এক জ্ঞাতির মোকদ্দমা শুরু হয় এবং তাতে রাধারাণীরা হেরে যায়। এর পরেই সেই জ্ঞাতি ডিক্রি জারি করে তাদের প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি নিয়ে নেয়। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ ও প্রিভি-কাউন্সিলে আপিল করার জন্য নগদ টাকা ও অলংকারাদিও হারায়। ফলে তাদের অন্নসংস্থানের সুযোগ ছিল না।
2. 'রাধারাণীর বিবাহ দিতে পারিল না'-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে রাধারাণীদের ভয়াবহ দারিদ্র্যের স্বরূপটিই ফুটে উঠেছে। জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় রাধারাণীর বিধবা মায়ের প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি হাতছাড়া হয়। মামলার খরচ এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ মেটাতে তার সঞ্চিত সমস্ত টাকা খরচ হয়ে যায়। এ ছাড়া গয়না-অলংকার প্রভৃতি বিক্রি করে সে প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করায় সম্পূর্ণ কপর্দকশূন্য হয়ে পড়ে। তখন অনাহারে-অধহারে কোনোক্রমে দৈহিক পরিশ্রম করে দিন কাটাতে বাধ্য হয়ে রাধারাণীর মা আর তার বিয়ে দিতে পারেনি।
3. 'অগত্যা রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল'-এমন মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো। অথবা, 'মালা কেহ কিনিল না'-কোন্ মালা? তা না কেনার কারণ কী ছিল? ১+২=৩
উত্তরঃ রথের দিন সর্বস্বহারা রাধারাণীর মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে পথ্যের প্রয়োজন হয়। পথ্যের জন্য অর্থের প্রয়োজনে রাধারাণী বুনো ফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বেচতে যায়। এক্ষেত্রে সেই মালার কথা বলা হয়েছে। রথের দিন কিছুটা রথ টানার পরই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় এবং মেলা ভেঙে যায়। ফলে লোকজন ঘরমুখী হয় তবুও রাধারাণীর মনে ক্ষীণ আশা ছিল বৃষ্টি থামলে বুঝি বা মেলা জমবে। কিন্তু রাত বাড়তে থাকে, বৃষ্টিও থামে না। তাই তার মালা বিক্রি না
4. 'তথাপি রাধারাণী সেই এক পয়সার বনফুলের মালা বুকে করিয়া রাখিয়াছিল-'এক পয়সার বনফুলের মালাটি কী? এখানে 'তথাপি' শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে কেন? ১+২=৩
উত্তরঃ গুরুতর অসুস্থ মায়ের পথ্য জোগাড়ের উদ্দেশ্যে বনফুলের মালা গেঁথে মাহেশের রথের মেলায় তা বিক্রি করতে গিয়েছিল। এক পয়সার মালা বলতে সে মালার কথা বলা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে মেলা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় রাধারাণী তার বুনোফুলের মালটি বিক্রি করতে না পারলেও ভেবেছিল বৃষ্টি থামলে মেলা জমবে এবং মালাটি বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু বৃষ্টি আরও বাড়তে থাকে এবং অন্ধকার পথে যেতে যেতে সে আছাড় খায় কিন্তু মায়ের অন্নাভাবের কথা মনে করে সে সেই মালাটি তবুও বুকে যত্নের সঙ্গে আঁকড়ে থাকে। রাধারাণীর এই মনোভাবটি ব্যক্ত করতেই 'তথাপি' শব্দটির ব্যবহৃত হয়েছে।
5. 'কণ্ঠস্বর শুনিয়া রাধারাণীর রোদন বন্ধ হইল'-প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। রাধারাণীর রোদন বন্ধ হয়েছিল কেন? ১+২=৩
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে প্রবল বৃষ্টিতে পণ্ড রথের মেলার ভিড়ে-কাদায় বিপর্যস্ত রাধারাণীর অসহায় অবস্থার ছবি ফুটে উঠেছে। অন্ধকার পথে বিভ্রান্ত ও রোরুদ্যমান বালিকাটির প্রায় ঘাড়ের ওপর এক ব্যক্তি এসে পড়ে। কিন্তু সেই ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের আন্তরিকতায় রাধারাণীর কান্না থেমে যায়।
উপরোক্ত ঘটনার ফলে প্রথমে রাধারাণী প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাওয়ায়, তার কান্নার বেগ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শুনে রাধারাণী ক্ষুদ্র বুদ্ধিতেও বুঝেছিল লোকটি বড়ো দয়ালু। তাই পরে তার কান্না বন্ধ হয়েছিল।
6. 'রাধারাণীর ক্ষুদ্র বুদ্ধিটুকুতে ইহা বুঝিতে পারিল কী বুঝতে পারল? 'ক্ষুদ্র বুদ্ধিটুকু' বলার কারণ কী? ২+১=৩
উত্তরঃ বৃষ্টি-বিঘ্নিত মেলা থেকে অন্ধকার পথে কাঁদতে কাঁদতে ফেরার সময় আশাহত বিধ্বস্ত রাধারাণীর, ঘাড়ে এক ভদ্রলোক পিছলে পড়ে। এতে রাধারাণী ভয় পেয়ে আরও কেঁদে ওঠে। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই সেই ভদ্রলোকের সাথে আলাপচারিতায় রাধারাণী তার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে বুঝে নেয় স্নেহপূর্ণ কণ্ঠস্বরের অধিকারী মানুষটি অত্যন্ত দয়ালু। রাধারাণী দশ এগারো বছর বয়সের এক নিতান্ত অপরিণত বালিকা। এই বয়সের বালিকার কাছে পরিণত বোধ আশা করা যায় না, তাই কথক তার বুদ্ধিকে 'ক্ষুদ্র বুদ্ধি' বলে অভিহিত করেছেন।
7. 'কিন্তু কথার স্বরে বুঝিয়াছিল'-কার কথা বলা হয়েছে? সে কী বুঝেছিল? ১+২=৩
উত্তরঃ রথের মেলা থেকে ফেরার পথে অন্ধকারে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাধারাণীর সঙ্গে যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির অকস্মাৎ পরিচয় হয়েছিল, এখানে তার কথাই বলা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় মানুষটি রাধারাণীর কথার স্বরে বুঝেছিল, সে বালিকা। অন্ধকারের ফলে সে তার বয়স অনুমান করতে পারেনি। এখন গলার স্বর ও হাতের স্পর্শ পেয়ে সে বুঝতে পেরেছিল, রাধারাণী বড়ো বালিকা।
8. 'সেই এক পয়সার বনফুলের মালার সকল কথাই বাহির করিয়া লইল'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৩
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে রথের মেলার সঙ্গে রাধারাণীর মনের আশাটিও বিনষ্ট হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সে কাঁদতে কাঁদতে কাদায়-অন্ধকারে বিভ্রান্তের মতো যখন পথে পথে ঘুরছিল, তখন ঘটনাচক্রে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সঙ্গে তার আলাপ হয়। পিছল পথে বালিকা রাধারাণীকে ব্যক্তিটি হাত ধরে নিরাপদে এগিয়ে নিয়ে চলার সময় কৌশলে তার নাম-পরিচয়, একলা রথ দেখতে যাওয়ার কারণ প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে, 'এক পয়সার বনফুলের মালার, সব কথাই জেনে নিয়েছিল।
9. 'রথ দেখিতে যায় নাই'-কে রথ দেখতে যায়নি? কেন সে রথ দেখতে যায়নি লেখো। ১ + ২ = ৩
উত্তরঃ রাধারাণী রথ দেখতে যায়নি।রথের অনেক আগে থেকেই রাধারাণীর মায়ের অসুস্থতা চরম আকার ধারণ করেছিল। রথের দিন তা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। এদিকে ঘরে অসুস্থ মায়ের কোনো পথ্য ছিল না। কোনো উপায় না দেখে রাধারাণী বনফুলের একটি মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করবে বলে রওনা দেয়। তবে তার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। কারণ প্রবল বৃষ্টিতে রথের মেলা পণ্ড হয়ে যায়। ফলে রাধারাণীর মালাটিও বিক্রয় হয় না এবং সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
10. 'তুমি মালা বেচো তো আমি কিনি।'-উদ্ধৃতাশংটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন রথের মেলায় রাধারাণীর সঙ্গে অন্ধকার পথে পরিচিত হওয়া ভদ্রলোক। পরবর্তীতে তার নাম রুক্মিনীকুমার রায় বলে আমরা জানতে পারি। প্রবল বৃষ্টিতে রথের মেলা যখন ছত্রভঙ্গ, বুনো ফুলের মালা বেচতে গিয়ে রাধারাণী যখন দিশেহারা তখন তার এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি অসহায় রাধারাণীকে বাড়ি পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। বাড়ি পৌঁছে দেবার পথে ভদ্রলোক অত্যন্ত কৌশলে রাধারাণীর মেলায় আসা ও তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হন। সব শুনে তিনি রাধারাণীর বুকে আঁকড়ে ধরে থাকা মালাটি কিনে নেবার প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন।
11. তো নহিলে, আমার মা খেতে পাবে না। 1 তা নিই!'-বক্তার মনের দ্বিধা-দ্বন্দু তার কোন্ মনোভাবের প্রতিফলন, ব্যাখ্যা করো। ৩
উত্তরঃ হাতে পয়সা নেই, মা গুরুতর অসুস্থ এমন অবস্থায় মায়ের প্রয়োজন পথ্যের, তাই রাধারাণী বুনো ফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রির জন্য যায়। কিন্তু প্রবল হয়ে যায় এবং সন্ধ্যা নেমে আসে তাই সে সেই মালা বুঝে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। তখন জনৈক দয়ালু ভদ্রলোক এদিয়ে এসে তার সব কথা শুনে তাকে বাড়ি ছেড়ে আসা কথা বলেন। পথে সেই ব্যক্তি বুনোফুলের মালা কিনে নেবেন বলতেই রাধারাণীর মনে প্রশ্ন জাগে কীভাবে সে এই সাহায্যকারী ব্যক্তির কাছ থেকে পয়সা নেবে! আবার অন্যদিকে ভাবেন পয়সা না নিলে তার মায়ের পথ্যই বা কী হবে? এক্ষেত্রে বস্তার মনে একদিকে সৌজন্য, অপরদিকে কর্তব্যবোধ এই দোলাচলতা লক্ষ করা যায়।
12. 'আমার আর কাপড় নাই-' প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা রাধারাণী। মায়ের পথ্যের জন্য রাধারাণী বুনো ফুলে মালা গেঁথে মেলায় বিক্রির জন্য যায়। প্রবল বৃষ্টিতে মেলা পণ্ড হয় ও সে পথ হারিয়ে ফেলে। পথে জনৈক দয়ালু ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই ব্যক্তি রাধারাণীর সব ঘটনা শুনে তার মালা কিনে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন এবং মালার মূল্যবাবদ একটি মুদ্রা দেন। ঘরে পৌঁছে বৃষ্টিস্নাত রাধারাণী আগে প্রদীপ জ্বেলে মুদ্রাটি যাচাই করে নিতে চায়। তখন উদ্দিষ্ট ব্যক্তি রাধারাণীকে আগে কাপড় ছেড়ে পরে প্রদীপ জ্বালাবার কথা বললে উত্তরে বক্তা একথা বলেন।
13. 'যে টাকা দিয়াছে, সে নাই- চলিয়া গিয়াছে'- কে, কাকে টাকা দিয়েছিল? টাকা দেওয়ার কারণ কী? ১+ ২=৩
উত্তরঃ রুক্মিণীকুমার রায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি হিসেবে রথের মেলা থেকে ফেরার পথে অসহায় রাধারাণীকে বনফুলের মালার দাম বাবদ টাকা দিয়েছিল।
অন্ধকার পথে ফেরার সময় বালিকাটির সঙ্গে কথা বলে রুক্মিণীকুমার জানতে পেরেছিল, রাধারাণী নিছক রথের মেলা - দেখতে যায়নি। বনফুলের একটি মালা বিক্রি করে, সেই পয়সায় মায়ের পথ্য কিনবে ভেবেছিল সে। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় তার মালাটি বিক্রি হয়নি। তখন রুক্মিণীকুমার নিজের বাড়ির ঠাকুরের জন্য মালাটি কিনে নিয়ে বালিকা ও রাধারাণীকে টাকা দিয়েছিল 12
14. 'আমরাও ভিখারি হইয়াছি, দান গ্রহণ করিয়া খরচ করি।-উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৩
উত্তরঃ রাধারাণী রথের মেলায় দেখা হওয়া দয়ালু ও পরোপকারী ভদ্রলোকটিকে চার পয়সার বিনিময়ে বনফুলের মালাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু উদ্দিষ্ট ব্যক্তি আসবার পথে রাধারাণীর কাছ থেকে কৌশলে সব জেনে নিয়ে, তাকে না না জানিয়েই পয়সার বদলে টাকা দেয় এবং সুযোগ বুঝে স্থান খ ত্যাগ করে। রাধারাণীর মা তার মুখ থেকে সব শুনে দয়ালু ৬ মানুষটির সচেতন দানের কথা বুঝতে পারে আর নিজেদের বৃষ্টিতে মেলা পণ্ড। আর্থিক দুর্দশায় সেই দানের টাকায় দিন কাটানোর কথা বলে। পরবর্তীতে রাধারাণী ওই টাকায় বাজার থেকে মায়ের পথ্য ও প্রদীপের তেল কিনে আনে।
15. 'পদ্মলোচন ইহাদের কাছে সুপরিচিত'-পদ্মলোচন কাদের কাছে কেন সুপরিচিত লেখো। ৩
উত্তরঃ রাধারাণী ও তার মায়ের কাছে পদ্মলোচন দীর্ঘকাল ধরেই পরিচিত। রাধারাণীদের কুটির বাজার থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাদের কুটিরের কাছেই পদ্মলোচন সাহার দোকান। এ ছাড়া রাধারাণীর বাবার আমল থেকেই, অর্থাৎ তাদের যখন সুদিন ছিল তখন থেকেই শপথ করে কাপড় ব্যবসায়ী পদ্মলোচন চার টাকার কাপড়ে আট টাকা সাড়ে বারো আনা আর দুই আনা মুনাফা নিত। রুক্মিণীকুমার রায়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
16. 'আমি বলি তোমাদের কুটুম্ব।' -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তার মনোভাব বিশ্লেষণ করো। ৩
উত্তরঃ রথের মেলায় ঘটনাচক্রে রাধারাণীর সঙ্গে আলাপ হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় দয়ালু ভদ্রলোক মালার দাম হিসেবে পয়সার বদলে যেমন টাকা দিয়েছিল, তেমনই রাধারাণীদের চরম আর্থিক দুর্দশার কথা শুনে পদ্মলোচনের দোকান থেকে নগদ-মূল্যে দুটি শান্তিপুরের কাপড় কিনেও দিয়ে গিয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই, পদ্মলোচন তাকে রাধারাণীদের আত্মীয় বা কুটুম্ব বলে ভেবেছিল। কিন্তু রাধারাণীরা যখন পদ্মলোচনের কাছেই বাবুটির পরিচয় জানতে চায়, সে বিস্মিত হয়ে জানায় বাবুটিকে সে চেনে না। একমাত্র আত্মীয়-কুটুম্ব ছাড়া আর কে-ই বা পারে এমনভাবে কারও জন্য খরচ করতে। তাই পদ্মলোচন প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্য করেছিল।
17. 'হাঁ মা, এমন লোক কে মা।-লোকটির পরিচয় কীভাবে জানা গিয়েছিল লেখো। ৩
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে অন্ধকারে রথের মেলায় বিপর্যস্ত রাধারাণীর সঙ্গে ঘটনাচক্রে এক সহৃদয় ভদ্রলোকের পরিচয় হয়। সেই মানুষটি রাধারাণীকে নিরাপদে যেমন বাড়ি পৌঁছে তা দেয়, তেমনই তাদের দুরবস্থার কথা শুনে তাকে নানাভাবে সাহায্য করে। কিন্তু প্রচারবিমুখ মানুষটি নিজের পরিচয় না জানিয়েই রাধারাণীদের বাড়ির বাইরে থেকে বিদায় নেয়। পরে ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে একখানা কাগজের নোট কুড়িয়ে পায় রাধারাণী। মা-মেয়ের অক্ষরপরিচয় থাকায় তারা বুঝতে পারে নোটে ভদ্রলোকের নাম লেখা আছে রুক্মিণীকুমার রায়। এভাবেই অজ্ঞাতপরিচয় ভদ্রলোকের পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়েছিল।
18. 'এমত কোনো সন্ধান পাইল না'-কার সন্ধান পাওয়া গেল না?
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যাওয়া রথের মেলা থেকে ক্রন্দনরতা রাধারাণীকে এক দয়ালু ব্যক্তি বাড়ি পৌঁছে দেন। তিনি রাধারাণীর মেলায় আসার কারণ ইত্যাদি শুনে রাধারাণীদের নানানভাবে সাহায্য করলেও নিজেকে কিন্তু আড়ালেই রাখেন। পরে ঘর পরিষ্কার করার সময় রাধারাণী কুড়িয়ে পাওয়া নোট থেকে তাদের সাহায্যকারী লোকটির নাম রুক্মিণীকুমার রায় বলে জানতে পারে। রাধারাণীকে যখন ভদ্রলোক বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন, তখন তিনি শ্রীরামপুর যাবার কথা বলেছিলেন। তাই রাধারাণী ও তার মা শ্রীরামপুরের আশেপাশে হন্যে হয়ে খুঁজেও এ নামে কাউকে পায়নি বলেই এ মন্তব্য।
19. 'তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে'- কথকের এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের 'রাধারাণী' নামক রচনাংশ থেকে গৃহীত। এক্ষেত্রে কথক রাধারাণীদের নির্লোভ চরিত্রকে তুলে ধরতেই এমন মন্তব্য করেছেন। ঝড়বৃষ্টির রাতে এক দয়ালু ভদ্রলোক রাধারাণীকে বাড়িতে পৌঁছে দেন এবং রাধারাণীর মুখে তাদের পারিবারিক অবস্থা শুনে অতিরিক্ত দাম দিয়ে তার বুনোফুলের মালা কেনেন। রাধারাণী পরনের বস্ত্রাভাব দেখে কাপড় কিনে পাঠান। তা ছাড়া সাহায্যের জন্য তিনি রাধারাণীর বাড়িতে নিজের নাম লিখে নোেট ফেলে যান, যাতে তাদের কেউ না চোর অপবাদ দেয়। মালা বিক্রির টাকা নিছক প্রয়োজনের তাগিদে খরচ করলেও নোটটি যেহেতু তাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত - তাই তারা তা খরচ না করে তুলে রাখে। তাদের এই মনোভাব দেখেই কথক এমন মন্তব্য করেছেন।
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:
1. মোকদ্দমাটি বিধবা হাইকোর্টে হারিল'— কোন্ মোকদ্দমার কথা বলা হয়েছে? মোকদ্দমাটি হেরে বিধবার কী পরিণতি হয়েছিল? ১ + ৪ = ৫
উত্তরঃ রাধারাণীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মায়ের সঙ্গে এক জ্ঞাতি-সম্পর্কের আত্মীয়ের মামলা হয়। প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে সেই মোকদ্দমাটির কথাই বলা হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে জ্ঞাতি-সম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে রাধারাণীর মায়ের যে মামলাটি হয়েছিল, তাতে তার পরাজয় ঘটে। হাইকোর্টে হেরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ডিক্রিদার জ্ঞাতি ডিক্রি জারি করে সমস্ত সম্পত্তি নিজের অধিকারে নেয়, এমনকি পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটি থেকেও রাধারাণী ও তার মাকে বের করে দেয়। সব মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রাধারাণীদের হাতছাড়া হয়। মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ মেটাতে রাধারাণীর মায়ের অর্জিত সমস্ত নগদ অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। তবু শেষ পর্যন্ত রাধারাণীর মা অলংকার বিক্রি করে উচ্চতর আদালতে অর্থাৎ প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করে। কিন্তু এ সব কিছুর পরে তারা সম্পূর্ণ নিঃস্ব ও কপর্দকশূন্য হয়ে পড়ে। একটি কুটিরে আশ্রয় নিয়ে কোনোরকমে প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটতে থাকে।
2. 'অগত্যা রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল'-রাধারাণী কোথা থেকে ফিরল? সে কাঁদছিল কেন? ১+৪ = ৫
উত্তরঃ 'রাধারাণী' রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত অংশে রথের মেলায় প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাধারাণী মাহেশের রথের মেলা থেকে ফিরছিল।
অনেক কষ্ট করে সে কয়েকটি বনফুল তুলে একটি মালা তৈরি করে রথের মেলায় বিক্রি করতে গিয়েছিল। কারণ ঘরে তার অসুস্থ মা বিছানায় শয্যাশায়ী। এদিকে বাড়িতে অন্নের কিংবা পথ্যের কোনো জোগাড় নেই। তাই রাধারাণী ওই বনফুলের মালা বিক্রি করে, সেই পয়সায় মায়ের পথ্য আনবে ভেবে মেলায় মালা বিক্রি করতে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে রথের মেলা সেদিন একেবারেই জমল না। ঝড়-বৃষ্টির প্রচণ্ড তাণ্ডবে মেলা পণ্ড হয়ে গেল। রাধারাণী ভেবেছিল কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থামলেই আবার লোক জমবে। কিন্তু বৃষ্টি আর থামায় না রাধারাণীর মালাও আর বিক্রি হল না। ঝড়-বৃষ্টিতে পিচ্ছিল অন্ধকার পথে রাধারাণী বাড়ির পথ ধরল। কিন্তু অন্ধকারে সে পথ চিনতে পারছিল না। আশাহত মনে বিপর্যস্ত রাধারাণী মায়ের পথ্যের কোনো উপায় হল না ভেবে কাঁদতে কাঁদতে ফেরার পথ খুঁজে বেড়াতে থাকল।
3. দান গ্রহণ করিয়া খরচ করি'-কে দান করেছে? কেন দান করেছে লেখো। ১+৪ = ৫
উত্তরঃ প্রবল বৃষ্টিতে পণ্ড রথের মেলা থেকে এক সহৃদয় ভদ্রলোক রোরুদ্যমান বালিকা রাধারাণীকে উদ্ধার করেন এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেন। আসার পথে তিনি রাধারাণী ও তার মায়ের দুরবস্থার কথা শুনে তাদের নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। এখানে সেই ব্যক্তির কথাই বলা হয়েছে।
অজ্ঞাতপরিচয় ভদ্রলোক রাধারাণীর অসহায় অবস্থার কথা শুনে তার বনফুলের মালাটি কিনে নিয়েছিলেন। তবে মালার দাম পয়সার পরিবর্তে তিনি টাকায় দিয়েছিলেন। বালিকা ঝড়জলের মধ্যে, অন্ধকার পথে তা বুঝতে পারেনি। তবে তার সন্দেহ হয়েছিল। পয়সা হাতে নিয়েই সে বলেছিল, "এ কি পয়সা? এ যে বড়ো বড়ো ঠেকচে।” তখন অচেনা মানুষটি 'ডবল পয়সা' বা 'নূতন কলের পয়সা' ইত্যাদি বলে রাধারাণীকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। তবে বাড়ি ফিরে আলো জ্বেলেই সে বুঝেছিল এ পয়সা নয় টাকা। কিন্তু সে টাকা ফেরত দিতে এসে দেখে ওই ব্যক্তি চলে গিয়েছেন। তখন বালিকা রাধারাণী সমস্ত ঘটনা মাকে জানায়। মা তাকে বুঝিয়ে বলে, সেই সহৃদয় দাতা তাদের দুঃখের কথা শুনে দান করেছেন। এখন তারা দুর্বিপাকে পড়ে ভিখারি হয়েছে। কাজেই দান গ্রহণ করে দিনাতিপাত করা ছাড়া রাধারাণীদের আর অন্য কোনো উপায় নেই।
4. বালিকা রাধারাণীর মধ্যে প্রকাশিত কোন্ কোন্ প্রধান মানবীয় গুণাবলি তোমায় আকৃষ্ট করেছে, তা পাঠ্যাংশ অবলম্বনে বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী' - রচনাংশে আমরা তাকে দশ-এগারো বছরের এক বালিকা রূপে - পাই। গল্পটি বিশ্লেষণ করে বালিকাটির তিনটি গুণাবলি পাঠকের চোখে সহজেই ধরা পড়ে। তা হল তার কর্তব্যবোধ, সাহসিকতা, - ও নির্লোভ মানসিকতা।
কর্তব্যবোধ: বাবার মৃত্যুর পর জ্ঞাতির সঙ্গে মামলা করে । তাদের বিষয় সম্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকাপয়সা সবই শেষ হয়ে যায়। তাদের আহারের সংস্থান রইল না। রাধারাণী ও তার বিধবা মা একটি কুটিরে আশ্রয় নিয়ে কোনো প্রকারে দিনকাটাতে লাগল। ইতিমধ্যে রাধারাণীর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মায়ের পথ্যের প্রয়োজন হয় কিন্তু ঘরে অর্থাভাব। তাই সে কর্তব্যবোধের হাতছানিতে মনে সাহস সঞ্চার করে বুনোফুলের মালা গেঁথে তা র রথের মেলায় বিক্রির জন্য যায়। মালা বেচে মায়ের পথ্য কেনার মধ্যে তার কর্তব্যবোধ লক্ষিত হয়।
সাহসিকতা: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তার মালা বিক্রি ময় হয়নি। তাতে কিন্তু সাময়িকভাবে ভয় পেলেও সে মালাগুলি বুকে ল। আঁকড়ে ধরে অন্ধকার পথে বাড়ি ফেরবার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, ন তাতে তার সাহসিকতার পরিচয়ই পাওয়া যায়।
নির্লোভ মানসিকতা: অন্ধকার পথে রুক্মিণীকুমার যখন তার বুনোফুলের মালা কিনে পয়সার বদলে টাকা দেয় তখন সে দ্বিধাবোধ করে। এছাড়া রুক্মিনীকুমারের নাম লেখা নোট পেয়েও তারা তা খরচ করেনি। এ থেকে তার নির্লোভ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই কথক বলেছেন 'তারা দরিদ্র কিন্তু লোভী নয়'।
5. 'রাধারাণী' রচনাংশের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য 'রাধারাণী' রচনাংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের মূল উপন্যাস 'রাধারাণীর' অংশবিশেষ। সংকলকরা নামকরণটির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করেননি। সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রচয়িতা নামকরণের ক্ষেত্রে নানা পন্থা অবলম্বন করে থাকেন কখনো ঘটনা, কখনো চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনো ব্যঞ্জনাময় নামকরণও করে থাকেন। আমাদের পাঠ্য 'রাধারাণী' রচনাটির নামকরণ মূলত চরিত্রধর্মী নামকরণের দৃষ্টান্ত। এখন আমাদের বিচার্য কেন সংকলকরা এই চরিত্রধর্মী নামকরণকেই। গুরুত্ব দিয়েছেন।
রচনাংশটি পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই যে রাধারাণী নামে এক দশ-এগারো বছরের মেয়ে মাহেশের রথের মেলায় মায়ের পথ্যের জন্য অর্থ উপার্জনার্থে বুনো ফুলের মালা নিয়ে বিক্রি করতে গিয়েছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যায় এবং অন্ধকার নেমে আসে তাই বাড়ির পথে পা বাড়ায়। তখন অসহায় ছোটো মেয়েটিকে এক দয়ালু ভদ্রলোক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তার বুনো ফুলের মালা বেশি দামে কিনে নেয়। রাধারাণী কিন্তু সে ব্যাপারে আপত্তিও জানায়। সেই অচেনা ভদ্রলোক রাধারাণীকে শাড়ি কিনে দেয় এবং নিজের নাম রুক্মিণীকুমার লিখে তাদের বাড়িতে একটা নোটও ছেড়ে যান। নোট পেয়ে রাধারাণী সেই ভদ্রলোককে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু পায়নি। তবে সেটা তারা খরচও করেনি।
পাঠ্যাংশটির সমস্ত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু রাধারাণী। একটি স্বল্পবয়সি মেয়ের দায়িত্ববোধ, সাহস, ভাবনা চিন্তা, নির্লোভ মনও সরল আচরণ পাঠকের মনোযোগ সহজেই আকর্ষণ করে। তাই 'রাধারাণী' নামকরণটি অত্যন্ত সংগত ও সার্থক হয়েছে বলেই মনে হয়।
6. 'তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।-উদ্ধৃতিটির আলোকে রাধারাণী চরিত্র বিচার করো। ৫
উত্তরঃ রাধারাণী' গল্পের প্রধান চরিত্র 'রাধারাণী'। প্রধান চরিত্রের হাতে গল্পের নিয়ন্ত্রণ থাকবে এটাই স্বাভাবিক আর এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দশ-এগারো বছরের এক মেয়ে। পারিবারিক মোকদ্দমার জেরে সর্বস্ব খুইয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে তার সংসার। রাধারাণীর মধ্যে দায়িত্ববোধ, মাতৃভক্তি, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা, সততা, সেবাপরায়ণতার মতো গুণগুলি পাই।
দায়িত্ববোধ ও মাতৃভক্তি: রাধারাণী যেভাবে তার অসুস্থ মায়ের পথ্যের জন্য মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করতে যায় এ থেকে শুধুমাত্র তার দায়িত্ববোধ নয় মাতৃভক্তিরও পরিচয় পাওয়া যায়।
নীতিবোধ: আবার দুর্যোগপূর্ণ রথের মেলাতে রুক্মিণীকুমারের সহৃদয় ব্যবহার পেয়েও তার দেওয়া অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করতে সে দ্বিধান্বিত হয়েছে। রুক্মিণীকুমারের রেখে যাওয়া নোটটিও সে ভাঙায়নি। এথেকে তার নীতিবোধ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। নীতিবোধের পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা বোধও তার মধ্যে আমরা লক্ষ করি যখন সে ভাবে পথপ্রদর্শকের কাছ থেকে মালার দাম নেওয়া ঠিক হবে কি না।
সেবাপরায়ণতা : এই ছোট্ট মেয়েটা যেভাবে বাজার করে, তেল এনে, রান্না করে, মাকে খেতে দিয়ে, ঘরদোর পরিষ্কার করে সংসারকে সুন্দর করে ধরে রেখেছে এবং অসুস্থ মায়ের সেবা কাজে নিযুক্ত ছিল তাতে তার সেবাপরায়ণ রূপটাই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে।
সততা : পাঠকের কাছে রাধারাণীর যে গুণটি সবচেয়ে উজ্জ্বল তা হল তার সততা। শত দারিদ্র্য সত্ত্বেও রুক্মিণীকুমারের নোটটি তারা ভাঙায়নি বরং তাকে খুঁজতে চেয়েছেন ফেরত দেবার জন্য। এইভাবে দেখা যায় দারিদ্র্য মাঝেও তার চরিত্র অমলিন।
7. 'রাধারাণী' রচনাংশ অবলম্বনে রাধারাণীর মায়ের যে পরিচয় পাও, তা নিজের ভাষায় লেখো। ৫
উত্তরঃ 'রাধারাণী' রচনাংশে মুখ্য চরিত্র রাধারাণী হলেও অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে রাধারাণীর মায়ের চরিত্রটিও ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তায় পাঠকের কাছে উজ্জ্বল। লেখক রাধারাণীদের পূর্বাবস্থা ফুটিয়ে তুলতে 'বড়োমানুষের মেয়ে' শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছেন। রুচি-শিক্ষা ও আচরণে রাধারাণীরা যে সম্ভ্রান্ত তা তাদের অক্ষর পরিচয় থেকে জানা যায়। পাঠ্যাংশে প্রতিকূল ও সংঘর্ষময় জীবনের প্রেক্ষিতে রাধারাণীর মায়ের চরিত্রের মহত্তম দিকগুলিই উন্মোচিত হয়েছে।
দৃঢ়চেতা : জ্ঞাতি শত্রুর সঙ্গে মোকদ্দমায় হেরে বাস্তুচ্যুত হয়ে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে, নিঃস্ব হয়ে যাবে জেনেও ন্যায়বিচারের জন্য নিজের অলংকারাদি বিক্রি করে তিনি প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করেছেন। এ থেকে তাঁর চরিত্রের জেদ, দৃঢ়তা ও আপসহীন মানসিকতার পরিচয়। পাওয়া যায়।
আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও পরিশ্রমী: শুধুমাত্র ভাগ্যের দোহাই দিয়ে তিনি জীবনের পথ থেকে সরে আসেননি। তাইতো কুঁড়ে ঘরে বাস করে দৈহিক পরিশ্রম করে কোনোভাবে জীবনযাপন করেছে। নিজের অক্ষর পরিচয় থাকায় রাধারাণীকে সাধ্যানুসারে পড়াশোনা শিখিয়েছেন।
বাস্তববাদী: বাস্তবাদিতা রাধারাণীর মায়ের চরিত্রের অন্যতম গুণ। তাই অপরিচিতের দান গ্রহণ সম্পর্কে মেয়ের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন তাদের মতো লোকের দান গ্রহণ ছাড়া উপায় নেই।
নির্লোভ মানসিকতা : ঘর পরিষ্কারের সময় অপরিচিত নাম লেখা নোট পেয়ে রাধারাণীর মা বুঝে নেয় চোরানোটের অপবাদ থেকে বাঁচাতে এই ব্যবস্থা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই । দান তারা ব্যবহার করেনি। এটি তার নির্লোভ।
এভাবেই মহত্তম মানবিক গুণে পরিপূর্ণ রাধারাণীর মা আপন স্বাতন্ত্র্যে ভাস্বর একটি অনবদ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে।
8. 'রাধারাণী' রচনাংশ অবলম্বনে অজ্ঞাতপরিচয় ভদ্রলোক তথা রুক্মিণীকুমার রায়ের চরিত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। অথবা, 'রাধারাণী' রচনাংশে রাধারাণী রুক্মিণীকুমার রায়ের দ্বারা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল আলোচনা করো।
উত্তরঃ আমাদের পাঠ্য বঙ্কিমের 'রাধারাণী' রচনাংশে অপরিচিত ভদ্রলোক অর্থাৎ রুক্মিণীকুমারের আবির্ভাব ও বিদায় নাটকীয় ব্যঞ্জনায় পরিপূর্ণ। আসলে আত্মপ্রচারবিমুখ ভদ্রলোক প্রচারের আড়ালে থেকেই যেন কাজ করে যেতে চান, অন্তত রচনাংশটি পড়ে তাই মনে হয়। রাধারাণীর সাথে তার পরিচয়ও যেন এক নাটকীয় মুহূর্তের মতো। রাধারাণী মায়ের পথ্যের জন্য অর্থের প্রয়োজনে বুনোফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রির জন্য যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মেলা পণ্ড হয় এবং অন্ধকার নেমে আসে। মালা বিক্রি না হওয়ায় এবং বাড়ি যাওয়ার চিন্তায় রাধারাণী কাঁদতে থাকে। আর ঠিক সে সময়ই রাধারাণীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রুক্মিনীকুমার। তিনি তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন এবং কথা প্রসঙ্গে জেনে নেন তার দুঃখের কাহিনি। তার মালা বিক্রি হয়নি তা শুনে রুক্মিনীকুমার তা কিনে নেন। তাঁর দয়ালু ও পরোপকারী মানসিকতার জন্যই তিনি অন্ধকারের - সুযোগ নিয়ে পয়সার বদলে রাধারাণীকে টাকা দেন এবং যাতে সে টাকা ফেরত দিতে না পারে সে জন্য তিনি নিঃশব্দে ফিরে - যান। আগাম টাকা দিয়ে তাদের বাড়ি দুটো কাপড় পাঠাবার ব্যবস্থাও করেন তিনি। দয়ালু, পরোপকারী, আত্মপ্রচারবিমুখ এ হেন লোকটি যে বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন তা রাধারাণীদের বাড়ি ফেলে যাওয়া নোটে নাম লেখা থেকেই বোঝা যায়। 'রাধারাণী' রচনাংশে রুক্মিণীকুমার নানান সদ্গুণে সমুজ্জ্বল।
9. 'রাধারাণী' রচনাংশ অবলম্বনে সেই সময়কার সামাজিক অবস্থা পরিস্ফুট করতে লেখকের দক্ষতা ও রচনাশৈলীর সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্রের 'রাধারাণী'র উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদটি আমাদের পাঠ্য। একটা বড়ো উপন্যাসের অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অংশের নিরিখে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা বিচার করা সংগত নয়। কেননা তা সামগ্রিক প্রতিফলন নয়। তবে বিন্দুতে সিন্ধুর দর্শন, তেমনি টুকরো টুকরো ঘটনা এবং লিখনরীতির বিভিন্ন কৌশলে ও মোচড়ে আমরা তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে সাহিত্যিক বঙ্কিমের লেখক মানসটিকেও প্রতিবিম্বিত হতে দেখি।
একদা অবস্থাপন্ন রাধারাণীরা জ্ঞাতি শত্রুর সাথে মোকদ্দমা লড়ে তাদের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি হারিয়ে আশ্রয় নেয় কুঁড়ে ঘরে, জীবিকা বলতে শারীরিক পরিশ্রম। এসব সত্ত্বেও প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন তাদের শিক্ষিত ও আপসহীন মানসিকতাকেই ফুটিয়ে তুলেছে। শিক্ষা যে সবযুগেই চেতনা আনে এ তারই আবেদন, রাধারাণীর বিয়ে দিতে না পারার অক্ষমতা প্রসঙ্গটির সাহায্যে লেখক সেকালে বাল্যবিবাহের প্রচলনের কথা বলেছেন। এ ছাড়া দয়ালু রুক্মিনীকুমারের ও অসাধু পদ্মলোচনের উপস্থিতি এবং রথের মেলা সবই বাঙালি সমাজের চিরন্তনতা প্রকাশ করে। বঙ্কিমচন্দ্রকে নীতিবাগীশ বলা হয়। রাধারাণী চরিত্রের দ্বিধা সংশয়কে কেন্দ্র করে তাঁর নৈতিকতার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। সংলাপের ক্ষেত্রে রচনাংশে উনিশ শতকের বাংলার কথ্য ভাষার প্রতিফলন লক্ষিত হয়েছে যা রচনাটিকে আরও প্রাণময় করে তুলেছে। এভাবে ঘটনার প্রকাশে নাটকীয়তার প্রয়োগ, নীতি ও আদর্শবোধের প্রতিষ্ঠা এবং গতিময় ভাষাভঙ্গি ব্যয় হয়ে পড়ে তিনি তাঁর লিখনশৈলীতে অভিনবত্ব, বৈচিত্র্য আর মৌলিকতার সৃষ্টি করেছেন।
No comments:
Post a Comment