নিরুদ্দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Niruddesh Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Wednesday, 23 April 2025

নিরুদ্দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Niruddesh Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

নিরুদ্দেশ গল্পের 
প্রশ্ন উত্তর 




👉(রাধারাণী গল্পের প্রশ্ন উত্তর)


❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও


1. 'দিনটা ভারী বিশ্রী'। দিনটা কেন বিশ্রী?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথকের দিনটা বিশ্রী মনে হয়েছে। কারণ শীতের দিনে বাদলার অস্বস্তিকর পরিবেশ ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং তার ওপর তার মানসিক অবস্থা।


2.  'একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছ?' -আশ্চর্য ব্যাপারটা কী?

উত্তরঃ গল্পকথকের কথায় আশ্চর্য ব্যাপারটি হল, সেদিনের কাগজের সাত-সাতটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন।


3.  সোমেশ কোথায় এসেছিলেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ গল্পকথকের বাড়িতে এসেছিলেন।


4.  খবরের কাগজে কীসের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে খবরের কাগজে সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল।


5.  নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন সম্পর্কে কথকের মন্তব্য কী ছিল?

উত্তরঃ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে গল্পকথকের হাসি পায়, এমনটাই ছিল তাঁর অভিমত।


6.  মা ছেলেকে কোথা থেকে টাকা বার করে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ মা ছেলেকে লুকানো পুঁজি থেকে টাকা বার করে দিয়েছিলেন।


7.  তিনি জেনে শুনে মিথ্যে আর বলতে পারেন না-চুপ করে থাকেন।'-তিনি কে? মিথ্যে কথাটিই বা কী?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে 'তিনি হলেন নিরুদ্দেশ' গল্পের নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির মা। 'ছেলের পীড়াপীড়িতে তিনি তাঁর লুকোনো পুঁজি থেকে ছেলেকে পয়সা দিয়েছিলেন এই মিথ্যেটাই না বলে তিনি চুপ ছিলেন।


8.  'দূর করে দেবো, এবার দূর করে দেবো'-কে, কাকে দূর করে দেবে?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথক-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে বাবা তাঁর পুত্রের বাউন্ডুলেপনাতে বিরক্ত হয়ে তাকে দূর করে দেবার কথা বলেছেন।


9.  গুণধর পুত্র কখন ঘরে প্রবেশ করেছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, বাবার মৌখিক আস্ফালন যখন তীব্র হয়ে উঠছিল, তখনই গুণধর পুত্র ঘরে প্রবেশ করেছিল।


10.  'পিতৃদেবের এ আদেশ তৎক্ষণাৎ পালন করতে উদ্যত হয়।-আদেশটি কী ছিল এবং কে তা পালনে উদ্যত হল?

উত্তরঃ বাবা ছেলেকে ভর্ৎসনা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং এই শুনে অভিমানী ছেলে তৎক্ষণাৎ তা পালনে উদ্যত হয়।


11.  'পরের দিন ভয়ানক কাণ্ড'-'ভয়ানক কান্ডটি কী?

উত্তরঃ  'ভয়ানক' কাণ্ডটি হল সন্তান হারানোর ব্যথায় উপোসী মা শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতির কারণে বিছানায় শয্যাশায়ী। তাঁর বিছানা ছেড়ে ওঠার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।


12.  বাবা গৃহিণীকে ধমক দিয়ে কী বলেছিলেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, বাবা গৃহিণীকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, 'মিছিমিছি প্যানপ্যান কোরো না, এমন ছেলে যাওয়াই ভালো।'


13.  'বাবা কথাটিকে ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দিতে চান'-কী ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ  শীতের রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে ছেলে কীভাবে রাত কাটাবে বা কোনো অঘটন ঘটবে কি না-মায়ের এইসব শঙ্কাকে বাবা ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।


14.  ছেলে কোথায় আছে বলে বাবার ধারণা?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথকের বর্ণনা অনুসারে, ছেলে বন্ধুর বাড়িতেই আছে বলে বাবা মনে করেন।


15.  'ফিরে এসে দেখেন অবস্থা গুরুতর'-গুরুতর অবস্থাটি কী?

উত্তরঃ  গুরুতর অবস্থাটি হল নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে দেখলেন ছেলে বাড়ি ফেরেনি আর মাও শয্যাশায়ী।


16.  'না আর থাকতে দিলে না'-বাবা আর ঘরে না থেকে কোথায় গেলেন?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথক-বর্ণিত কাহিনির জনৈক বাবা তাঁর স্ত্রীর অবস্থা দেখে আর ঘরে না থেকে একেবারে সোজা গিয়ে ওঠেন খবরের কাগজের অফিসে।


17.  'এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভালো'-বক্তা কখন এ কথা বলেছেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা অফিস থেকে ফিরে যখন দেখেন ছেলে ফেরেনি ও শোকগ্রস্ত মাও যেন বিছানা থেকে না ওঠার পণ করেছেন; তখন বিরক্ত হয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।


18. বাবা খবরের কাগজের অফিসে কেন গিয়েছিলেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, বাড়ি থেকে চলে যাওয়া ছেলের জন্য নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দিতে বাবা খবরের কাগজের অফিসে গিয়েছিলেন।


19.  'নিরীহ চেহারার লোকটি হঠাৎ মুখ তুলে ব্যঙ্গের স্বরে বলেন'- নিরীহ চেহারার লোকটি কে? তিনি কাকে কথাগুলো বলেছেন?

উত্তরঃ  নিরীহ চেহারার লোকটি হলেন সংবাদপত্রের কর্মচারী। তিনি নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের সন্ধানরত এক পিতাকে কথাগুলি বলেছিলেন।


20.  কী দেবেন-চেহারার বর্ণনা, না ফিরে আসার অনুরোধ'-কে, কাকে এ কথা বলেছিলেন?

উত্তরঃ  খবরের কাগজের অফিসের এক ভদ্রলোক নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।


21.  'কী দেবেন-চেহারার বর্ণনা, না ফিরে আসার অনুরোধ'-জনৈক বাবা বিজ্ঞাপনে কোন্টি দিতে চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে কথক-বর্ণিত কাহিনির জনৈক বাবা বিজ্ঞাপনে চেহারার বর্ণনা না দিয়ে ছেলের ফিরে আসার অনুরোধ দিতে চেয়েছিলেন। কারণ ছেলেটির মা খুবই কান্নাকাটি করছিল।


22.  বাবা আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন কেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, কাগজের অফিসের লোকেরা ভালোভাবে ছেলের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে দেবেন বলায়, বাবা আশ্বস্ত হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন।


23. বাড়ি ফিরে জনৈক বাবা কী দেখেছিলেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, খবরের কাগজের অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বাবা দেখেন তাঁর ছেলে ফিরে এসেছে।


24. ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছিল কেন?

উত্তরঃ  ছেলের মতে, গোটাকতক বই নিয়ে যাবার জন্য সে বাড়ি ফিরে এসেছিল।


25.  'এবার মা-র কুদ্ধস্বর শোনা যায়'-এবার বলতে কোন্ সময়কে বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথক বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরে এসে তার কিছু বইপত্র নিয়ে পুনরায় বাড়ি ছেড়ে যাবার কথা বলে, এখানে সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে।


26.  'অমনি 'কুলাঙ্গার তুই তো হয়েছিস। -'কুলাঙ্গার' শব্দের অর্থ কী? মা এমন কথা ছেলেকে বলেছিলেন কেন?

উত্তরঃ  বংশের মর্যাদা নষ্টকারীকে 'কুলাঙ্গার' বলা হয়। ছেলেটি বাবার সামান্য বকুনি খেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, যা বংশের মর্যাদাহানিকর, তাই মা এমন কথা বলেছেন।


27.  ছেলে ফিরে আসার পর মা, বাবাকে কী বলেছিলেন?

উত্তরঃ নিরুদ্দিষ্ট ছেলে ফিরে আসলে মা ছেলেকে বকলে বাবা বারণ করেন। তখন মা-বাবাকে বলেন, অত আদর ভালো নয়। একটু বকুনি খেয়েছে বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে এত স্পর্ধা ভালো নয়।


28.  তুমি থামো, এত আদর ভালো নয়'-এ কথা কে, কাকে বলেছিলেন?

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত 'নিরুদ্দেশ' গল্পের নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন কথাপ্রসঙ্গে মা ছেলেটির বাবাকে এ কথা বলেছিলেন।


29.  'অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস এই'-ইতিহাসটি কী?

উত্তরঃ  ইতিহাসটি হল বাবার বকুনি খেয়ে ছেলে ঘর ছাড়লে বাবা-মার মনোমালিন্য হয়। নিরুপায় বাবা কাগজে বিজ্ঞাপন দেয় আর তা প্রকাশিত হবার আগেই ছেলে ফিরে আসে।


30. 'এই বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজিডি থাকে...'- 'সত্যকার ট্র্যাজেডিটি কী?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথকের বন্ধু সোমেশের কথিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট, জমিদার বংশের একমাত্র সন্তান শোভন বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার দুবছর পর যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন তার বাড়ির লোক চিনতে পারেনি। সত্যিকারের ট্রাজেডি এটাই।


31.  সোমেশ যে গল্পটি বলেছিলেন তার মূল কথাটি কী?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথকের বন্ধু সোমেশ যে গল্পটি বলেছিলেন, তা শোভন নামে নিরুদ্দিষ্ট একটি ছেলের ফিরে আসার ভয়ানক ট্র্যাজিক কাহিনি।


32.  শোভনকে কে জানত?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে কথকের বন্ধু সোমেশ চিনত শোভনকে।


33. 'পুরানো খবরের কাগজের ফাইল যদি উলটে দেখো'-পুরোনো খবরের কাগজের ফাইল উলটে দেখলে কী দেখা যাবে?

উত্তরঃ সোমেশের বর্ণনানুসারে পুরোনো খবরের কাগজের ফাইল দেখলে দেখা যাবে বহু বছর আগে একটি প্রধান সংবাদপত্রের পাতায় দিনের পর দিন একটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল।


34.  শোভনের ঘরে ফেরার বিজ্ঞাপনে প্রথমে কার পক্ষ থেকে কাতর অনুরোধ আসে?

উত্তরঃ শোভনের ঘরে ফেরার বিজ্ঞাপনে প্রথমে মায়ের কাছ থেকে কাতর অনুরোধ আসে।


35.  'খবরের কাগজের পাতায় যেন মিলিয়ে যেতেও দেখা গেল'-কী মিলিয়ে যেতে দেখা গেল?

উত্তরঃ নিরুদ্দিষ্ট ছেলে ফিরে আসার জন্য শোভনের মায়ের কাতর অনুরোধ হতাশ দীর্ঘশ্বাসের মতো খবরের কাগজের পাতায় মিলিয়ে যেতে লাগল।


36. বিজ্ঞাপন কখন হাহাকার হয়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, নিরুদ্দিষ্ট শোভনের জন্য ক্রমাগত প্রকাশিত হয়ে চলা বিজ্ঞাপন আর্তনাদ-কাতরতার স্তর। পেরিয়ে ক্রমে বাবা-মায়ের হতাশার হাহাকারে পরিণত হয়েছিল।


37.  শোভন যখন নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তখন তার বয়স কত ছিল এবং পরিচয়চিহ্ন বলতে কী ছিল?

উত্তরঃ  সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, শোভন যখন নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তখন তার বয়স ছিল যোলো-সতেরো এবং পরিচয়চিহ্ন বলতে ছিল ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটি বড়ো জড়ুল।


38.  বিজ্ঞাপনে শোভনের পরিচয়চিহ্ন কী দেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুযায়ী বিজ্ঞাপনে শোভনের পরিচয়চিহ্ন ছিল ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটি বড়ো জড়ুল।


39. শোভন কীভাবে মুক্তির আদ পেয়েছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট ছেলে শোভন বাড়ির বাইরের হাজারো দুঃখ-অসুবিধাতেও হয়রান হয়ে পড়েনি, বরং তার মধ্যেই সে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল।


40.  'উদাসীন মনও বিচলিত হয়ে উঠল-তার মন কখন উদাসীন ও বিচলিত হয়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ নিরুদ্দিষ্ট শোভনের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞাপন যেদিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, সেদিন থেকেই তার উদাসীন মনও বিচলিত হয়ে উঠতে শুরু করে।


41.  শোভনের বাবার দুর্বলতা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন থেকেই শোভনের বাবার হৃদয়ের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল।


42. শোভনের উদ্দেশ্যে শেষ বিজ্ঞাপনটি কী

উত্তরঃ  নিরুদ্দিষ্ট শোভনের উদ্দেশ্যে শেষ বিজ্ঞাপনটি ছিল-"শোভন, তোমার মার সাথে আর তোমার বুঝি দেখা হল না। তিনি শুধু তোমার নামই করছেন এখনো।”


43.  কত বছর পর শোভন তার দেশে হাজির হয়?

উত্তরঃ সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, দুই বছর পর নিরুদ্দিষ্ট শোভন তার দেশে হাজির হয়।


44. বাড়ি ফিরে শোভন কী দেখেছিল?

উত্তর 'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে নিরুদ্দিষ্ট শোভন বাড়ি ফিরে দেখেছিল, প্রকৃত শোভন হিসেবে তাঁকে কেউ মেনে নিতে চাইছে না।


45.  শোভন বাড়ি ঢোকার সময় প্রথমে কার কাছে বাধা পায়?

উত্তরঃ  নিরুদ্দিষ্ট শোভন বাড়ি ঢোকার সময় প্রথমে > নায়েবমশায়ের কাছে বাধা পায়।


46. 'দু-বছরে সেখানে কিছুকিছু পরিবর্তন হয়েছে-সেখানে কী কী পরিবর্তন হয়েছে?

উত্তরঃ  পুরোনো সরকারের বদলে নতুন সরকার এসেছে। এ ছাড়া সেখানে নতুন দুটি লোকও নিয়োগ করা হয়েছে। শোভনের চোখে বাড়ি ফিরে এইসব পরিবর্তন ধরা পড়েছিল।


47.  বৃদ্ধ খাজাঞ্চিমশাইকে দেখে সে যেন আশ্বস্ত হলো'-কে আশ্বস্ত হল এবং কেন?

উত্তরঃ  বৃদ্ধ খাজাঞ্চিমশাইকে দেখে নিরুদ্দিষ্ট শোভন আশ্বস্ত হয়েছিল। কারণ তার মনে হয়েছিল, তাকে অন্যরা চিনতে না পারলেও খাজাঞ্চিমশাই নিশ্চয় চিনবেন।


48. শোভনের পরিচয় নিয়ে তার বাড়িতে কত জন লোক এসেছিল?

উত্তরঃ  সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, নিরুদ্দিষ্ট শোভনের পরিচয় নিয়ে তার আগে আরও দুজন লোক এসেছিল বাড়িতে।


49. কতদিন আগে এবং কীভাবে শোভন মারা গেছে বলে নায়েবমশাই জানিয়েছিলেন?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, সাতদিন আগে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে নিরুদ্দিষ্ট শোভন মারা গেছে বলে নায়েবমশাই জানিয়েছেন।


50.  'শোভন এই অবস্থাতে না হেসে পারলে না'-শোভনের হাসির কারণ কী?

উত্তরঃ  সোমেশ-বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট শোভন দু-বছর পর বাড়ি ফিরে যখন তাদের নায়েবের কাছে নিজের মৃত্যুসংবাদ - শুনল, তখন সে না হেসে পারল না।


51.  শোভনের বাবার চেহারার সঙ্গে কীসের সাদৃশ্য দেখিয়েছেন সোমেশ?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, শোভনের বাবার চেহারার সঙ্গে ঝড়ে ভেঙে পড়া একটি গাছের সাদৃশ্য দেখিয়েছেন এই কাহিনির কথক সোমেশ।


52.  'নায়েব ও কর্মচারীরা ব্যাপারটা বুঝে যখন তার পিছু নিল'-পিছু নেওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ  সোমেশের কাহিনি অনুসারে দুবছর পর শোভন বাড়ি ফিরে বাবাকে দেখে তার কাছে যাবার উপক্রম করায় নায়েব ও কর্মচারীরা তার পিছু নিয়েছিল।


53. 'বৃদ্ধ 'খলিতপদে এক পা এগিয়ে আবার থমকে গেলেন'-এর কারণ কী?

উত্তরঃ  শোভন দীর্ঘ দুবছর বাদে বাড়িতে ফিরে পুত্রশোকে বিপর্যস্ত বাবার কাছে তাকে চিনতে পারছেন কি না জানতে চাইলে প্রবল ভাবাবেগে বৃদ্ধ মানুষটি এমন আচরণ করেছিলেন।


54.  শোভনকে কোন কাজ করার কথা বলেছিলেন নায়েবমশাই?

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, জমিদারবাবুর অনুরোধে টাকার বিনিময়ে শোভনকে নিজের মায়ের কাছে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলের হয়ে অভিনয় করার কথা বলেছিলেন নায়েবমশাই।


55.  কাকে এবং কেন ছেলের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়নি?

উত্তরঃ  সোমেশ-বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, বাড়ির কর্ত্রী অসুস্থ, তাই তাঁকে ছেলের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়নি।


56.  বাড়ির কর্ত্রী তথা জমিদারের স্ত্রী কেন শোভনকে দেখে নিজের ছেলে বলে মনে করবেন?

উত্তরঃ বাড়ির কর্ত্রী তথা বৃদ্ধা জমিদারগিন্নি শোভনকে নিজের ছেলে ভাববেন, কেননা শোভনের চেহারার সঙ্গে তার ছেলের চেহারায় অনেকটাই মিল আছে।


57. নায়েবমশাই নোটের তাড়াটা কার হাতে। গুঁজে দিয়েছিলেন এবং কেন?

উত্তরঃ  নায়েবমশাই শোভনের হাতে নোটের তাড়াটা গুঁজে দিয়েছিলেন কারণ অসুস্থ মাকে শোভনের মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। আর তাকে শোভন সেজে মায়ের কাছে অভিনয়ের সাম্মানিক হিসেবে নোটের তাড়া দেওয়া হয়েছিল।


58. সোমেশের সঙ্গে শোভনের কি কোনো সাদৃশ্য ছিল?

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে সোমেশ-বর্ণিত কাহিনির কেন্দ্রীয় - চরিত্র, শোভনের সঙ্গে সাদৃশ্য বলতে উভয়েরই ডান কানের কাছে ঘাড়ের নীচে জড়ুল ছিল।


❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1.  'একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছ'-বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি কে? আশ্চর্য ব্যাপারটি কী? ১+২=৩

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথক হলেন প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা। এখানে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি হলেন কথকের। বন্ধু সোমেশ।

কথকের মতে আশ্চর্য ব্যাপারটি হল, খবরের কাগজে একইদিনে একসঙ্গে সাত-সাতটা নিরুদ্দেশ-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল।


2.  'নিরুদ্দেশ' গল্পের শুরুতেই যে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ গল্পকার দিয়েছেন, তার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। অথবা, 'বাইরের অসাড়তা যেন আমাদের মনের ওপরও চাপিয়া ধরিয়াছে-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পটির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে এক শীতের দিনের অস্বস্তিকর বাদলায়। বাইরে যদিও বৃষ্টি হচ্ছিল না, তবু কথকের বাইরের পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ অস্বচ্ছ ও মলিন বলে মনে হচ্ছিল। দিনটি তাঁর অত্যন্ত বিশ্রী ও অস্বস্তিকর বলে বোধ হয়েছে। তাঁর বন্ধু সোমেশও ছিল নিরুত্তাপ। খবরের কাগজের সাত-সাতটা নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন শুনেও সোমেশ ছিল নির্লিপ্ত। কথক ঘর ও বাইরের এই নির্লিপ্ততাকে বোঝাতেই উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।


3. নিরুদ্দেশ-এর এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে কিন্তু আমার হাসি পায়'-কথকের এমন বলার কারণ কী? তাঁর এই 'বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে' হাসি পায় কেন? ২ + ১ = ৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পটির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে এক শীতের দিনের অস্বস্তিকর বাদলায়। বাইরে যদিও বৃষ্টি হচ্ছে না, তবু কথকের বাইরের পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ অস্বচ্ছ ও মলিন বলে মনে হয়। দিনটি তার অত্যন্ত বিশ্রী ও অস্বস্তিকর নি বলে বোধ হয়। বন্ধু সোমেশও ছিল নিরুত্তাপ। খবরের কাগজের সাত-সাতটা নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন শুনেও সোমেশ ছিল নির্লিপ্ত। কথক ঘরও বাইরের এই নির্লিপ্ততা ভাঙার জন্য জোর করেই উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন। কথকের এই বিজ্ঞাপন দেখে হাসি পায় কারণ-অধিকাংশ বাবা-মা যখন নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দেন তখন তা প্রকাশিত হওয়ার আগে ছেলে ফিরে আসে তাই।


4. 'তিনি জেনে শুনে মিথ্যে আর বলতে পারেন না'-কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর এমন অবস্থা কেন হয়েছে লেখো। ১+২=৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথক বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির মায়ের কথা বলা হয়েছে।

মায়েরাই প্রধানত ছেলেদের শখ-আহ্লাদ মেটানোর জন্য লুকোনো পুঁজি থেকে টাকা বের করে দেন। এ গল্পেও এমন একটি ছেলেকে তার মা থিয়েটার দেখতে যাবার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ছেলে দেরি করে ফেরায় বাবার প্রচণ্ড শাসনের মুখে মাকেও পড়তে হয়। তবুও মা চুপ থাকেন। কারণ তিনি সবই জানেন, তাঁর আর মিথ্যে কথা বলা হয়ে ওঠে না।


5.  'এই মৌখিক আস্ফালনেই হয়তো ব্যাপারটা শেষ হতে পারত'-কার 'মৌখিক আস্ফালন'টি কী ছিল? এরপর কী ঘটেছিল? ১+২=৩

উত্তরঃ  'মৌখিক আস্ফালন' বলতে বোঝায় মুখে ঔদ্ধত্য প্রকাশ। এক্ষেত্রে কথকের বর্ণিত কাহিনিতে একজন বাবা অনেক রাত পর্যন্ত ছেলে বাড়ি না ফেরায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং ছেলেকে শাসনের নামে এই আস্ফালন শুরু করেন।

ফেল করা ছাত্রটির রাত করে বাড়ি ফেরা এবং ছেলের পড়াশোনার জন্য অকারণ অর্থ ব্যয়, বাড়ি থেকে বের করে দেবার কথা মৌখিক আস্ফালনে ছিলই। কিন্তু সেই সময় ছেলে বাড়িতে ফিরলে বাবা তাতে লাগাম টানতে ব্যর্থ হয়ে সরাসরি ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। 'অভিমানী' ছেলেও তৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।


6. 'কিন্তু ঠিক সেই সময়ে গুণধর পুত্রের প্রবেশ'-কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে? ৩

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা 'নিরুদ্দেশ' গল্পে, কথক-বর্ণিত গল্পে জনৈক বাবা, অনেক রাত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় সবে যখন মৌখিক আস্ফালন সবে শুরু করেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে ছেলে ঘরে প্রবেশ করে। প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে এই সময়ের কথাই বলা হয়েছে।


7. 'এ অশান্তির চেয়ে বনবাস ভালো।-উক্তিটি কার? কোন্ অশান্তির কথা বলা হয়েছে? ১ + ২ = ৩

উত্তরঃ  নিরুদ্দেশ গল্পে উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন কথকের বর্ণিত কাহিনির অন্তর্গত নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবার। ছেলে নিরুদ্দেশ, ফলে মা শোকে মুহ্যমান হয়ে জল পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। মায়ের অবস্থা ক্রমাগত অবনতির দিকে। বাবা নিজেকে মনে মনে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ঘুমোতে পর্যন্ত পারছেন না। মায়ের অবস্থা সবাই প্রত্যক্ষ করতে পারলেও কথার ভেতরের টানাপোড়েনটা অগোচরেই থেকে যায়। তাই তিনি নিজেই বলে ওঠেন, এই অশান্তির থেকে বনবাস ভালো।


8. 'খবরের কাগজের অফিসের ব্যাপারটা বড় জটিল'-ভাবনাটি কার? তার এমন ভাবনার কারণ কী? ১ + ২ = ৩

উত্তরঃ  ভাবনাটি হল প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথক বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের পিতার খবরের কাগজে নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের সন্ধানে বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছিলেন কেননা তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। অনেক খোঁজ খবরের পর তিনি একটা কাগজের অফিস খুঁজে পেলেও সেখানকার কর্তব্য কী তা বুঝতে না পেরে এক ভদ্রলোককে বলে বসেন, আমি একটা খবর  বের করতে চাই। ভদ্রলোক তার উত্তরে একটু ঠাট্টা করেন- এরকম নানান অভিজ্ঞতা অর্জনের পর কাজটি সম্পন্ন হয়। তাই তার এমন ভাবনা।


9.  'আমরা কি এতদিন রামযাত্রা বার করেছি উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পের নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে দেখেন স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর এবং ছেলেও ফেরেনি। তাই নিরুপায় বাবা বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে কাগজের অফিসে হাজির হন। সেখানে আপাতনিরীহ চেহারার মানুষকে জানান তিনি একটা খবর বের করতে চান, তা শুনে সেই আপাতনিরীহ মানুষটি তিতিবিরক্ত হয়ে বিদ্রুপের সুরে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন এবং বলেন তাদের প্রকাশিত খবরগুলি বুঝি ভদ্রলোকের পছন্দ হচ্ছে না।


10. এবার মা-র ক্রুদ্ধস্বর শোনা যায়'—প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৩

উত্তরঃ  উদ্ধৃতাংশটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প থেকে গৃহীত। গল্পের কথক বর্ণিত কাহিনিতে নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটি তার সম্পর্কে বিজ্ঞাপন বেরোনোর আগেই ঘরে ফিরে আসে। তার এই ফিরে আসা ছিল পাকাপাকিভাবে চলে যাবার আগে গোটাকতক বইপত্র নিয়ে যাবার জন্য। মা তার এই কথা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং বলেন যে, সে বাড়ি ছেড়ে যাবার মতো কুলাঙ্গার হয়েছে বইকি বকুনি তো সব ছেলেই খায়। সে তো একেবারে পির নয়। ছেলের কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য বাবার এ চিন্তাগ্রস্ত চেহারাটা দেখার কথাও বলেন।


11. এই বিজ্ঞাপনের পিছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজিডি থাকে'-উক্তিটি কার? সত্যিকারের ট্র্যাজেডিটি কী? ১+২=৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটির বস্তা গল্প কথকের বন্ধু সোমেশ। নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন নিয়ে কথকের তির্যক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বন্ধু সোমেশ জানান অনেক ক্ষেত্রেই এমন বিজ্ঞাপনের পিছনে সত্যিকারের কিছু ট্র্যাজেডিও থাকে। তার পরিচিত শোভন নামে একটি ছেলের জীবনে এমনই এক ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি নেমে এসেছিল। দুবছর নিরুদ্দিষ্ট থাকার পর শোভন যখন বাড়ি ফিরে আসে এবং দেখে কেউ তাকে চিনতে পারছে না। অবশেষে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের কাছে সত্যিকারের ছেলে হয়ে টাকার বিনিময়ে তাকে অভিনয় করতে হয়েছিল।


12. শোনো বলছি।'-বক্তা কে? বক্তা কী বলতে চেয়েছেন? ১+২=৩

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প থেকে গৃহীত। এক্ষেত্রে বস্তা হলেন গল্প কথকের বন্ধু 'সোমেশ'। শীতের এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে যখন পৃথিবী বিবর্ণ মৃতদেহের মতো অসাড়। কথকের বন্ধু সোমেশ নির্লিপ্ত। ঘর ও বাইরে এই স্তব্ধতা ভাঙতে কথক যখন সেদিনকার সংবাদপত্রে সাত-সাতটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বন্ধু সোমেশের কাছে বলে অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস একই রকম। সোমেশ তাতে একমত না হয়ে ফিরে আসার এক ভয়ানক ট্র্যাজেডির কথা শুরুর প্রসঙ্গে কথাটির অবতারণা করেছে।


13.  সে বিজ্ঞাপন নয় সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস'-কোন্ প্রসঙ্গে কার এই উক্তি? তা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন নয় কেন? ১+২=৩

উত্তরঃ  উদ্ধৃত উক্তিটি 'নিরুদ্দেশ' গল্পের এক ট্র্যাজিক ঘটনার বর্ণনাকারী কথকের বন্ধু সোমেশের। সোমেশের মনে পড়ে যায় খবরের কাগজে প্রকাশিত এক ধারাবাহিক বিজ্ঞাপনের কথা, যেখানে প্রথমে নিরুদ্দিষ্ট ছেলের - প্রতি মায়ের ছিল কাতর আকুতি, অনুরোধ ও মিনতি; তারপর - ব্যর্থতা ও হতাশার দীর্ঘশ্বাস। এগুলি পর প্রথমে বাবার গম্ভীর - স্বর; পরে কম্পিত-বীর-শান্ত কণ্ঠস্বর, ক্রমে যা কাতরক্লান্ত ও দুর্বল আর্তনাদে পরিণত হয়। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পরিবারে বিপর্যয় যে কত করুণার ও দুঃখের হয় তার প্রমাণ এই বিজ্ঞাপনগুলি। সেজন্যই বস্তা বলেন এটি শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন নয়, এটি একটি পরিবারের বিপর্যয়ের ইতিহাসও বটে।


14.  'অস্পষ্ট আড়ষ্ট ভাষা, কিন্তু তার ভিতর দিয়ে কী ব্যাকুলতা যে প্রকাশ পেয়েছে-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।  অথবা, 'কান পাতলে কাতর আর্তনাদ যাবে'-উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দাও। শোনা ৩

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথকের বন্ধু সোমেশ পুরোনো খবরের কাগজে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করেন। বিজ্ঞাপনটি ছিল একটি নিরুদ্দিষ্ট ছেলের প্রতি বাবা ও মায়ের ব্যাকুল আহ্বান। বিজ্ঞাপনটিতে প্রথম দিকে মায়ের আর্তি, আকুতি ও মিনতি প্রকাশ পেত। তারপর এর সঙ্গে যুক্ত হয় মায়ের হতাশার দীর্ঘশ্বাস এবং হাহাকার। এগুলি মিলিয়ে যেতে না যেতেই বাবার গম্ভীর স্বর ক্রমে কম্পিত কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত হয়। শেষে তাও কাতর, ক্লান্ত ও দুর্বল আর্তনাদে পরিণত হয়। সোমেশের মতে, বিজ্ঞাপনের আড়ষ্ট ভাষায় মা-বাবার হৃদয়ের ব্যাকুলতা ও শূন্যতার যে বিপর্যস্ত আর্তনাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা না পড়লে বোঝা যায় না। প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে এই সত্যই মূর্ত হয়ে উঠেছে।


15. 'তারপর একেবারে গেল বদলে। ...সাধারণ একটি বিজ্ঞপ্তি মাত্র।' -উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করো।  অথবা, 'পুরস্কারের পরিমাণ ক্রমশই বাড়তে লাগল'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট শোভনকে নিয়ে কাগজে ধারাবাহিক বিজ্ঞাপন বেরোতে থাকে। প্রথমে ছেলের প্রতি মায়ের আর্তি, আকুতি ও অনুরোধ থাকত। তারপর বাবার কম্পিত কণ্ঠস্বর পরিণত হল কাতর আর্তনাদে। কিন্তু এইসব আবেদন যখন ব্যর্থ হয় তখন তা শুধুমাত্র বিজ্ঞপ্তিতে পরিণত হয়। তাতে থাকে ছেলেটির চেহারা, বয়স এবং বিশেষ চিহ্ন হিসেবে ঘাড়ের দিকে ডান কানের কাছে একটি বড়ো জড়ুলের কথা। এক বছর ধরে নিখোঁজ। জীবিত বা মৃত জানাতে পারলেই পুরস্কার। এভাবে দিন যায়, উপযুক্ত সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত পুরস্কারের পরিমাণ বাড়তেই থাকে।


16. শোভনকে আমি জানতাম-উক্তিটি কার? শোভন কী ধরনের ছেলে ছিল? ১+২=৩

অথবা, 'তার ভেতরেই সে পেয়েছে মুক্তির স্বাদ-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ  উদ্ধৃত উক্তিটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথকের বন্ধু 'সোমেশের'। পৃথিবী নামক সংসারে আশ্চর্য এক নিরাসক্ত মন নিয়ে শোভন এসেছিল। আর পাঁচটা ছেলের মতো কোনো অভিমানের বশবর্তী, সে বাড়ি ছাড়েনি। আসলে সে ছিল তৈলাক্ত হৃদয়ের। সে যে-কোনো ছুতোয় বাড়ি ছাড়তে পারত। তার হৃদয় এমন তৈলাক্ত অর্থাৎ পিচ্ছিল হওয়ায় বাবা-মার স্নেহও তাকে ধরে রাখতে পারেনি। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনগুলো যে সে দেখেনি তা নয়। আসলে সেগুলো সে অনায়াসে ভুলে যায়। বাড়ির বাইরে সুখ-দুঃখের মধ্যেও সে খুঁজে পায় মুক্তির স্বাদ।


17.  'সে কথাটা আগে বলিনি-কোন্ কথাটা আগে বলেননি? তার বর্তমান অবস্থা কী হয়েছিল?

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথকের বন্ধু সোমেশ তাঁর বর্ণিত কাহিনিতে নিরুদ্দিষ্ট শোভনের পারিবারিক অবস্থার কথা আগে বলেননি। শোভন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে ছিল না। তাদের অবস্থা পারিবারিকভাবে সম্পন্ন বা সচ্ছল বললেও পুরোটা বলা হয় না। শোভনদের প্রাচীন জমিদারি বহু দুর্দিনের ভেতর দিয়ে যাত্রা করেও তেমন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি। সুতরাং যথেষ্ট বিত্তশালী এক পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী ছিল শোভন।

বিগত দু-বছরের নিরুদ্দিষ্ট জীবনের দুঃখ-দুর্দশা গায়ে না মাখলেও, শোভনের ওপর তার ছাপ পড়েছিল। দুই বছরে সে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু তাকে বাড়ির কেউ চিনতে পারবে না, এমন দুর্ভাবনা তার ছিল না।


18. 'নায়েবমশাই-এর গলার স্বর কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হলো'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। অথবা , 'আসুন, বারবাড়িতে একটু বিশ্রাম করুন'-এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট শোভন দুবছর পরে বাড়ি ফিরে বুঝতে পারেন তাদের জমিদারির কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারছে না। সে বাড়িতে ঢুকতে চাইলে পুরোনো নায়েব তাকে বাধা দেন এবং বারবাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেন। সেখানে খাজাঞ্চি ও নায়েবের কথাবার্তা এবং ব্যবহার তার অস্বাভাবিক ঠেকে। আসলে সে টের পায়নি যে পুরস্কারের লোভে ইতিপূর্বে শোভন সেজে তার বাড়িতে দুজন এসেছিল এবং সাতদিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে শোভনের মৃত্যুসংবাদ যে তাদের কাছে তাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তাই নায়েবের কণ্ঠস্বরে এমন অবিশ্বাস প্রাধান্য পেয়েছিল।


19.  'হঠাৎ শোভনের কাছে সমস্ত ব্যাপারটা ভয়ংকরভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠল-কোন্ ব্যাপার শোভনের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, নিরুদ্দিষ্ট শোভন বাড়ি ফিরে আসার পরে তাদের জমিদারির কর্মচারীরা কেউ তাকে চিনতে পারেনি। প্রথমে শোভন সেটি বুঝতে পারেনি। পরে যখন শোভন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করবার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে বাড়ির ভিতরে যেতে চায়, তখনই নায়েবমশাই বাধা দিয়ে বলেন, মিছিমিছি চেষ্টা করে লাভ নেই। তাতে ফল হবে না। একথা শোনার পরই শোভনের কাছে হঠাৎ সমস্ত ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শোভন নিশ্চিত হয় বাড়ির কর্মচারীরা কেউই তাকে চিনতে পারেনি।


20.  'আপনি একটু দাঁড়ান, আমি আসছি'-বক্তা কে? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ কী ছিল? ১+২ = ৩ অথবা, 'দেখুন, কিছু মনে করবেন না'-বক্তা কে? তিনি এমন মন্তব্য করেছেন কেন? ৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে দুবছর পরে বাড়ি ফেরা নিরুদ্দিষ্ট শোভনকে উদ্দেশ্য করে নায়েবমশাই এমন উক্তি করেছিলেন। নিরুদ্দিষ্ট শোভন দীর্ঘ দুবছর পর বাড়ি ফিরলেও তার বাড়ির পূর্বপরিচিত কর্মচারীরা কেউই তাকে চিনতে পারেনি এমনকি নায়েবমশাই খাজাঞ্চিবাবু পর্যন্ত। তবে এর পিছনে সংগত কারণও ছিল। ইতিপূর্বে পুরস্কারের লোভে দুজন শোভন ঘুরে গেছে। তাই তারা একটু বেশি সতর্ক এবং ভেতরে যেতে দেয়নি। বাইরে অপেক্ষা করতে বলে তার একটা পুরোনো ফটো নিয়ে শোভনকে মিলিয়ে দেখে কিছু মিল পেলেও সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হতে পেরে তাকে চলে যাবার অনুরোধ জানায়।


21. শোভন এই অবস্থাতে না হেসে পারলে না'-শোভনের এই হাসির কারণ কী? এই হাসি ও বিদ্রুপ উপেক্ষা করে নায়েবমশাই কী বলেছিলেন? ১+২ = ৩

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট শোভন বাড়ি ফিরে নায়েবমশাইয়ের মুখে নিজের মৃত্যুর খবর পায়। সশরীরে জীবিত অবস্থায় নিজের মৃত্যুসংবাদ শুনলে হাসি আসাই স্বাভাবিক। তাই এত বড়ো মিথ্যার সম্মুখীন হয়ে, তা সত্য করতে না পেরে শোভন অবজ্ঞা ও বিদ্রুপের হাসি হাসতে বাধ্য হয়েছিল।

শোভনের মৃত্যু সম্পর্কে নিঃসন্দেহ নায়েবমশাই, শোভনের বিদ্রুপের হাসিকে উপেক্ষা করে বলেন, রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে অপঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও নাম-ধাম-পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে সব কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের বিবরণের সঙ্গেও তাঁদের বর্ণনা মিলে গেছে।


22. মানুষের সঙ্গে ঝড়ে ভাঙা গাছের যে এতদূর সাদৃশ্য হতে পারে- উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখা করো। ৩ 'অথবা, 'সাহিত্যের উপমা পড়েও কখনও তার মনে হয়নি'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। আথবা, 'তার চলার গতিতে পর্যন্ত যেন ভয়ংকর দুর্ঘটনার পরিচয় আছে'-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট শোভন দুবছর পরে ফিরে এসে বুঝতে পারে বাড়ির সকলের কাছে সে আজ অচেনা। এমনকি সকলেই নিশ্চিত গাড়ি চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ঠিক সেই সময় শোভন মুমূর্ষু স্ত্রীর অসহনীয় দুর্দশা এবং নিরুদ্দিষ্ট ছেলের মৃত্যু মতো ভয়াবহ পারিবারিক বিপর্যয় একজন মানুষকে কতটা বিধ্বস্ত করে তা তার বাবাকে দেখে বুঝতে পারে। সে ঝড়ে ভাঙা গাছের সঙ্গে বাবার সাদৃশ্য খুঁজে পায়। সাহিত্যের উপমায় অনেক সময় যা বোঝা যায় না বিপর্যস্ত বাবাকে দেখে সে তা বুঝতে পারে। মানুষটির চলার গতিতেও যেন এক ভয়ানক দুর্ঘটনার পরিচয় মেলে।


23.  'সকলে কিছু বুঝে ওঠবার আগেই শোভন দৌড়ে ঘর থেকে বার হয়ে গেল।-শোভন দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল কেন? ৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প অনুসারে, বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না পেরে নিরুদ্দিষ্ট শোভন বাইরের ঘরে নায়েবমশাই ও অন্য কর্মচারীদের মাঝখানে বসেছিল। প্রত্যেকের চোখে-মুখে অবিশ্বাস দেখে সে বুঝেছিল, তাকে কেউ চিনতে পারছে না। এরপর নায়েবমশাই হতাশভাবে শোভনকে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে তার মৃত্যুসংবাদের কথা জানিয়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তটিতেই বাবাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখে শোভন। কোনো উপায় না দেখে বাবার কাছেই দৌড়ে পৌঁছাতে চায় সে। বাবার সঙ্গে দেখা করবার জন্যই অসহায় শোভন শেষ আশা বুকে নিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।


24. শোভনকে একটা কাজ করতে হবে'- শোভনকে কী কাজ করতে বলা হয়েছিল?  অথবা, 'তার এতে কোনো ক্ষতি নেই'-উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।  আথবা, 'কন্ঠস্বরে তাঁর মিনতি'-'মিনতি'টি কী ছিল বিশ্লেষণ করো। ৩

উত্তরঃ  'নিরুদ্দেশ' গল্পে শোভন যখন দুবছর পরে বাড়ি ফিরে আসে তখন কেউ তাকে চিনতেই পারে না। বিস্মিত ব্যাকুল শোভন যখন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না তখন নায়েব তার কাছে কাতর কণ্ঠে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসেন। প্রস্তাবটি এই যে, তার বাবা অর্থাৎ জমিদার বাবুর কাতর অনুরোধ, শোভনকে মৃত্যুপথ যাত্রী মায়ের কাছে গিয়ে হারানো ছেলের অভিনয় করে তাকে শেষ সান্ত্বনাটুকু দিতে হবে। কারণ মুমুর্ষু মানুষকে তারা মৃত্যুসংবাদ শোনাতে চান না। তাই টাকার বিনিময়ে একটিবার অন্তত তাকে শোভন সাজতে হবে। তাতে তার লাভ বই ক্ষতি হবে না। এ কাজের কথাই শোভনকে বলা হয়েছিল।


❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1. 'নিরুদ্দেশ' গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫

উত্তরঃ  সাহিত্য নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের সাহায্যে লেখক বিষয়বস্তুর সাথে সাথে তার মনোগত অভিপ্রায়কেও প্রতিফলিত করেন। সাহিত্যে নামকরণ করতে গিয়ে সাহিত্যিকরা কতগুলি রীতি অনুসরণ করেন। সেগুলি হল বিষয়, চরিত্র ব্যঞ্জনা এবং রূপকধর্মিতা। এতগুলি মধ্যে যে-কোনো একটি সামনে রেখে লেখক নামকরণ করে যাবেন।

আমাদের বিচার্য আমাদের পাঠ্য প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পটির আঙ্গিকে কী এবং তার নামকরণ কতটা সার্থকতা লাভ করেছে। গল্পটির দুটি ভাগের প্রথম ভাগে রয়েছে কথক বর্ণিত নিরুদ্দেশ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি, তারপর নিরুদ্দিষ্টের ফিরে আসা-সব মিলিয়ে একটা হাস্যকর ব্যাপার। আর দ্বিতীয় অংশে আছে কথকের বন্ধু সোমেশের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাজাত নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনের এক করুণ ট্র্যাজেডি। প্রথম ভাগটি এক্ষেত্রে মূল কাহিনির সলতে পাকানোর অর্থাৎ প্রস্তাবের ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে নির্লিপ্ত শোভন রাগারাগি নয়, নির্লিপ্ত উদাসীনতা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে ছিল। বাবা-মা আকুল আর্তি জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন, শোভন তা অনুসরণ করেনি। তারপর হতাশাগ্রস্ত বাবা-মায়ের বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপ্তিতে পরিণত হয়। এই দু-বছরে তার চেহারায় আসে পরিবর্তন। অবশেষে যখন সে ফিরে আসে তখন তার চেহারায় পূর্বের শোভনের কিছুটা মিল থাকলেও অসম্পূর্ণভাবে মানতে পারে নি। গল্পটির ভয়াবহ ট্র্যাজেডি একটাই যে শোভনকে টাকার বিনিময়ে তার নিজের মায়ের কাছে মৃত ছেলের অভিনয় করতে হয়। গল্পটির লক্ষণীয় বিষয় শোভন আজ আত্মীয় পরিজনদের কাছে মৃত। নিরুদ্দেশই তার জীবনের অন্তিম পরিণাম-এই ট্র্যাজিক সত্যতাকে মেনে নিতে হয় একইভাবে শোভনও আর ফিরবে না এই উপলব্ধিই গোটা পরিবারকে এক ট্র্যাজিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে চলে। এভাবেই 'নিরুদ্দেশ' গল্পের নামকরণের ব্যঞ্জনাটি সার্থকতার রূপ নেয়।


2. ছোটোগল্প হিসেবে 'নিরুদ্দেশ'-এর সার্থকতা  বিচার করো।

উত্তরঃ  আধুনিক সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট আঙ্গিক হল ছোটোগল্প। সংক্ষিপ্ত পরিসরে একমুখীন ঘটনা ও সীমিত চরিত্রের ঘাত-প্রতিঘাতে কাহিনি চরম মুহূর্তে পৌঁছে, তা যখন মানবজীবনের কোনো বিশেষ সত্যকে উদ্ভাসিত করে; তাকেই আমরা সার্থক ছোটোগল্প বলি। এই প্রেক্ষিতের নিরিখে আমরা ছোটোগল্প হিসেবে 'নিরুদ্দেশ'-এর যাথার্থ্য বিচার করব।

'নিরুদ্দেশ' গল্পটিতে আপাতভাবে দুটি কাহিনি আছে। প্রথমটিতে নিরুদ্দেশ-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের হাস্যকর দিক প্রসঙ্গে কথক-বর্ণিত অংশ। যার সঙ্গে দ্বিতীয়টির প্রায় কোনো মিল নেই। তবে খুঁটিয়ে পড়লে বোঝা যায়, এই অমিল আসলে - গল্পকারের নিপুণ পরিকল্পনারই অংশ। বাবা-মা-ছেলের ঘরোয়া ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা নিরুদ্দেশের ঘটনাটি অনেকটা এ গল্পের মূল কাহিনির ভূমিকা বা প্রস্তাবনার কাজ করে। পাঠকের মনে একটা কমিক রিলিফের স্বাদ এনে দেয়, ঠিক যেমনভাবে কথক বাইরের প্রাকৃতিক-পরিপার্শ্বের অসাড়তা দূর করতে গল্প ফাঁদেন। এ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বন্ধু সোমেশের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দু এসে উপস্থিত হয়। যার পরিণাম নিরুদ্দিষ্ট শোভনের জীবনের ট্র্যাজিক ঘটনা। বর্ণনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মোচড়ে-চরিত্রের সঙ্গে ঘাত-প্রতিঘাতে তা চরম মুহূর্তে পৌঁছায়। মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের নিষ্প্রভ দৃষ্টির সামনে শোভনকে যখন শোভন সেজে অভিনয় করার মিনতি জানিয়ে নায়েবমশাই তার হাতে নোটের তাড়া গুঁজে দেন, তা পাঠকের মনে এক ব্যঞ্জনাপূর্ণ ট্র্যাজিক অনুভূতির সৃষ্টি করে। শেষে সোমেশের সঙ্গে শোভনের আশ্চর্য শারীরিক সাদৃশ্যের ঈঙ্গিতপূর্ণ দোলাচলের নাটকীয়তায় পাঠককে ফেলে রেখে 'নিরুদ্দেশ' গল্পটি শেষ হয়। এই অন্তহীন জিজ্ঞাসাই ছোটোগল্পকারের অন্বিষ্ট। তাই এটিকে একটি সার্থক ছোটোগল্পের অসামান্য উদাহরণ বলেই আমরা মনে করি।


3.  'নিরুদ্দেশ' গল্পে গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশের যে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার ঘটিয়েছেন, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তরঃ  ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে 'Morning shows the day' অর্থাৎ সকালটাই বলে দেয় বাকি দিনটা কেমন যাবে। নিরুদ্দেশ গল্পারম্ভে প্রকৃতির ছবিই গল্পের অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে আগাম জানান দেয়। গল্পটির শুরু শীতের মেঘাচ্ছন্ন দুপুর যাকে অসময়ের বাদলা বলা চলে। বৃষ্টি পড়ছে না। গাঢ় মেঘে ঢাকা ঝাপসা পৃথিবীটা যে মৃতদেহ। কথকের মতে এমন দিনে সোমেশের উপস্থিতির স্বস্তিদায়ক কিন্তু সেও যেন আজ কেমন। তার মনে হয় পরিবেশের এই নিষ্প্রভ প্রাণহীনতা তার মনেও প্রভাব বিস্তার করেছে। কথক খবরের কাগজের সাত-সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনে সোমেশের দৃষ্টি করার চেষ্টা করতে দেখেন যে, সে নির্লিপ্ত ও কৌতূহলহীন। সবকিছুই অস্বস্তিদায়ক ও অস্পষ্ট। ঘরের মধ্যেকার ধোঁয়ার কুণ্ডলী উভয়ের মধ্যে ঘনীভূত অস্পষ্টতাকেই সূচিত করে। তাই কথক লেখেন বাইরের অসাড়তা যেন আমাদের মনের ওপরও চেপে ধরেছে। আর এই অসাড়তা কাটাতেই লেখকের নিরুদ্দেশ কাহিনির অবতারণা। সুতরাং প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বের সক্রিয়তা গল্পে অনেকটা অনুঘটকের কাজ করে। সোমেশের কাহিনির শুরুতেই যে প্রাকৃতিক আবহ তা অত্যন্ত সংগত। বাইরে বৃষ্টি আরম্ভহয়েছে, রাস্তাঘাট ঝাপসা, সমস্ত পৃথিবী থেকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয় নিরুদ্দিষ্ট শোভনের আত্মীয় পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকে। আবার শোভনের ট্র্যাজিক কাহিনির শেষে সোমেশ যখন চুপ করে যায় তখন বাইরে থেকে প্রবল বৃষ্টির আওয়াজ ভেসে আসে-এ যেন এক বেদনাবহ করুণ কাহিনির সজলসমাপ্তির কথা প্রকাশ করে। কথক যেহেতু সোমেশের মধ্যে শোভনকে দেখেছেন তাই তখন সোমেশের হাসি যেন, 'শীতের বাদলের এই শীতল প্রায়ান্ধকার অস্বাভাবিক অপরাহ্নের মায়াময় রহস্যময়তার পাঠককে দাঁড় করিয়ে রেখে রাত্রির গভীরে ডুবে যায়। এভাবেই গল্পকর প্রকৃতিকে তার 'নিরুদ্দেশ' গল্পে তাৎপর্যবাহী করে তুলেছেন।


4. 'সোমেশ কোন কৌতূহলই প্রকাশ করিল না।-সোমেশ কে? কেন তিনি কোনো কৌতূহল প্রকাশ করেননি? ১+৪ = ৫

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথকের বন্ধু হলেন সোমেশ।  'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথক শীতকালের একটি বাদলার দিনের অস্বস্তিকর আবহাওয়ায়, নিরুপায় হয়ে খবরের কাগজটিকে এহন আশ্রয় করে বসেছিলেন। কথকের বন্ধু সোমেশ হঠাৎই এসে পড়ায়, এমন বিশ্রি দিনে কথকের কাছে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হয়। কথা প্রসঙ্গে কথক খবরের কাগজে একসঙ্গে সাতটা নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সোমেশকেও সেই বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে নজর ফেরাতে অনুরোধ করেন। কথকের অনুরোধ সোমেশের মনে কোনো দাগ কাটতে পারে না। নিরুদ্দেশের সাতটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কে কোনো কৌতূহলই লক্ষ করা যায় না সোমেশের মধ্যে। তিনি যেমনভাবে বসেছিলেন তেমনি উদাসীন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকেন। বাইরের প্রকৃতির নিঃস্তব্ধতা ঘরের মধ্যে থাকা দুটি মানুষের মধ্যেও ক্রমশ চেপে বসে। আসলে সোমেশের জীবনে এই নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন এক বেদনাবহ অনুষঙ্গ বহন করে। তাই কথক যেভাবে বিজ্ঞাপনগুলি সম্পর্কে লঘু ও ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছিলেন, সোমেশের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তাঁর মনে এমনই একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত ভয়ানক ট্র্যাজেডির স্মৃতি সেদিন ঘুরেফিরে আসছিল। তাই কথকের বলা কথায় আপাতভাবে কোনো কৌতূহল প্রকাশ না করে সোমেশ আত্মমগ্ন, নিষ্ক্রিয় ও স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন।


5.  'নিরুদ্দেশ-এর এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে কিন্তু আমার হাসি পায়'- উক্তিটির বস্তা কে? তাঁর এমন মনোভাবের কারণ ব্যাখ্যা করো। ১+৪=৫

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পের কথক, অধিকাংশ নিরুদ্দেশ-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের পরিণাম হাস্যকর, এ-কথা - বোঝাতেই প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।  কথকের মতে, তুচ্ছ কিছু ঘরোয়া ঝগড়া ও বিবাদের ফলেই - বেশিরভাগ নিরুদ্দেশের ঘটনা ঘটে। হয়তো মায়ের কাছ থেকে - টাকা জোগাড় করে ছেলে থিয়েটার দেখতে গেছে। অনেক রাত - হওয়া সত্ত্বেও 'গুণধর পুত্রটি' বাড়ি না ফেরায়, বাবা যখন মায়ের আদর-আশকারা নিয়ে 'মৌখিক আস্ফালন' করছেন, ঠিক তখনই এ ছেলে ঘরে প্রবেশ করে। উত্তেজিত বাবার শাসন তীব্র আকার - ধারণ করায়, তিনি মাত্রা হারিয়ে ছেলেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এ যেতে বলেন। অভিমানী ছেলে 'পিতৃদেবের এ আদেশ তৎক্ষণাৎ এ পালন' করে, বাড়ি ছাড়ে। বিশাল পৃথিবীতে ছেলেটি যেন নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। তারপরই শুরু হয় বাবা-মায়ের অস্থিরতা। - ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে, এই দারুণ শীতে সে কোথায় আছে, কীভাবে আছে মা কল্পনাও করতে পারেন না। দুশ্চিন্তায় তিনি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে বিছানা আঁকড়ে ধরেন। এদিকে মানসিক অশান্তিতে-দুশ্চিন্তায় বাবাও অস্থির হয়ে ওঠেন। তিনি ইতিকর্তব্য র বুঝতে না পেরে, খবরের কাগজের অফিসে যান। সেখানে বহু বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে অবশেষে অশ্রুসজল বিজ্ঞাপন দিয়ে, আশ্বস্ত হয়ে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরেই ছেলে হাজির। যদিও সে অনুতপ্ত নয়, চিরতরে চলে যাওয়ার আগে গোটাকতক বই নিয়ে যেতে এসেছে মাত্র। সুতরাং এবার মায়ের পালা। এতক্ষণে মায়ের ক্রুদ্ধস্বর শোনা যায়। এইজন্য কথকের মতে, অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন সামান্য ঘরোয়া ঝগড়ার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাই কাগজে এজাতীয় বিজ্ঞাপনগুলি দেখলে, এই ইতিহাসের কথা মনে পড়ায় তাঁর হাসি পায়।


6.  'বাবা যেন এতক্ষণে কূল পেয়ে বলেন'-বাবা কী বলেছিলেন? কোন্ প্রসঙ্গে তাঁর এমন উক্তি? ২+৩=৫

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথক-বর্ণিত কাহিনির নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা খবরের কাগজের অফিসে পৌঁছে, সেখানকার হাজারো জটিল ব্যবস্থাপনা পেরিয়ে বুঝতে পারছিলেন না কীভাবে ছেলের নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে কথা বলবেন। শেষ পর্যন্ত কাগজের অফিসের এক ভদ্রলোক তাঁর কথা বুঝতে পেরে জানতে চান, তিনি চেহারার বর্ণনা, না ফিরে আসবার অনুরোধ কোন্টা দিতে চান। এতক্ষণে নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা আশ্বস্ত হয়ে তাঁকে বলেন, ওর মা খুব কান্নাকাটি করছে, তাই তিনি ফিরে আসবার অনুরোধ জানিয়েই বিজ্ঞাপন দিতে চান।

 কাগজের অফিসের নানা জটিল ব্যবস্থায় নিরুদ্দিষ্ট ছেলেটির বাবা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। অনভিজ্ঞ মানুষটি কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক বিমূঢ়ভাবে ঘোরাফেরা করে নিরীহ চেহারার একজনকে সাহস করে বলেন, তিনি একটা খবর বার করতে চান। লোকটি তাঁকে ভুল বুঝে ব্যঙ্গ করে জানতে চান, তাঁদের দেওয়া খবরগুলি কি পছন্দ হচ্ছে না! নাকি তাঁরা এতদিন রামযাত্রা বার করছেন। এসব কথায় ভদ্রলোক আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন দেখে, পাশে বসা আপাতভাবে রূঢ় প্রকৃতির মানুষটি সহানুভূতির সঙ্গে তাঁকে চেয়ারে বসতে বলেন। এরপর কথা প্রসঙ্গে ছেলেটির বাবা নিজের মনোগত অভিপ্রায়ের কথা প্রকাশ করেন। বাবার এই অসহায় অবস্থাটিকেই সমুদ্রে কূল খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন কথক।


7.  'ফিরে আসারই ভয়ানক একটা ট্রাজিডির কথা আমি জানি'- 'নিরুদ্দেশ' গল্প অবলম্বনে ফিরে আসার এই ভয়ানক ট্র্যাজেডির কাহিনিটি নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে গল্প কথকের বন্ধু সোমেশ পুরোনো কাগজ ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল এমন এক নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ট্র্যাজিক ইতিহাসের কথা বলেছেন। সেই বিজ্ঞাপনের প্রথম দিকে বাবা-মার আর্তি-আকুতি, পরে তা দুর্বল আর্তনাদে পরিণত হয়। সবশেষে তা পরিণত হয় বিজ্ঞাপনে তাও কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। নিরুদ্দিষ্ট শোভন ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়েনি। অত্যন্ত নিরাসক্ত মন নিয়ে তার পৃথিবীতে আসা এবং সবকিছুকে সে অনায়াসে দলে যেতে পারে এমন একটা ভাব। অবশেষে প্রায় দুবছর পর বাড়ি ফিরে সে দেখে চেনা মানুষগুলো তার কাছে অচেনা হয়ে গেছে। এমনকি পুরোনো নায়েব খাজাঞ্চিও তাকে চিনতে পারেনি। বাড়িতে ঢোকার বদলে তাকে বারবাড়িতে অপেক্ষা করতে হয়। সকলের দৃষ্টিতে এমনকি তার নিজের বাবার দৃষ্টিতেও অবিশ্বাস লক্ষ করে সে বিমূঢ় ও হতবাক হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে চেহারার পরিবর্তন, পুরস্কার প্রত্যাশীদের ভিড় ও হাসপাতালের সমর্থিত মৃত্যু সংবাদের কারণে কেউই তাকে বিশ্বাস করছে না। শেষের ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক যখন নায়েবমশাই হাতে নোটের তাড়া গুঁজে দিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য অভিনয় করার অনুরোধ জানায়। শোভনের ফিরে আসার এই মর্মান্তিক ট্র্যাজিক কাহিনি সত্যই আমাদের চোখে জল এনে দেয়।


8.  'ধারাবাহিকভাবে পড়ে গেলে সম্পূর্ণ একটি কাহিনি যেন জানা যায়'- এখানে কী পড়বার কথা বলা হয়েছে? সেখানে কোন্ কাহিনি জানা যাবে?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পে কথকের বন্ধু সোমেশ পুরোনো খবরের কাগজের ফাইল উলটে বহু বছর - আগে সংবাদপত্রের পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, নিরুদ্দেশ ন সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞাপনের কথা বলেছেন। কারণ এটি শুধুই বিজ্ঞাপন নয়, বিজ্ঞাপনের আড়ালে একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। তাঁর মতে, দিনের পর দিন নিয়মিত পড়ে দেখলে এর থেকে একটি ! সম্পূর্ণ কাহিনি জানা যায়।

এই বিজ্ঞাপনটিকে কেন্দ্র করে নিরুদ্দিষ্ট একটি ছেলের পারিবারিক বিপর্যয়ের করুণ কাহিনি প্রকাশিত হয়েছে। সোমেশের ভাষায়, ছাপার লেখাতেও কান পাতলে যেন করুণ আর্তনাদ শোনা যায়। বিজ্ঞাপনটিতে একদম প্রথমদিকে মাতৃ-হৃদয়ের আর্তি-আকুলতা ও অনুরোধ প্রকাশিত হত। ভাষা আড়ষ্ট হলেও, তার ব্যাকুলতার গভীরতা মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যেত। পরে ক্রমে তা হতাশার দীর্ঘশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। এরপর মায়ের আর্তনাদে মিলিয়ে যেতেই দেখা দেয় বাবার গম্ভীর-ধীর-কম্পিত কণ্ঠস্বর। ধীরে ধীরে তাও পরিবর্তিত হয় কাতর-দুর্বল বেদনার হাহাকারে। তারপর একেবারে গেল বদলে। সাধারণ একটি বিজ্ঞপ্তি মাত্র। চেহারা, নাম, ধাম ও পরিচয়চিহ্ন দিয়ে লেখা হয় পুরস্কারের কথা। পুরস্কারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এমনকি লেখা হয়, জীবিত না মৃত খোঁজ দিতে পারলেও মিলবে পুরস্কার। এইভাবে ক্লান্ত পদচারণায় চলতে চলতে হঠাৎ যেন এক ভয়ংকর দুর্ঘটনায় খবরের কাগজের পাতা স্তব্ধ হয়ে গেল, 'শোভন, তোমার মার সঙ্গে আর তোমার বুঝি দেখা হল না। তিনি শুধু তোমারই নাম করছেন এখনো।'- তারপর আর কোনো বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। শোভনের নিরুদ্দেশ হবার পিছনে অসহায় একটি পরিবারের - বিপর্যয়ের এই বেদনাদায়ক কাহিনির কথাই সোমেশ বলেছেন।


9.  'শোভন এই অবস্থাতে না হেসে পারলে না,'-কোন্ অবস্থার কথা বলা হয়েছে? শোভন হেসে উঠেছিল কেন?

 উত্তরঃ 'নিরুদ্দেশ' গল্পে নিরুদ্দিষ্ট শোভন প্রায় দুবছর পরে এক বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু ফিরে এসে সে আবিষ্কার করে তাদের জমিদারির কর্মচারীরা কেউই তাকে চিনতে পারছেন না। সে শত অনুরোধ-মিনতি করেও বাড়ির ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পায়নি। এমনকি নায়েবমশাই এবং খাজাঞ্চিমশাইয়ের অস্বাভাবিক আচরণেও শোভন বিস্মিত হয়। সে হতবাক হয়ে সকলের দৃষ্টিতে তার প্রতি অবিশ্বাস ফুটে উঠতে দেখে। এভাবেই একসময় শোভনের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার বারংবার কাতর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, নায়েবমশাই অত্যন্ত হতাশ ভঙ্গি করে বলে ওঠেন, তাঁরা খবর পেয়েছেন সাতদিন আগে শোভন মারা গিয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে তার। যদিও মৃত ব্যক্তির নাম-ধাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে তাঁদের সব জানিয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গেও তাঁদের বিবরণ মিলে গেছে। সশরীরে জীবিত অবস্থায় নিজের মৃত্যুসংবাদ শুনে বিমূঢ় শোভনের হতচকিত পরিস্থিতির কথাই এখানে বলা হয়েছে।

 নিজের কানে নিজের মৃত্যুসংবাদ পেয়েই হেসে ওঠে শোভন। সে উপলব্ধি করে এক ভয়ানক মিথ্যা তার অস্তিত্বকেই বিদ্রুপ করে। অথচ ভাগ্যের আশ্চর্য পরিহাসে শোভন এর বিরুদ্ধাচরণ করার অবশিষ্ট শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে। বেঁচে থেকেও নিজের পরিচিত-প্রিয়জনদের কাছে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার এই বেদনাময় বিমুঢ় অনুভূতিই শোভনের বিদ্রুপের হাসির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আসলে বাড়ি ফিরে সে ক্রমশ আবিষ্কার করেছে, সে স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশে গেলেও ফেরার ওপর তার আসলে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়তি-নির্দিষ্ট এক চির-নিরুদ্দেশই শোভনের ভবিতব্য। শোভনের ট্র্যাজিক হাসি যেন এই সমস্ত কিছুরই বহিঃপ্রকাশ।


10. 'তাঁর চলার গতিতে পর্যন্ত যেন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার পরিচয় আছে'-কার কথা বলা হয়েছে? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী? ১+৪ = ৫

উত্তরঃ  প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে নিরুদ্দিষ্ট শোভনের অসহায় ও বিপর্যস্ত বাবার কথা বলা হয়েছে।

 প্রায় দুবছর পর নিরুদ্দিষ্ট শোভন হঠাৎ একদিক বাড়িতে ফিরে আসে। এই দুবছরে তার চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে বাড়ির কেউ তাকে চিনতে পারবে না, এমন আশঙ্কা সে করেনি। অথচ বাড়ি ফিরে শোভন দেখে, কেউই তাকে চিনতে পারছে না। শত অনুরোধ ও মিনতি সত্ত্বেও সে বাড়ির ভেতরে * ঢোকার অনুমতি পায় না। আসলে এর আগে শোভন নামে আরও দুজনের উপস্থিতি এবং সাতদিন আগে গাড়ি চাপা পড়ে শোভনের মৃত্যুসংবাদ, কর্মচারীদের মনে তার চিরতরে হারিয়ে যাওয়াকেই বিশ্বাস্য করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে বারবাড়িতে বন্দি বিমূঢ় শোভন হঠাৎ বাড়ি থেকে তার বাবাকে বের হতে দ্যাখে। বাবার চেহারা দেখে সে হতবাক হয়ে যায়। দুঃখ-শোকে জর্জরিত মানুষটির চেহারা দেখে শোভন একমাত্র ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য খুঁজে পায়। সাহিত্যের উপমা যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এই বৃদ্ধ মানুষটির মধ্যে মূর্ত হয়ে ওঠে। মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রীর অবর্ণনীয় অবস্থা আর একমাত্র ছেলের নিরুদ্দেশ যাত্রার বেদনাদায়ক যন্ত্রণার আঘাতে তাঁর হাঁটাচলার গতিতেও এক ভয়ংকর দুর্ঘটনার পরিচয় ফুটে ওঠে। যেন অসহায় বাবা এক মর্মঘাতী দুর্ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে কোনোক্রমে টিকে থাকেন। প্রশ্নোদ্ভূত অংশে বস্তা সোমেশ সে কথাই বলতে চেয়েছেন।


11.  'নায়েবমশাই নোটের তাড়াটা শোভনের হাতে গুঁজে দিলেন'-নায়েবমশাই নোটের তাড়া শোভনের হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন কেন? ৫

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'নিরুদ্দেশ' গল্পের নিরুদ্দিষ্ট শোভন প্রায় দুবছর পর বাড়ি ফেরে। এসময় তার চেহারায় কিছু পরিবর্তন হলেও, বাড়ির কর্মচারীরা তাকে চিনতে পারবে না, এমন আশঙ্কা সে করেনি। কিন্তু বাড়ির পুরোনো কর্মচারী নায়েবমশাই থেকে খাজাঞ্চিমশাই, এঁদের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক ব্যবহার শোভনকে বিস্মিত করে। এমনকি বাড়ির অন্দরমহলের পরিবর্তে তার ঠাঁই - হয় 'বারবাড়িতে'। মায়ের শরীর ইত্যাদির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমস্তই এড়িয়ে যাওয়া হয়। তারই ছোটোবেলায় ছবি দেখিয়ে চেনে কি না প্রশ্ন অবধি করা হয় শোভনকে। এ সবকিছু দেখে - উদ্‌ভ্রান্ত শোভন হতবাক হয়ে যায়। তখন তাকে আরও বিহ্বল - ও বিমূঢ় করে দিয়ে নায়েবমশাই চলে যেতে বলেন, কেননা এ বাড়ির নিরুদ্দিষ্ট শোভন দিন সাতেক আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এরপর বাবাও শোভনকে চিনতে পারেন না। সশরীরে জীবিত অবস্থায় প্রিয়জনদের কাছে, নিজের সম্পূর্ণ অস্তিত্বকে মিথ্যা, নিরর্থক ও মৃত প্রমাণিত হতে দেখে শোভন স্তব্ধ ও - আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এইসময় তার অন্তর্মনের অসাড়তা ভেদ করে নায়েবমশাইয়ের মিনতিমাখা কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসে। শোভনের মা ছেলের চিন্তায় রোগে ও শোকে মুমুর্ষুপ্রায়। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী মাকে তারা শেষ মুহূর্তে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা দিতে চান না। তাই জমিদারবাবু অর্থাৎ শোভনের বাবার কাতর অনুরোধ, তার হারানো ছেলের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত শোভন যেন মৃত্যুপথযাত্রী মাকে শেষ সান্ত্বনাটুকু দিতে একবার শোভন সেজে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এতে তার লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই, সে কথা বলে নায়েবমশাই শোভনের হাতে নোটের তাড়াটা গুঁজে দিয়েছিলেন। এ শোভনকে শোভনের অভিনয় করার জন্য বাবার


No comments:

Post a Comment