সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 7 History Chapter -2 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class7 History Questions And Answers #Class 7th History Chapter-2 Questions And Answers
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১। কোথায় বঙ্গ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায় ?
উঃ। ঋকবেদের ঐতরেয় আরণ্যক-এ প্রথম বঙ্গ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
২। কারা বঙ্গদেশের নাম দিয়েছিলেন 'বেঙ্গালা' ?
উঃ। ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা এখানে এসেছিলেন। তাঁরাই এদেশের নাম দেন বেঙ্গালা।
৩। অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কে ছিলেন?
উঃ। কৌটিল্য।
৪। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থটি কে রচনা করেন ?
উঃ। আবুল ফজল।
৫। কোন্ সময় মাহমুদ কতবার উত্তর ভারত আক্রমণ করেন?
উঃ। আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে মাহমুদ সতেরোবার উত্তর ভারত আক্রমণ করেন।
৬। কত খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি মারা যান?
উঃ। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি মারা যান।
৭। প্রাচীন বাংলার সীমানা কোন্ কোন্ নদী নিয়ে তৈরি হয়েছিল?
উঃ। ভাগীরথী, পদ্মা ও মেঘনা এই তিনটি নদী নিয়েই প্রাচীন বাংলার সীমানা তৈরি হয়েছিল।
৮। বাংলার কোন্ এলাকা বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল ?
উঃ। বাংলার ভাগীরথী ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকা বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল।
৯। কোন্ অঞ্চলকে বঙ্গ বলা হতো ?
উঃ। প্রাচীনকালে গঙ্গা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে ব-দ্বীপ এলাকাকে বঙ্গ বলা হতো।
১০। গৌড়ের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ কোথায় অবস্থিত ছিল?
উঃ। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটির কাছে রাজবাড়িডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এর কাছেই ছিল সেকালের গৌড়ের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ।
১১। অষ্টম শতকে কারা বাংলা আক্রমণ করেছিলেন ?
উঃ। অষ্টম শতকে কনৌজ এবং কাশ্মীরের শাসকরা বাংলা আক্রমণ করেছিলেন।
১২। গুর্জর-প্রতিহাররা কোথায় শাসন করতেন? এদের মধ্যে ক্ষমতাবান রাজা কে ছিলেন?
উঃ। গুর্জর-প্রতিহাররা রাজস্থান ও গুজরাটের বৃহৎ অঞ্চল শাসন করতেন। এদের মধ্যে রাজা ভোজ ছিলেন খুবই ক্ষমতাবান।
১৩। 'গঙ্গাইকোণ্ডঢোল' কার উপাধি ছিল? তিনি কে ছিলেন ?
উঃ। 'গাইকোণ্ড চাল' ছিল প্রথম রাজেন্দ্র ঢোলের উপাধি। তিনি ছিলেন চোলরাজ প্রথম রাজরাজ-এর পুত্র।
১৪। রাঢ় অঞ্চল বলতে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলকে বোঝায় ?
উঃ। আজকের মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমভাগ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগনা, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি এবং অজয় ও দামোদর নদের মধ্যবর্তী বিরাট এলাকাকে বোঝায়।
১৫। শশাঙ্কের মুদ্রায় চেনা কোন্ পশুর ছবি দেখা যায়?
উঃ। শশাঙ্কের মুদ্রায় বৃষ বা ষাঁড়ের ছবি দেখা যায়।
১৬। গৌড়তন্ত্র কাকে বলে?
উঃ। শশাঙ্কের শাসনকালে গৌড়ে যে শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তাকে গৌড়তন্ত্র বলা হয়।
১৭। পাল আমলের শাসন ব্যবস্থায় সামন্ত নেতাদের কী কী নামে চিহ্নিত করা হয়েছে?
উঃ। পাল আমলের শাসন ব্যবস্থায় সামন্ত নেতাদের রাজন, সামন্ত, মহাসামন্ত ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
১৮। শশাঙ্কর মৃত্যুর পর কে কর্ণসুবর্ণ জয় করেন?
উঃ। কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মা।
১৯। ভাস্করবর্মার পর কে কর্ণসুবর্ণতে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ। রাজা জয়নাগ।
২০। দন্তিদুর্গ কে ছিলেন?
উঃ। রাষ্ট্রকূট বংশের রাজা।
২১। সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ সামস্ত সেন।
২২। অল বিরুণির লেখা কোন গ্রন্থ থেকে ভারতের ইতিহাস জানা যায়।
উঃ কিতাব অল হিন্দ গ্রন্থ থেকে।
২৩। কত খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়?
উঃ। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে।
২৪। দিল্লিতে কে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ। কুতুবউদ্দিন আইবক।
২৫। বাংলায় কোন সময় পালরাজত্ব শেষ হয়ে যায় ?
উঃ। রামপালের মৃত্যুর পাশ বছরের মধ্যেই বাংলায় পালরাজত্ব কার্যত শেষ হয়ে যায়।
২৬। কে চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?
উঃ। দক্ষিণ ভারতে রাজা মুট্টাবাইয়াকে সরিয়ে বিজয়ালয় চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
২৭। বাংলার কোন্ অঞ্চল হরিকেল নামে পরিচিত ছিল?
উঃ। বাংলার সমতট অঞ্চলের দক্ষিণপূর্ব দিকে আজকের বাংলাদেশের চট্টগ্রামের উপকূল অঞ্চল প্রাচীন যুগে হরিকেল নামে পরিচিত ছিল।
২৮. কোরান কী ?
উঃ। কোরান হলো ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে কোরান আল্লাহর বাণী।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১। টীকা লেখো :
দেবপাল : পালবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধর্মপালের পুত্র দেবপাল। ৮০৬ থেকে ৮৪৫ খ্রিস্টাব্দ অবধি তিনি রাজ্য শাসন করেন। তাঁর সময়ে উত্তর হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত এবং উত্তর-পশ্চিমে কম্বোজ দেশ থেকে পূর্বে প্রাগজ্যোতিষপুর পর্যন্ত পাল সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে দেবপালও ত্রিশক্তি সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কনৌজ, উৎকল, দ্রাবিড় জয় করেন। তিনি এক সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর আমলে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
কৈবর্ত বিদ্রোহ ঃ একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে পাল শাসনে কৈবর্ত বিদ্রোহ ঘটে। সেইসময় বাংলার উত্তরভাগে কৈবর্তদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সম্ভবত এরা ছিল জেলে বা নৌকার মাঝি। এই বিদ্রোহের তিনজন নেতা ছিলেন দিব্য, রুদোক ও ভীম। পালরাজ দ্বিতীয় মহীপালের শাসনকালে তাঁর দুর্বলতার সুযোগে দিবা বিদ্রোহ করেন এবং তা দমন করতে গিয়ে দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন। দিব্য বরেন্দ্র দখল করে রাজা হন। মহীপালের ভাই রামপাল দিব্যকে দমন করতে অসফল হন। পরবর্তীকালে রামপাল বাংলা ও বিহারের সামন্ত রাজাদের সহায়তায় কৈবর্ত রাজা ভীমকে পরাজিত ও হত্যা করে বরেন্দ্রসহ বাংলার কামরুপ ও ওড়িশার একাংশে পাল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্যে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিবরণ পাওয়া যায়।
বল্লালসেন ঃ পাল বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বল্লালসেন আনুমানিক ১১৫৯-৭৯ খ্রিঃ অবধি রাজত্ব করেন। তিনি পালরাজা গোবিন্দ পালকে পরাস্ত করেন এবং গৌড় জয় করেন। বাংলার বিক্রমপুরে তিনি রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বল্লালসেন হিন্দু ধর্মের অনুরাগী ছিলেন এবং সমাজে কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি সমাজ সংস্কার করে রক্ষণশীল, গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য আচার আচরণকে প্রতিষ্ঠা করেন। বল্লালসেন দানসাগর ও অদ্ভুত সাগর নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
২। প্রাচীন বাংলার বঙ্গ অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থানের বিবরণ দাও।
উঃ। প্রাচীনকালে পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে বদ্বীপ অঞ্চলটিকে বঙ্গ বলা হত। সম্ভবত ভাগীরথীর পশ্চিম দিকের এলাকাও এর মধ্যে ছিল। পরে ভাগীরথীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত রাঢ় ও সুক্ষ্ম নামে দুটো আলাদা অঞ্চলের সৃষ্টি হলে বঙ্গের সীমানাও বদলে যায়। খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে বঙ্গ বলতে এখনকার বাংলাদেশের ঢাকা-বিক্রমপুর, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলকে বোঝানো হত।
৩। আরব উপদ্বীপ সম্বন্ধে যা জান লেখো।
উঃ। ভারতের পশ্চিমে আরব সাগর পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিমভাগে আরব উপদ্বীপ অবস্থিত। এখানকার অধিকাংশ অঞ্চলই মরুভূমি বা শুকনো ঘাসজমি। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, দক্ষিণে আরব সাগর এবং পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর। এখানে বৃষ্টিপাত সামান্য হয়ে থাকে। মক্কা এবং মদিনা এখানকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানকার যাযাবর মানুষদের বেদুইন বলা হতো। তারা উট পালন করত এবং খেজুর ও উটের দুধ ছিল এদের অন্যতম খাদ্য। এই মানুষেরা নিজেদের আরব বলে পরিচয় দিত।
৪। বাংলায় সেন বংশের শাসন কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উঃ। পাল রাজাদের শাসনের শেষ দিকে বাংলায় সেনবংশের শাসন শুরু হয়। খ্রিস্ট্রীয় একাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সমগ্র বাংলার উপর পাল রাজাদের কর্তৃত্ব তেমনভাবে ছিল না। কেবল পূর্ব বিহার ও উত্তর বাংলায় পাল শাসন টিকে ছিল। এই সুযোগে সেন বংশের সামস্ত সেন এবং তাঁর পুত্র হেমন্ত সেন রাঢ় অঞ্চলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাল শাসনের শেষ দিকে কৈবর্ত বিদ্রোহ সেনদের রাজ্যস্থাপনে সাহায্য করেছিল।
৫। প্রথম রাজরাজ ও রাজেন্দ্র চোল এর কৃতিত্ব আলোচনা করো।
উঃ। চোল বংশের অন্যতম রাজা প্রথম রাজরাজ ১৮৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমানে কেরল, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চোলদের প্রতিপত্তি বাড়ান। প্রথম রাজরাজ-এর পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র কল্যাণীর চালুক্য শক্তিকে পরাজিত করেন, বাংলার পালবংশের বিরুদ্ধে গঙ্গা নদীতীরে এক পালরাজাকে পরাজিত করে তিনি গাইকোণ্ডচোল উপাধি নেন। প্রথম রাজরাজ এবং রাজেন্দ্র চোল দুজনেই দক্ষ নৌবাহিনী তৈরি করেন। তার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতীয় বাণিজ্যকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা চোলদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।
৬। মহম্মদ ঘুরি সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। মুসলিম তুর্কিরা ভারতের সম্পদের টানে ভারত আক্রমণ করতে উদ্যোগী হয়, খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে ঘুরের শাসক মুইজউদ্দিন মহম্মদ বিন সাম বা মহম্মদ ঘুরি ভারতীয় উপমহাদেশে বিজয় অভিযানে আসেন। মহম্মদ ঘুরি ভারতবর্ষের শাসক হতে চেয়েছিলেন। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধে তিনি রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানকে হারিয়ে দেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি মারা যান। ঘুরির অন্যতম সঙ্গী কুতুবউদ্দিন আইবক সেই সময় দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
৭। লক্ষ্মণসেন সম্পর্কে কী জানা যায়?
উঃ। বল্লালসেনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র লক্ষ্মণসেন আনুমানিক ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তিনি একজন সুদক্ষ যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর রাজধানী ছিল পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে। তিনি প্রয়াগ, বারাণসী এবং পুরীতে তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি সমগ্র বাংলা জয় করে গৌড়েশ্বর উপাধি গ্রহণ করেন। লক্ষ্মণসেন ছিলেন সাহিত্যানুরাগী, তাঁর রাজসভায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ বৈয়ব কবি জয়দেব। লক্ষ্মণসেনের রাজত্বকালে ১২০৪/০৫ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজি নদিয়া আক্রমণ করেন। লক্ষ্মণসেন এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে না পেরে পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যান।
৮। ধর্মপাল সম্পর্কে যা জান লেখো।
উঃ। পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের পর আনুমানিক ৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন তার পুত্র ধর্মপাল। তিনি পালবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। সুনিপুণ যোদ্ধা ধর্মপাল পাল রাজ্যের বিস্তার ঘটান। সিংহাসনে আরোহণের পর কনৌজকে কেন্দ্র করে যে ত্রিশক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তাতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে তিনি সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। ধর্মপাল বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর আমলেই বিক্রমশীল মহাবিহার, ও ওদন্তপুরী বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৯। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উঃ। ঘুরের শাসক মহম্মদ ঘুরি ভারতবর্ষে শাসক হতে চেয়েছিলেন। তিনি ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবার ভারত আক্রমণ করেন এবং চৌহান বংশের রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানের হাতে তরাইনের যুদ্ধে পরাজিত হন ও পালিয়ে যান। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি আবার তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বিরাজ চৌহান পরাজিত ও নিহত হন। ভারতের ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
১০। সমতট বলতে বাংলার কোন্ অঞ্চলকে বোঝানো হত?
উঃ। মেঘনা নদীর পূর্বদিকের এলাকা ছিল বাংলার প্রাচীন সমতট অঞ্চল। বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা নোয়াখালি অঞ্চলের সমভূমিকে কেন্দ্র করে এই প্রাচীন সমতট অঞ্চল বিস্তৃত ছিল। মেঘনা নদী সমতটকে বাংলার বাকি অঞ্চল থেকে আলাদা করে রাখায় সমতটকে বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা বলে ধরা হত।
11.'বেঙ্গালা' নামকরণ কারা করেন?
উঃ। ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা বঙ্গদেশে এসেছিলেন। তাঁরা এই দেশের নাম দিয়েছিলেন 'বেঙ্গালা'। এই বিরাট ভূখণ্ডটি স্বাধীনতার আগে বাংলা বা বেঙ্গল নামেই পরিচিত ছিল।
12. পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নামকরণ কবে হয়েছিল?
উঃ। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় বাংলার পশ্চিমভাগের নাম হলো পশ্চিমবঙ্গ, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। দেশভাগের সময় পূর্ব বাংলা নতুন দেশ পাকিস্তানের মধ্যে চলে গিয়েছিল। পরে তার নাম হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশ হলে তার নতুন নাম হয় বাংলাদেশ।
13. কর্ণসুবর্ণ কোন্ অঞ্চলটিকে বলা হয়?
উঃ। পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ জেলার চিরুটি রেলস্টেশনের কাছে রাজবাড়িডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। চিনা বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং বিবরণীতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। চিনা ভাষায় এই বৌদ্ধবিহারের নাম লো-টো-মো-চিহ্ন। এর কাছেই ছিল সেকালের গৌড়ের রাজধানী শহর কর্ণসুবর্ণ। কর্ণসুবর্ণ স্থানীয়ভাবে রাজা কর্ণের প্রাসাদ নামে পরিচিত। তবে সপ্তম শতকের পরে এই শহরের কথা আর বিশেষ জানা যায় না।
14.সুয়ান জাং কর্ণসুবর্ণ সম্পর্কে কী বলেছেন তার বিবরণ দাও।
উঃ। সুয়ান জাং কর্ণসুবর্ণ সম্পর্কে লিখেছেন যে এই দেশটি ছিল জনবহুল এবং এখানকার মানুষেরা ছিলেন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে জমি ছিল নীচু ও আর্দ্র, এখানে নিয়মিত কৃষিকাজ হয় এবং অঢেল ফুল, ফল পাওয়া যায়। এখানকার জলবায়ু ছিল নাতিশীতোয় এবং এখানকার মানুষজন ছিলেন ভালো ও শিক্ষা-দীক্ষার পৃষ্ঠপোষক। কর্ণসুবর্ণে বৌদ্ধ এবং শৈব উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করত।
15. ‘গৌড়বহো' বা ‘গৌড়বধ' সম্বন্ধে কী জানা যায় ?
উঃ। ‘গৌড়বহো' প্রাকৃত ভাষায় লেখা একটি কাব্য। কনৌজের শাসক যশোবর্মা বা যশোবর্মনের রাজকবি বাক্পতিরাজ ৭২৫ বা ৭৩০ খ্রিস্টাব্দে এই কাব্য রচনা করেন। যশোবর্মন মগধের রাজাকে পরাজিত করার পর কবি এই কাব্য রচনা করেন। মনে হয় যে মগধের রাজা বলতে গৌড়ের রাজাকেই বোঝানো হয়েছে।
16. পাল রাজাদের তারিখ সম্বন্ধে কী জানা যায় ?
উঃ। কয়েক বছর আগে মালদহ জেলার হবিবপুর ব্লকের জগজ্জীবনপুরে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখানে পাওয়া তামার লেখ থেকে জানা গেছে যে দেবপালের পর তাঁর বড়ো ছেলে মহেন্দ্রপাল (৮৪৫ থেকে ৬০ খ্রিঃ) রাজা হয়েছিলেন। মহেন্দ্রপালের কথা জানার পরে দেবপাল পরবর্তী পাল রাজাদের শাসনকালের তারিখ সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের ধারণা বদলে গেছে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5
১। বাংলায় বখতিয়ার খলজির তুর্কি অভিযান ও তাঁর শাসনের বিবরণ দাও।
উঃ। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষ বা ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজি বাংলায় নদিয়া দখল করেছিলেন। এই সময় থেকে বাংলায় তুর্কি শাসন শুরু হয়। এই সময় বাংলার শাসক ছিলেন রাজা লক্ষণসেন। তুর্কিরা প্রায় বিনা যুদ্ধে নদিয়া দখল করেন। এরপর বখতিয়ার খলজি নদিয়া ছেড়ে লক্ষণাবতী অধিকার করে নিজের রাজধানী স্থাপন করেন। সমকালীন ঐতিহাসিকরা এই শহরকে লখনৌতি বলে উল্লেখ করেছেন। লখনৌতি রাজ্যের সীমানা উত্তরে দিনাজপুর জেলার দেবকোট থেকে রংপুর শহর, দক্ষিণে পদ্মানদী, পূর্বে তিস্তা ও বারতোয়া নদী এবং পশ্চিমে তা বখতিয়ার খলজি অধিকৃত বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বখতিয়ার খলজি নিজের নতুন রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগের জন্য একজন করে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। এই শাসনকর্তারা ছিলেন তাঁর সেনাপতি। বখতিয়ার লখনৌতিতে মসজিদে মাদ্রাসা এবং সুফি সাধকদের আস্তানা তৈরি করে দেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজির মৃত্যু হলে বাংলায় তুর্কি অভিযানের একটি অধ্যায় শেষ হয়।
২। হজরত মহম্মদ ও তাঁর ধর্মপ্রচার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উঃ। ইসলাম ধর্মের প্রচারক হজরত মহম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘোষণা করেন যে আল্লাহ্ তাঁকে দূত মনোনীত করেছেন। আল্লাহর বাণী সাধারণ মানুষ মহম্মদের থেকেই জানতে পারেন। তাই তাঁকে আল্লাহর বার্তাবাহক বলা হয় । খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে মক্কা শহরকে কেন্দ্র করে হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন, বিভিন্ন আরব উপজাতিদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ বন্ধ করার জন্য তিনি একটি বিশ্বাসকে চালু করেছিলেন। এর ফলে উপজাতিগুলির মধ্যে ঐক্য তৈরি হতে থাকে। তখনকার দিনে প্রতিষ্ঠিত মক্কাবাসীদের ধর্মীয় আচার আচরণের সাথে মহম্মদের ধর্মীয় মতের যথেষ্ট ফারাক ছিল। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ এবং তাঁর অনুগামীরা মদিনা শহরে চলে আসেন। মক্কা থেকে মহম্মদের এই মদিনায় গমনকে আরবি ভাষায় হিজরত বলা হয়। পরে ঐ সময় থেকে হিজরি নামে ইসলামীয় সাল গণনা শুরু হয়। দশ বছরের মধ্যেই মহম্মদের প্রভাব আরব ভূখণ্ডের বিরাট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদ পরলোকগমন করেন।
৩.বঙ্গ নামের উল্লেখ কোথায় কোথায় পাওয়া যায় ?
উঃ। বঙ্গ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋকবেদের ঐতরেয় আরণ্যক-এ। প্রাচীন বাংলায় বঙ্গ বলতে যে অঞ্চলটিকে বোঝানো হতো তা ভৌগোলিকভাবে খুব একটা বড়ো এলাকা ছিল না। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যে বঙ্গ ছিল একটি বিভাগ মাত্র। মহাভারত, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কালিদাসের রঘুবংশম কাব্যেও 'বঙ্গ' নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই সিরাজের লেখাতেও বঙ্গ রাজ্যের কথা রয়েছে।
4.কৈবর্ত বিদ্রোহ কী ?
উঃ। একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে পাল শাসনে কৈবর্ত বিদ্রোহ ঘটে। সেইসময় বাংলার উত্তরভাগে কৈবর্তদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সম্ভবত এরা ছিল জেলে বা নৌকার মাঝি। এই বিদ্রোহের তিনজন নেতা ছিলেন দিব্য, রুদোক ও ভীম। পালরাজ দ্বিতীয় মহীপালের শাসনকালে তাঁর দুর্বলতার সুযোগে দিব্য বিদ্রোহ করেন এবং তা দমন করতে গিয়ে দ্বিতীয় মহীপাল নিহত হন। দিব্য বরেন্দ্র দখল করে রাজা হন। মহীপালের ভাই রামপাল দিব্যকে দমন করে বরেন্দ্র উদ্ধার করতে অসফল হন। পরবর্তীকালে মহীপালের ছোটোভাই রামপাল বাংলা ও বিহারের সামন্ত রাজাদের সহায়তায় কৈবর্ত রাজা ভীমকে পরাজিত ও হত্যা করে বরেন্দ্রসহ বাংলার কামরূপ ও ওড়িশার একাংশে পাল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্যে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিবরণ পাওয়া যায়।
5. রাজপুত কারা? এদের সম্বন্ধে কী জানা যায় ?
উঃ। উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজপুতদের কথা বারবার বলা হয়ে থাকে। এদের দেশ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে হূণ আক্রমণের পরে বেশ কিছু মধ্য এশিয়া উপজাতির মানুষ স্থানীয়দের বিবাহ করে উত্তর পশ্চিম ভারতে বসবাস করতে থাকে। এদের বংশধরদের রাজপুত বলা হয়। তবে রাজপুতরা নিজেদের স্থানীয় ক্ষত্রিয় বলে মনে করত এবং নিজেদের চন্দ্র, সূর্য বা অগ্নি দেবতার বংশধর বলে মনে করত।
6. ভারত ও আরব সভ্যতার যোগাযোগ সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। তুর্কিরা এদেশে আসার অনেক আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে ইসলামের প্রথম যোগাযোগ ঘটেছিল। খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে আরব বণিকরা ভারতের পশ্চিম উপকূলে আসতেন। সিন্ধু মোহনায় মালাবারে আরবি মুসলিম বণিকদের বসতি গড়ে উঠেছিল। এর থেকে যেমন আরবি বণিকরা লাভবান হয়েছিল তেমনি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শাসকরাও এর থেকে লাভবান হয়েছিল। হিন্দু, জৈন এবং মুসলিম বণিকদের এই বাণিজ্য ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
7. গজনির সুলতান মাহমুদ ভারত থেকে লুণ্ঠিত ধনসম্পদ কী কাজে ব্যবহার করেন?
উঃ। গজনির সুলতান মাহমুদ ভারতের ইতিহাসে একজন আক্রমণকারী রূপে চিহ্নিত হয়ে আছেন। কিন্তু তিনি শুধুমাত্র একজন যোদ্ধা ছিলেন না। ভারত থেকে তিনি যেমন প্রচুর সম্পদ লুঠ করেছেন তেমনি। সেগুলি তিনি নিজের রাজ্যে ভালো কাজে ব্যয় করেছিলেন। তাঁর আমলে রাজধানী গজনি ও অন্যান্য শহর সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। সুলতান মাহমুদ সেখানে প্রাসাদ, মসজিদ, গ্রন্থাগার, বাগিচা, জলাধার, খাল ও আমুদরিয়া নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে সেখানে শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বিখ্যাত পণ্ডিত ও দার্শনিক অল বিরুনি ও কবি ফিরদৌসি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন।
খুব ভালো লিখেছেন
ReplyDelete