সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7 History Chapter -3 Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 30 January 2023

সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7 History Chapter -3 Questions And Answers | ক্লাস সেভেন ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর সহায়িকা

 


সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় 
প্রশ্ন উত্তর





সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস সেভেন ইতিহাস তৃতীয়  অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 7 History Chapter -3 Important Questions And Answers | সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয়  অধ্যায় গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class7 History Questions And Answers #Class 7th History Chapter-3 Questions And Answers


⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1

১। সুয়ান জাং উত্তর ভারতের কোন্ কোন্ নগরের ব্যবসায়িক কাজকর্মের রমরমার কথা উল্লেখ করেছেন?

উঃ। থানেশ্বর, কণৌজ ও বারানসী।


২। চোল রাজ্যে কোন্ ধাতুর শিল্প বিখ্যাত ছিল? 

উঃ। ব্রোঞ্জ।


৩। দক্ষিণ ভারতে বণিকদের কী বলা হত।

উঃ। চেট্টি বলা হত।


৪। কবে ও কোথায় কাম্বোডিয়ার বিখ্যাত বিষ্ণু মন্দির তৈরি হয়?

উঃ। দ্বাদশ শতকে কাম্বোডিয়ার আঙ্কোর-ভাটে বিখ্যাত বিঘ্নমন্দির তৈরি হয়। পরে এখানে বৌদ্ধরাও উপাসনা করতেন। এই মন্দিরের গায়ে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনি খোদাই করা হয়েছে।


৫। পাল ও সেন যুগে জিনিস কেনাবেচার প্রধান মাধ্যম কী ছিল? 

উঃ। কড়ি। 


৬। ব্রহ্মদেও ব্যবস্থা কাকে বলা হতো ?

উঃ। প্রাচীন যুগে দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মণদের কিছু জমি দেওয়া হতো, যার কর নেওয়া হতো না। এই জমিদানের ব্যবস্থাকে ব্রহ্মদেও ব্যবস্থা বলা হতো।


৭। পালরাজাদের যুগে কয়েকজন বৌদ্ধ আচার্যের নাম লেখো। 

উঃ। শান্তরক্ষিত, শান্তিদেব, দীপঙ্কর, শ্রীজ্ঞান, গোরক্ষনাথ ও কাহ্নপাদ প্রমুখ ছিলেন পালযুগের বৌদ্ধ আচার্যগণ।


৮। বিক্রমশীল মহাবিহার কে প্রতিষ্ঠা করেন? 

উঃ । পালরাজা ধর্মপাল। 


৯। অষ্টম শতাব্দীতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বৌদ্ধকেন্দ্রের নাম কী ছিল?

উঃ। ইন্দোনেশিয়ার বোরো- বোদুরের বৌদ্ধমন্দির।


১০। চিকিৎসা সংগ্রহ গ্রন্থটি কে রচনা করেন? 

উঃ। পালযুগের বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী চক্ৰপানি দত্ত। 


১১। বাংলার লোকেরা কাদের কাছ থেকে আলু খেতে শিখেছে? 

উঃ। পোর্তুগিজদের কাছ থেকে।


১২। কে, কোথা থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন ? 

উঃ। আচার্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন।


১৩। চর্যাপদগুলি কোন্ সময়ে রচিত হয়? 

উঃ। খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে। 


১৪। 'দক্তি কর্ণামৃত' গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন? 

উঃ। শ্রীধর দাস। 


১৫। শীলরক্ষিত কোন্ বিহারের আচার্য ছিলেন? 

উঃ। ওদন্তপুরী বিহারের আচার্য ছিলেন।


১৬। সৰ্বানন্দ কোন্ গ্রন্থ রচনা করেন। 

উঃ। অভিধান। 


১৭। 'গীতগোবিন্দম' কাব্য কে রচনা করেন? 

উঃ। লক্ষণসেনের সভাকবি জয়দেব।


১৮। ‘পবনদূত' কাব্য কে রচনা করেন? 

উঃ। কবি ধোয়ী।


১৯। বল্লালসেন রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো। 

উঃ। দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর। 


২০। কম্বোডিয়ার কোন্ ঘটনা নিয়ে নৃত্য-সংগীত খুব জনপ্রিয় ছিল? 

উঃ। রামায়ণের ঘটনাবলী নিয়ে।


২১। আজকের বাঙালির খাদ্যতালিকার কোন্ প্রধান উপাদান পাল ও সেন যুগে ছিল না?

উঃ। আজকের খাদ্যতালিকার প্রধান উপাদান ডাল পাল ও সেন যুগের খাদ্য তালিকায় ছিল না। 


২২। রামচরিত কাব্য কে রচনা করেন। 

উঃ। সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত কাব্য রচনা করেন।


২৩। পাল ও সেন যুগে বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কী ছিল? 

উঃ। পাল ও সেন যুগে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যই ছিল বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি।


২৪। পাল ও সেন যুগের কোন্ কোন্ পশু বাংলার বাইরে থেকে এসেছিল ? 

উঃ। ঘোড়া এবং উট বাংলার বাইরে থেকে এসেছিল।


২৫। পালযুগের শিল্পরীতিকে কী বলা হয়? 

উঃ। পালযুগের শিল্পরীতিকে প্রাচ্য শিল্পরীতি বলা হয়। 


২৬। পশ্চিমবঙ্গের কোথায় বৌদ্ধস্তূপ পাওয়া গেছে?

উঃ। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় ভরতপুর গ্রামে বৌদ্ধস্তূপ পাওয়া গেছে। 


২৭। 'ব্রাহ্মণসর্বস্ব' বইটি কে লিখেছিলেন? 

উঃ। লক্ষণসেনের মন্ত্রী হলায়ুধ বৈদিক নিয়ম বিষয়ে 'ব্রাহ্মণসর্বস্ব' নামে বইটি লিখেছিলেন।


⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

১। উর' ও 'নাড়ু' কী ?

উঃ। দক্ষিণ ভারতে চোল শাসন ব্যবস্থায় রাজ্যের প্রধান ছিলেন রাজা। এই শাসনব্যবস্থায় রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশ বা মণ্ডলমে ভাগ করা হয়েছিল। কৃষকদের বসতিকে ঘিরে ওঠা গ্রামকে শাসন করত গ্রাম পরিষদ বা 'উর'। এইরকম কয়েকটি গ্রামকে নিয়ে গঠিত হতো 'নাড়ু'। উর ও নাড়ু – এই দুই স্থানীয় সভা স্বায়ত্বশাসন, বিচার ও রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করত।


২। চর্যাপদ কারা রচনা করেন? 

উঃ। পাল যুগের শেষ দিকে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা স্থানীয় ভাষায় চর্যাপদ রচনা করেন। এই সিদ্ধাচার্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— লুইপাদ, সরহপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ। 


৩। পালযুগে কীভাবে প্রাচীন বাংলা ভাষার জন্ম হয় ?

উঃ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময়কাল হল পালযুগ । পালযুগে আনুমানিক ৮০০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাগধী অপভ্রংশ ভাষার গৌড়বঙ্গীয় রূপ থেকে ধীরে ধীরে প্রাচীন বাংলা ভাষার জন্ম হয়।


৪। সিদ্ধাচার্য কাদের বলা হতো? 

উঃ। পালযুগে মহাযান বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে অন্যান্য দার্শনিক চিন্তাধারা মিলে গিয়ে বজ্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধমতের জন্ম হয়। এই মতের নেতাদের সিদ্ধাচার্য বলা হতো।


৫। নির্বাণ কী?

উঃ। বৌদ্ধধর্ম মতে নির্বাণ হলো মুক্তি, যা লাভ করলে মানুষকে বারবার জন্মাতে হয় না। অশ্বঘোষ এর মতে জীবনে ক্লেশ বা দুঃখের অবসান হলে চিরতরে মুক্তি বা নির্বাণ মেলে।


৬। পালযুগের শিল্পরীতিকে কী বলা হয়? এগুলির মধ্যে কী কী প্রধান ছিল ? 

উঃ। পালযুগের শিল্পরীতিকে প্রাচ্য শিল্পরীতি বলা হয়। এই রীতি এসেছে গুপ্তযুগের শিল্পকলা থেকে। পাল আমলের প্রধান স্থাপত্যের মধ্যে ছিল স্তূপ, বিহার এবং মন্দির।


৭। স্তূপ কী ?

উঃ। প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ ও জৈনরা স্তূপ নির্মাণ করতেন। এও একধরনের মন্দির স্থাপত্য। প্রথমে স্তূপগুলি দেখতে ছিল গোলাকার পরে তা দেখতে অনেকটা মোচার খোলার মতো শঙ্কু আকৃতির হয়ে পড়ে।


৮। ধীমান ও বীটপাল কে ছিলেন?

উঃ। পাল যুগে খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতকে বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলের দুই প্রসিদ্ধ শিল্পী ছিলেন ধীমান ও তাঁর ছেলে বীটপাল। তাঁরা ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প ও ধাতব শিল্পে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন।


৯। বিহার কী? সোমপুরী বিহারের বিবরণ দাও। 

উঃ। বিহারগুলি ছিল বৌদ্ধভিক্ষুদের বাসস্থান এবং বৌদ্ধজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। পাহাড়পুরে অবস্থিত সোমপুরী বিহারটি ছিল পাল আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বিহার। চারকোনা এই মন্দিরে ছিল গর্ভগৃহ, প্রদক্ষিণ পথ, মন্ডপ, সুউচ্চ স্তম্ভ প্রভৃতি। মন্দির নির্মাণে স্থানীয় পোড়ামাটির ইট ও কাদার গাঁথুনি ব্যবহার করা হয়েছিল। 


১০। পাল ও সেন যুগের শিল্প সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ। পাল ও সেন যুগে বাংলায় শিল্পদ্রব্যের মধ্যে প্রধান ছিল বস্ত্রশিল্প, ধাতুশিল্প ও কাষ্ঠশিল্প। কার্পাস বস্ত্র ছিল প্রধান সামগ্রী। দেশে ও বিদেশে বাংলার সুক্ষ্ম সুতির কাপড়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। হস্তশিল্পের মধ্যে ধাতু এবং কাঠের তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস ও গয়নার কথা জানা যায়। ঘর-বাড়ি, মন্দির, পালকি, গোরুর গাড়ি, নৌকা ইত্যাদি তৈরিতে কাঠের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে পাল ও সেন যুগের কাষ্ঠ শিল্পীরা সমাজে বিশেষ গুরুত্ব পেতেন। শিল্পীরা বিশেষ নিগম বা গোষ্ঠীতে সঙ্ঘবদ্ধ ছিলেন। 


১১। কর সংগ্রহ কাকে বলে? এখন কী কী ভাবে কর সংগ্রহ করা হয়?

উঃ। কর অর্থাৎ রাজস্ব, খাজনা, শুল্ক, ট্যাক্স ইত্যাদি। যে ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন, ব্যবসা করেন তিনি ওই জায়গার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি যিনি ওই জায়গার পরিদর্শক তাঁকে অর্থ, ফসল বা অন্য কিছু প্রদান করাকে কর সংগ্রহ বলে। বর্তমানে সরকার মনোনীত ব্যক্তি বা সংস্থা কর সংগ্রহ করেন। বর্তমানে জলকর, পথকর, আয়কর, রাজকর, ব্যবসাকর ইত্যাদি সরকারি দপ্তরে সংগ্রহ করা হয়। আবার পঞ্চায়েতে মনোনীত ব্যক্তি বাড়ি বাড়ি গিয়েও কর সংগ্রহ করে থাকেন।


১২। সামন্তব্যবস্থা কাকে বলে?

উঃ। সামন্ত ব্যবস্থায় সবার উপরে থাকেন রাজা। তার নীচে থাকতেন অল্প কিছু মহাসামন্ত এবং এদের নীচে ছিলেন বেশ কিছু সামন্ত বা মাঝারি শাসক। সবচেয়ে নীচে ছিলেন জনগণ। রাজস্ব ও শাসনের অধিকার এইভাবে স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকে সামন্তব্যবস্থা বলে। 


১৩। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের একমুখী সম্পর্ক ছিল বলা যায় কি?

উঃ। না, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে ভারতের সম্পর্ক একমুখী ছিল এটা ভাবা উচিত নয়। ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি একে অপরের থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেছিল। ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি থেকে শিখেছিল। পানপাতা অন্যান্য বেশ কিছু ফসল কীভাবে ফলাতে হয় তার কৌশল। অপরদিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, নৃত্য-সংগীত, রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন গল্প গাথা বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছিল।


১৪। দক্ষিণ ভারতের কৃষিকার্যে জলসেচ ব্যবস্থা কীরূপ ছিল?

উঃ। দক্ষিণ ভারতের চোলরা কৃষির উন্নতির জন্যে সেচব্যবস্থার প্রতি নজর দিয়েছিলেন। চোল রাজারা তামিলনাড়ু অঞ্চলে কাবেরী এবং তার শাখা নদীগুলি থেকে খাল কেটে সেচব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। সেখানে নদী থেকে সেচের সুযোগ কম ছিল সেখানে পুকুর, বিল কেটে বৃষ্টির জল ধরে রেখে সেচের কাজ করা হত। কোথাও কোথাও কুয়ো খুঁড়েও সেচের ব্যবস্থা করা হয়।


১৫। দক্ষিণ ভারতে মন্দিরকে কেন্দ্র করে লোকালয় গড়ে উঠত কেন ?

উঃ। দক্ষিণ ভারতের রাজশক্তিগুলি বহু মন্দির তৈরি করেছিলেন। এই মন্দিরগুলিকে ঘিরে লোকালয় গড়ে ওঠার কারণ ছিল—মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন যেমন পুরোহিত, রাঁধুনি, মালাকার, গায়ক, নর্তক নর্তকী প্রমুখ মন্দির চত্বরেই বাস করত। মন্দির কর্তৃপক্ষকে রাজা, ব্যবসায়ী ও অভিজাতরা নিষ্কর জমি দান করতেন। সেই জমির ফসল মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের জীবনযাত্রার জন্যে ব্যয় হত।


১৬। পাল ও সেন যুগে বাংলার রাজস্বব্যবস্থা কীরূপ ছিল?

উঃ। পাল ও সেন যুগে বাংলার রাজস্বব্যবস্থা থেকে বিভিন্ন কর আদায় করতেন। কৃষি থেকে উৎপন্ন ফসলের এক ষষ্ঠাংশ রাজারা কৃষকদের থেকে কর নিতেন। ব্যবসাবাণিজ্য করার জন্যও তারা বণিকদের থেকে কর নিতেন। এছাড়াও কিছু অতিরিক্ত কর ছিল। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে প্রজারা রাজাকে কর দিত। সমগ্র গ্রামের উপরেও গ্রামবাসীদের কর দিতে হত। এছাড়া হাট ও খেয়াঘাটের উপরেও কর আদায় করা হত।


১৭. চর্যাপদ কী?

উঃ। চর্যাপদ হল খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকে লেখা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের লেখা কবিতা ও গানের সংকলন। এর ভাষা হলো আদি বাংলা ভাষার নিদর্শন। আচার্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে এই চর্যাপদের পুঁথি উদ্ধার করেন।


⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5

১। পাল যুগের বৌদ্ধধর্মমতের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

উঃ। পাল রাজারা সম্ভবত ক্ষত্রিয় বা কায়স্থ ছিলেন। তাঁরা বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। শশাঙ্কের আমলের বৌদ্ধধর্মের থেকে পালযুগের বৌদ্ধধর্ম ছিল অনেকটাই আলাদা। পালযুগে মহাযান বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে অন্যান্য দার্শনিক চিন্তাধারা মিলে গিয়ে বজ্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধমতের জন্ম হয়েছিল। এই মতের নেতারা সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও সে সময় সহজযান, কালচক্রযান নামে আরো দুটি ধর্মমতের জন্ম হয়েছিল।

ব্রাহ্মণ্য গোঁড়ামির বাইরে এই মতবাদগুলিতে সাধারণ মানুষ উদার ধর্মীয় পথের খোঁজ পেয়েছিল। এই ধর্মীয় ভাবনাগুলিতে সেভাবে দেবদেবীর স্বীকৃতি বা মন্ত্র, পুজো বা আচার অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ছিল না। এই মতে বিশ্বাসীরা গুরু এবং শিষ্যের মধ্যে গভীর যোগাযোগে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন জ্ঞান মানুষের ভিতরেই থাকে যা কোনো শাস্ত্রেই বই পড়ে অর্জন করা যায় না। তাঁরা বলতেন পরিষ্কার মন এবং আত্মার শুদ্ধি হলেই মানুষ নির্বাণ বা চিরমুক্তি লাভ করতে পারে। এই সিদ্ধাচার্যরা তাঁদের মত প্রকাশ করতেন স্থানীয় ভাষায় এবং এই ভাষায় তারা চর্যাপদ লেখা শুরু করেন। এভাবে তাঁদের হাত ধরেই আদি বাংলা ভাষার বিকাশও ঘটে।


২। সেন যুগের ধর্মীয় জীবনের বর্ণনা দাও।

উঃ। পাল যুগের মতো সেন যুগে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেনি। সেন রাজারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মকেই প্রাধাণ্য দিতেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মধ্যে বৈদিক ধর্ম ও পৌরাণিক ধর্ম এই দুইয়েরই মিশ্রণ ঘটে। এই যুগে ইন্দ্র, অগ্নি, সূর্য, কুবের, বৃহস্পতি, গঙ্গা, যমুনা, মাতৃকা, শিব ও বিষ্ণুর পূজা করা হতো। সেন রাজারা ছিলেন শৈব তবে লক্ষ্মণসেন বৈয়ব ছিলেন বলে জানা যায় ।

এই যুগে বৌদ্ধধর্মের অস্তিত্ব থাকলেও আগেকার যুগের মতো সুযোগসুবিধা তারা পেত না। সমাজপতি হিসেবে ব্রাহ্মণরাই সুবিধা ভোগ করতেন। ব্রাহ্মণদের মধ্যে একাধিক উপবিভাগ ছিল। অব্রাহ্মণদের সবাইকে 'সংকর' বা শূদ্র হিসেবে ধরা হতো। সেন যুগের ব্রাহ্মণ্যধর্মী অনুশাসন ছিল কঠোর। ব্রাক্ষ্মণরা অব্রাহ্মণদের কাজ করতে পারলেও, অব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণদের কাজগুলি করতে পারত না।


৩। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ভারতবর্ষের কীরূপ বিচিত্র সংস্কৃতির আদানপ্রদান ঘটেছিল ?

উঃ। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে বহু বিভিন্ন সংস্কৃতির লেনদেন ও সংঘাত ভারতবর্ষে দেখা যায়। আবার ভারতীয় সংস্কৃতির বহু নমুনা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, তিব্বত এবং চিন প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া য়ায়। এথেকে বোঝা যায় যে বহু সংস্কৃতির মিলনে ভারতের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন গড়ে উঠেছিল যা প্রয়োজনে বদলও ঘটেছিল। এর ফলে আজও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আজও নানান বৈচিত্র্যময় স্থানীয় মানুষজন দেখা যায়। ইসলামীয় সংস্কৃতি ভারতে আসার ফলে ভারতের জ্ঞানচর্চার লাভ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। সমাজ, সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এই দুই সংস্কৃতির মেলামেশার ছাপ পড়েছিল। এই বোঝাপড়া একমুখী ছিল না উভয় উভয়কেই প্রভাবিত করেছিল। আবার কখনোও বা সংঘাতও বেধেছিল। তবে অনেকদিনের মেলামেশায় আস্তে আস্তে দুটি ধারাই মিশে যায়।


৪। পাল যুগের ভাস্কর্য সম্পর্কে যা জান লেখো।

উঃ। পাল যুগে শিল্পের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল সেই যুগের ভাস্কর্য গুলি। পাল যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর ছিলেন ধীমান ও তাঁর পুত্র বীটপাল। পাহাড়পুর প্রত্নক্ষেত্রে শিল্পের অসাধারণ নিদর্শন দেখা যায় এখানকার মূল মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলকে। এতে স্থানীয় রীতির প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। এই ফলকগুলিতে রাধা, কৃষ্ণ, যমুনা, বলরাম, শিব, বুদ্ধ অবলোকিতশ্বরের মূর্তি আছে। এই দেবদেবীরদের মধ্যে ব্রাহ্মণ ঐতিহ্যের প্রভাব অনেক বেশি। এ থেকে অনুমান করা যায় পাল রাজারা নিজে বৌদ্ধ হলেও বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি উভয়েরই পৃষ্ঠপোষণা করতেন। পালযুগের ভাস্কর্যের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্প সামগ্রী পাওয়া যায় যা ছিল স্থানীয় লোকায়ত শিল্পের প্রতীক। এগুলিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখদুঃখ, সমাজজীবন, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। তৈরি করেন। সামন্ত প্রভুদের ম্যানর বা খামারে ভূমিদাস বা সার্ফদের খাটিয়ে উৎপাদন করা হতো। এছাড়া ছিলেন স্বাধীন চাষি। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতক ছিল ইউরোপে সামন্ত্রতন্ত্রের সেরা সময়। 


5. বাঙালির খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে কী কী জানা যায় ?

উঃ। বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। প্রাচীন কাব্যে দেখা যায় গরম ভাতে গাওয়া ঘি, সঙ্গে মৌরলা মাছ, নালতে বা পাট শাক, সর পড়া দুধ ও পাকা কলা দিয়ে খাবার বর্ণনা। গরিব লোকেরা খেত নানা ধরনের শাকসবজি, যেমন- বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে, ডুমুর, কচু ইত্যাদি। নদীনালার দেশ বলে বাঙালি রুই, পুটি, মৌরলা, শোল, ইলিশ প্রভৃতি মাছ খেত। সেকালে বাঙালিরা সবাই না খেলেও হরিণ, ছাগল, নানা রকম পাখি, কচ্ছপের মাংস, কাঁকড়া, শামুক, শুকনো মাছ অনেকেই খেতেন। তাছাড়া আখের গুড়, দুধ, এবং তার থেকে তৈরি দই, পায়েস, ক্ষীর প্রভৃতি ছিল বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্যবস্তু। আর ছিল বাংলায় উৎপন্ন লবণ। মহুয়া ও আখ থেকে পানীয়ও বাঙালি সমাজে চালু ছিল। অনেক পরে মধ্যযুগে বাংলার মানুষেরা পোর্তুগিজদের কাছ থেকে আলু খেতে শিখেছে।


6. চক্রপাণিদত্ত কে ছিলেন?

উঃ। পালযুগের একজন বিখ্যাত চিকিৎসা-বিজ্ঞানী ছিলেন চক্রপাণিদত্ত। প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী চরক ও সুশ্রুতের রচনার ওপর তিনি টীকা লিখেছিলেন। তিনি সম্ভবত বীরভূম জেলার মানুষ ছিলেন। এছাড়া ভেষজ গাছ-গাছড়া, ঔষধের উপাদান, পথ্য প্রভৃতি নিয়েও তিনি বই লেখেন। তাঁর লেখা সেরা বইটি হলো চিকিৎসা সংগ্রহ।


7. রামচরিত সম্বন্ধে যা জানো লেখো।

উঃ। পালরাজা রামপালের পুত্র মদনপালের শাসনকালে আনুমানিক ১১৪০-৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত কাব্য রচনা করেন। রামায়ণের আদলে লেখা হলেও এই কাব্য শুধুই বাল্মীকি রামায়ণের পুনরাবৃত্তি নয়। এই কাব্যে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের প্রেক্ষাপটে এক রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ প্রচার করা হয়েছিল। রামায়ণের ভূগোল আর রামচরিতের ভৌগলিক বিবরণ এক নয়। অযোধ্যার বদলে এখানে রামপালের রাজধানী রামাবতীর কথা বলা হয়েছে। রামায়ণের সীতা উদ্ধারের কাহিনির সঙ্গে রামপালের বরেন্দ্রভূমি উদ্ধারের তুলনা করা হয়েছে। রামচরিতের ভাষা ছিল জটিল ও সংস্কৃত। এই কাব্য পণ্ডিত ও শিক্ষিত মানুষদের জন্য লেখা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের এই কাব্য পড়ার সামর্থ্য ছিল না।


8.নির্বাণ কী? এর বিভিন্ন ব্যাখ্যাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উঃ। বৌদ্ধধর্মে নির্বাণ বা মুক্তিলাভ করলে মানুষকে বারবার জন্মাতে হয় না। বৌদ্ধধর্মে নির্বাণ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা একটি সুন্দর উপমার সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন কুষাণ সম্রাট কণিষ্কের সমসাময়িক লেখক অশ্বঘোষ। তিনি লেখেন যে প্রদীপের তেল ফুরিয়ে গেলে যেমন তার শিখা নিভে যায় তেমনি জীবনে ক্লেশ বা দুঃখের অবসান হলে চিরতরে মুক্তি বা নির্বাণ মেলে। বৌদ্ধধর্মের হীনযান শাখাটি এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেন। অপরদিকে বৌদ্ধধর্মের মহাযানীদের ধারণা যে নির্বাণ এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো কিছুই নেই। পরবর্তীকালে অবশ্য এই ধারণাগুলিতে অনেক রকম পরিবর্তন ঘটেছে।


9.নালন্দা বৌদ্ধবিহারের বিবরণ দাও।

উঃ। সম্ভবত গুপ্ত সম্রাটদের আমলে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে আজকের বিহার রাজ্যে নালন্দা বৌদ্ধবিহার তৈরি হয়েছিল। এর খ্যাতি সমগ্র এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। হর্ষবর্ধন ও পাল রাজারা এই বৌদ্ধবিহারকে সাহায্য করতেন। সুদূর তিব্বত, চিন, কোরিয়া ও মঙ্গোলিয়া থেকে এখানে ছাত্ররা পড়তে আসতেন। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে সুয়ান জাং বা হিউয়েন সাঙ এখানে শিক্ষালাভ করেন। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্ররা এখানে পড়ার সুযোগ পেত। নালন্দার সমৃদ্ধির যুগে এখানে দশ হাজার আবাসিক ভিক্ষু থাকতেন। তার মধ্যে ১৫০০ জন শিক্ষক ছিলেন এবং ৮৫০০ জন ছাত্র। ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত এর খ্যাতি বজায় ছিল। ওই শতকেই তুর্কি অভিযানকারীরা এই অঞ্চল আক্রমণ করে এই মহাবিহারের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল।


10. বিক্রমশীল মহাবিহারের বর্ণনা দাও।

উঃ। পালরাজা ধর্মপাল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মগধের উত্তরভাগে ভাগলপুর শহরের কাছে বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী পাঁচশো বছর এটি টিকেছিল। এখানে বৌদ্ধধর্ম চর্চা ও শিক্ষার জন্য একশোর বেশি আচার্য ছিলেন। এখানে ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, দর্শন প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হত। তিন হাজার ছাত্রের পড়া এবং বিনা খরচায় তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা এখানে ছিল। শিক্ষা শেষে তাদের উপাধি প্রদান করা হত। বিক্রমশীল ছিল বজ্রযান বৌদ্ধমত চর্চার বড়ো কেন্দ্র। এখানে বহু মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ছিল। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ ছিলেন এই মহাবিহারের একজন মহাচার্য। ত্রয়োদশ শতকে তুর্কি অভিযানকারীরা এই মহাবিহারকে ধ্বংস করে।


11.সে যুগের সাহিত্য ও সমাজ সম্বন্ধে কী জানা যায় ?

উঃ। সাহিত্য হলো সমাজের আয়না। সে সময় একদিকে রাজা লক্ষণসেনের রাজসভার কবিদের সংস্কৃত ভাষায় লেখা কাব্যগুলিতে ধনী ও বিলাসী জীবনের ছবি ফুটে উঠেছিল। রাজা লক্ষণসেন কে কৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করে কবিরা স্তুতি করেছেন। গ্রামের সম্পন্ন কৃষকদের জীবনযাত্রার ছবিও নানা রচনায় ফুটে উঠেছে। আবার অন্যদিকে সমসাময়িক সাহিত্যে গরিব মানুষের জীবনেরও ছায়া পড়েছে। খিদেয় কাতর শিশু, গরিব লোকের ভাঙা কলসি, এই সব চিত্রও কবিরা ব্যবহার করেছেন। চর্যাপদের একটি কবিতায় রয়েছে হাঁড়িতে ভাত নেই, নিত্য উপবাস'। এটাই চরম দারিদ্র্যের নিদর্শন।


12. ডাক বা খনার বচন সম্বন্ধে কী জানা যায় ?

উঃ। প্রাচীন বাংলার সমাজে কৃষি যে প্রধান জীবিকা ছিল ডাক ও খনার বচন-এর ছড়াগুলো তার প্রমাণ। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় লেখা এই রচনা বা ছড়াগুলি মানুষের মুখে মুখে চলত। তারা এই ছড়াগুলো থেকেই নানা দরকারি জ্ঞান পেত। কোন ঋতুতে কী ফসল বুনতে হবে, কোন ফসলের জন্য কেমন মাটি দরকার, কতটা বৃষ্টি প্রয়োজন এসবের নানা হদিস এই ছড়াগুলিতে রয়েছে। যেমন : 'খনা ডেকে বলে যান / রোদে ধান ছায়ায় পান।' “দিনে রোদ রাতে জল / তাতে বাড়ে ধানের বল।'


For many business ideas, visit this site

👉( https://www.psychoprincipal.com/)


3 comments:

  1. আমি বলেছি প্রকল্পের নাম কী

    ReplyDelete