তৃতীয় অধ্যায়
শিলা
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ
1. উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলা কয় প্রকার ?
উঃ । উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলা দু - প্রকার ।
2. একটি নিঃসারী আগ্নেয় শিলার নাম লেখো ।
উঃ । ব্যাসল্ট ।
3. একটি উপপাভানিক শিলার নাম লেখো ।
উঃ । ডোলেরাইট ।
4. আগ্নিক শিলায় শতকরা কত ভাগ সিলিকা থাকে ?
উঃ । 65 % -এর বেশি সিলিকা থাকে ।
5. নিঃসারী শিলার দানার ব্যাস কত ?
উঃ । 1 মিলিমিটারের কম ।
6. ক্ষারকীয় শিলায় ক্ষারকীয় অক্সাইড কত পরিমাণ থাকে ?
উঃ । 55 % -এর বেশি ।
7. পাতালিক শিলার দানার ব্যাস কত ?
উঃ । 3 মিলিমিটারের বেশি ।
৪. কোন পাথরের প্রবেশ্যতা খুব বেশি ?
উঃ । বেলেপাথরের প্রবেশ্যতা খুব বেশি ।
9. কোন্ শিলান্তরে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ?
উ: । সচ্ছিদ্র পাললিক শিলাস্তরে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ।
10. একটি লৌহপ্রস্তর জাতীয় পাললিক শিলার নাম লেখো ।
উঃ । হেমাটাইট ।
11. শিলা কী ?
উঃ । শিলা আসলে এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ ।
12. গ্রানাইট শিলা কোন্ কোন্ খনিজ দ্বারা গঠিত ?
উঃ । গ্রানাইট শিলা কোয়ার্টজ , ফেল্ডসপার , মাইকা , হর্নব্লেড প্রভৃতি খনিজ দ্বারা গঠিত ।
চতুর্থ অধ্যায় চাপবলয় ও বায়ু প্রবাহ প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো
👉 ( চতুর্থ অধ্যায় চাপবলয় ও বায়ু প্রবাহ প্রশ্ন উত্তর )
13. সমসত্ত্ব ও অসমসত্ত্ব মিশ্রণের একটি পার্থক্য বলো ।
উঃ । সমসত্ত্ব মিশ্রণে উপাদানগুলো সব জায়গায় সম অনুপাতে থাকে । অসমসত্ত্ব মিশ্রণে উপাদানগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুপাতে থাকে ।
14. পেট্রোলজি কী ?
উঃ । বিজ্ঞানের যে বিশেষ শাখায় শিলা ও তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে পেট্রোলজি বলা হয় ।
15. মিনরেলজি কী ?
উঃ । বিজ্ঞানের যে শাখায় খনিজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে মিনরেলজি বলা হয় ।
16. আগ্নেয় শিলার আরেক নাম কী ? কেন ?
উঃ । আগ্নেয় শিলার আরেক নাম প্রাথমিক বা আদিশিলা । পৃথিবীতে প্রথম এই শিলার সৃষ্টি হওয়ায় জন্য এই শিলার আরেক নাম প্রাথমিক বা আদিশিলা ।
17. নিঃসারী আগ্নেয় শিলার দানাগুলো সূক্ষ্ম হয় কেন ?
উঃ । এই শিলা দ্রুত জমাট বেঁধে গঠিত হয় বলে এর দানাগুলো বেশ সূক্ষ্ম ।
18. উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা কয় প্রকার ও কী কী ?
উঃ । উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা দু - রকম । যথা — উপপাতালিক ও পাতালিক শিলা ।
19. কোন্ কোন্ খনিজে কেলাসের গঠন ভালোভাবে দেখা যায় ?
উঃ । কোয়ার্টজ , টোপ্যাজ , ব্যালসাইট , হিরে প্রভৃতি খনিজগুলোতে কেলাসের গঠন ভালোভাবে দেখা যায় ।
20. একটি মধ্যবর্তী শিলার উদাহরণ দাও । তাতে ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমাণ কত ?
উঃ । একটি মধ্যবর্তী শিলা হল অ্যান্ডেসাইট যাতে ক্ষারকীয় অক্সাইডের পরিমাণ 45 % -3551
21. পেরিডোটাইট শিলাচ সিলিকার পরিমাণ কত ?
উঃ । দেরিডোটাইট শিলায় সিলিকার পরিমাণ 45 % -এর কম ।
22. বিশ্বারলাইট কী ধরনের শিলা ?
উঃ । কিষারলাইট একটি অভিক্ষারকীয় শিলা ।
23. ব্যাসল্ট গঠনকারী খনিজ ?
উঃ । ব্যাসল্ট গঠনকারী খনিজগুলি হল —– কোয়ার্টজ , ফেসপার , অলিভিন , পাইরঙ্গিন ।
24. শিলার প্রবেশ্যতা বলতে কী বোঝ ?
উঃ । শিলার প্রবেশ্যতা বলতে শিলার মধ্যে দিয়ে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের প্রবেশ করার ক্ষমতাকে বোঝায় ।
25 . তা কী ?
উঃ । সজ্জিতা হল শিলার মধ্যকার শূন্যস্থান এবং শিলার মোট আয়তনের অনুপাত ।
26. পাইরোক্লাস্টিক শিলার একটি উদাহরণ দাও ।
উঃ । ভুফ একটি পাইরোফ্লাস্টিক শিনা ।
27. রাসায়নিক উপায়ে গঠিত সালফেট জাতীয় পাললিক শিলার নাম কী ?
উঃ । রাসায়নিক উপায়ে গঠিত সালফেট জাতীয় পাললিক শিলা হল রক জিপসাম ।
28. ডায়াটম মাটি কী ?
উঃ । জৈবিক উপায়ে গঠিত বালিময় পাললিক শিলা ।
29. একটি কার্বনসম পাললিক শিলার উদাহরণ দাও ।
উঃ । বিটুমিনাস কয়লা ।
30. চুনাপাথরের রাসায়নিক নাম কী ?
উঃ । ক্যালশিয়াম কার্বনেট ।
31. চুনাপাথর কী কী কাজে লাগে ?
উঃ । সিমেন্ট তৈরিতে , লৌহ ইস্পাত শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে চুনাপাথর ব্যবহৃত হয় ।
32. লালকেল্লা , খাজুরাহোর মন্দির , সোনার কেল্লা কোন্ পাথরে তৈরি ?
উঃ । এগুলি বেলেপাথরের তৈরি ।
33. শেল কীভাবে প্লেটে পরিণত হয় ?
উঃ । শেল রূপান্তরের মাধ্যমে প্রচণ্ড চাপে স্নেটে রূপান্তরিত হয় ।
34. ফিলাইট কী ?
উঃ । ফিলাইট এক ধরনের কাদাপাথর ।
35. পিট কালা কীসে রূপান্তর হয় ?
উঃ । পিট কয়লা গ্রাফাইটে রূপান্তর হয় ।
36. ব্ল্যাকবোর্ড লেখার কাজে কোন পাথর ব্যবহৃত হয় ?
উঃ । ব্ল্যাকবোর্ড লেখার কাজে রূপান্তরিত শিলা প্লেট পাথর ব্যবহার করা হয় ।
37. রাস্তাঘাট নির্মাণে কোন শিলা ব্যবহার হয় ?
উঃ । রাস্তাঘাট নির্মাণে রূপান্তরিড শিলা নিস ব্যবহার করা হয় ।
38. গ্রানাইট শিলা কোথায় দেখা যায় ?
উঃ । রাঁচিসহ সমগ্র ছোটোনাগপুর অঞ্চল প্রধানত গ্রানাইট শিলায় গঠিত ।
39. কোন্ ভূমিরূপ দাক্ষিণাত্য মালভূমির ডেকানট্র্যাপ - এর অংশ ?
উঃ । মহারাষ্ট্রের পঞ্চগণি , মহাবালেশ্বর অঞ্চলে চ্যাপটা মাথা বিশিষ্ট টেবিলের মতো ভূমিরূপই দাক্ষি ভূমি ডেকানট্যাপ - এর অংশ ।
40. কোন্ অঞ্চলে বহুতল বাড়ি , রাস্তাঘাট নির্মাণ করা উচিত নয় ?
উঃ । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বহুতল বাড়ি , রাস্তাঘাট নির্মাণ করা উচিত নয় ।
41. শিলা গঠনকারী দুটি খনিজের নাম বলো ।
উঃ সিলিকন , অক্সিজেন ।
42. কোয়ার্টজ কোন কাজে ব্যবহৃত হয় ?
উঃ । গহনা তৈরি , কাচ ও পাথর কাটতে কোয়ার্টজ ব্যবহৃত হয় ।
43. প্লাজিওক্লেজ ফেসপারের মূল রাসায়নিক উপাদান কী ?
উ: । প্ল্যাজিওক্লেজ ফেন্ডসপারের মুল রাসায়নিক উপাদান সোডিয়াম ।
44. অর্থোক্লেজ ফেল্ডসপারের মূল উপাদান কী ? এটি কী রঙের হয় ?
উ: । পটাশিয়াম । এটি গোলাপি রঙের হয় ।
45. ফেসপার কী কাজে লাগে ? '
উ: । ফেল্ডসপার সেরামিক শিল্পে ও কাঁচ তৈরিতে ব্যবহার হয় ।
46. একটি নরম খনিজের নাম করো ।
উঃ । একটি নরম খনিজ হল জিপসাম ।
47. মোহ স্কেল কী ?
উঃ । খনিজের কাঠিন্য পরিমাপের স্কেল হল মোহ স্কেল । এই স্কেলে 1-10 পর্যন্ত দশটি ভাগ আছে ।
48. মোহস্কল অনুসারে সর্বোচ্চ কাঠিন্যের খনিজ ও সর্বনিম্ন কাঠিন্যের খনিজের নাম লেখো ।
উঃ । সর্বোচ্চ কাঠিন্যের খনিজ হল হিরে এবং সর্বনিম্ন কাঠিন্যের খনিজের নাম হল ট্যাঙ্ক ।
49. জিপসাম যুক্ত অঞ্চলে ভূমি কেমন হয় ?
উঃ । জিপসাম যুক্ত অঞ্চলে ভূমি নরম ও হালকা হলুদ হয় ।
50. অতিরিক্ত খনিজযুক্ত মাটির নাম করো ।
উঃ । ল্যাটেরাইট মাটি ও লাল মাটি ।
51. গ্রানাইট শিলা গঠিত মাটির রং লাল কেন ?
উঃ । লোহার অক্সাইড বেশি পরিমাণে থাকায় গ্রানাইট শিলা গঠিত মাটির রং লাল ।
52. মাটি সৃষ্টির পূর্বের ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাচূর্ণকে কী বলা হত ?
উঃ । রেগোলিথ বলা হয় ।
53. কেলাসের গঠন দেখতে কেমন হয় ?
উঃ । কেলাসের গঠন চিনির দানা বা মিছরির টুকরোর মতো দেখতে হয় ।
54. স্ট্যালাগমাইট কাকে বলে ?
উঃ । কখনো কখনো গুহার মেঝে থেকে চুনের স্তর ওপরের দিকে উঠে যায় তাকে স্ট্যালাগমাইট বলে ।
55. ব্যান্ডেড নিস কাকে বলে ?
উঃ । নিস - এ অনেক সময় বলয়ের আকারে খনিজগুলি একসাথে থাকে তাই এই ধরনের নিসকে ব্যান্ডেড নিস বলে । 56. কাকে ভারতের খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার বলা হয় ? উঃ । ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ভারতের খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার বলা হয় ।
57. খনিজ কী ?
উঃ । শিলার মধ্যে অবস্থিত কেলাসিত , নির্দিষ্ট রাসায়নিক অংশযুক্ত নির্দিষ্ট পারমাণবিক গঠনযুক্ত মৌলিক বা যৌগিক পদার্থ হল খনিজ ।
58. মার্বেলের সংস্পর্শে অ্যাসিড মিশ্রিত জল আনা উচিত হয় কেন ?
উঃ । অ্যাসিডে মার্বেল দ্রুত ক্ষয়ে যায় তাই মার্বেলের সংস্পর্শে অ্যাসিড মিশ্রিত জল আনা উচিত নয় ।
59. ল্যাটেরাইট মাটি কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উঃ । লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড অতিরিক্ত পরিমাণে থাকলে ল্যাটেরাইট মাটি সৃষ্টি হয় ।
60. বাড়ির টালি তৈরিতে কোন পাথর ব্যবহৃত হয় ? কেন ?
উঃ । কাদাপাথর বেশ নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির । এই শিলা পাতলা স্তরে ভাঙা যায় বলে বাড়ির টালি তৈরি করতে এই পাথর প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ
1. আগ্নেয় শিলাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ? নিঃসারী আগ্নেয় শিলা কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখো ।
উঃ । আগ্নেয় শিলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা — নিঃসারী শিলা ও উদ্বেধী শিলা । ভূ - অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো দুর্বল ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে আগ্নেয় শিলা গঠন করে তাকে নিঃসারী আগ্নেয়শিলা বলে । যেমন — ব্যাসন্ট ।
2. কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর ভিত্তি করে শিলাগুলিকে পরস্পরের থেকে আলাদা করা যায় ?
উঃ । রং , কাঠিন্য , উজ্জ্বলতা , ভঙ্গুরতা , গঠন ও রাসায়নিক বিক্রিয়া করার ক্ষমতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তি করে । শিলাগুলিকে পরস্পরের থেকে আলাদা করা হয় ।
3. উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা কাকে বলে । উদাহরণসহ লেখো ।
উঃ । ভূ - অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা ভূত্বকের দুর্বল ফাটল বা ছিদ্রের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে না পেরে ভূ - অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে আগ্নেয় শিলা গঠন করে তাকে উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা বলে । যেমন — গ্রানাইট , ডোলেরাইট ।
4. উদ্বেধী আগ্নেয়শিলাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ? পাতালিক ও উপপাতালিক শিলা কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখো ।
উঃ । উদ্বেধী আগ্নেয়শিলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা — পাতালিক শিলা ও উপপাতালিক শিলা । যেমন- ম্যাগমা ভূ - অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অতি ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলা সৃষ্টি করে তাকে পাতালিক শিলা বলে । যেমন — গ্রানাইট । ম্যাগমা ভূ - অভ্যন্তরের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে যে শিলা সৃষ্টি করে তাকে উপপাতালিক শিলা বলে । যেমন – ডোলেরাইট ।
5. আগ্নেয় শিলা কাকে বলে ?
উঃ । পৃথিবী সৃষ্টির সময় উত্তপ্ত ও তরল অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ভূত্বকের মধ্যে এবং ওপরে যে কঠিন শিলা সৃষ্টি হয়েছে তাকে আগ্নেয় শিলা বলে ।
6. আগ্নেয় শিলার বিশেষত্বগুলি লেখো ।
উঃ । আগ্নেয় শিলার বিশেষত্বগুলি হল – ( I ) এই শিলা শক্ত ও ভারী , ঘনত্ব খুব বেশি হয় । ( II ) এই শিলায় উজ্জ্বল কেলাসের মতো গঠন দেখা যায় । ( iii ) এই শিলায় উল্লম্ব দারন ও ফাটল দেখা যায় তাই এর প্রবেশ্যতা বেশি । ( iv ) এই শিলার রং হালকা থেকে গাঢ় হতে পারে । ( v ) এই শিলায় ভঙ্গুরতা কম ও ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ।
7. কার্স্ট ভূমিরূপ কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উঃ । চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে নদী বা বৃষ্টির জল মাটিকে দ্রুত ক্ষয় করে ভূগর্ভে গিয়ে ছোটো বড়ো নানা আকৃতির বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপ গর্ভের সৃষ্টি করে । একে বলা হয় কার্স্ট ভূমিরূপ ।
8. শিলা থেকে কীভাবে মাটি সৃষ্টি হয় ?
উঃ । বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন নদী , বায়ু , বৃষ্টিপাত , সমুদ্রতরঙ্গ , হিমবাহ দ্বারা বহুদিন ধরে শিলা ও শিলা গঠনকারী খনিজগুলো ক্ষয় হয়ে সুক্ষ্ম , শিথিল শিলাচূর্ণ রূপে অবস্থান করে । পরে এর সাথে জল , বায়ু ও জৈবপদার্থ মিশে গিয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।
9. অঞ্চলভেদে কীভাবে শিলার রূপান্তর ঘটে ?
উঃ । প্রধানত চাপের ফলে বিশাল অঞ্চল জুড়ে শিলার আঞ্চলিক বা ব্যাপক রুপান্তর ঘটে । যেমন— প্লেট । স্পর্শ বা তাপের ফলে ছোটো অঞ্চল জুড়ে শিলার স্পর্শ বা স্থানীয় রূপান্তর ঘটে । যেমন- মার্বেল ।
10. চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কোনো বাঁধ বা জলাধার নির্মাণ করা উচিত নয় কেন ?
উঃ । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কোনো বাঁধ বা জলাধার নির্মাণ করা উচিত নয় কারণ নদী বা বৃষ্টির জলের সংস্পর্শে এলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে । এছাড়া চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বহুতল বাড়ি , অতিরিক্ত রাস্তাঘাট নির্মাণ না করাই শ্রেয় ।
11. লবণাক্ত মাটি কীভাবে তৈরি হয় ? এই মাটির বৈশিষ্ট্য কী ?
উঃ । সমুদ্রের ধারের শিলাচূর্ণ জোয়ারের জলের সংস্পর্শে এসে লবণাস্ত মাটি তৈরি করে । এই মাটিতে অধিক পরিমাণে সামুদ্রিক লবণ মিশে থাকে । পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায় ।
12. পাললিক শিলার বিশেষত্বগুলি কী কী ?
উঃ । পাললিক শিলার বিশেষত্বগুলি হল- ( i ) এই শিলায় স্তরায়ন ও কাদার চিড় খাওয়া দাগ লক্ষ করা যায় । ( II ) একমাত্র এই শিলাতেই জীবাশ্ম দেখা যায় । ( iii ) এই শিলায় সক্রিয়তা ও ভঙ্গুরতা দেখা যায় । ( iv ) এই শিলার প্রবেশ্যতা বেশি । ( v ) এই শিলার ক্ষয় প্রতিরোধের ক্ষমতা বিভিন্ন হয় । ( vi ) কয়লা , খনিজ তেল , প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার এই শিলা । ( vi ) কঠিন আগ্নেয় শিলার থেকে কম , দারণ , ফাটল বা কেলাসের গঠন থাকে না ।
13. প্রকৃতির বেশিরভাগ শিলা গঠনকারী খনিজ কী নিয়ে গঠিত ?
উঃ । প্রকৃতির বেশিরভাগ শিলা গঠনকারী খনিজ সিলিকন , অক্সিজেন , লোহা , অ্যালুমিনিয়াম , ম্যাগনেশিয়াম , ক্যালশিয়াম , সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এই আটটি মৌল নিয়ে গঠিত ।
14. আগ্নেয় শিলায় কীভাবে কেলাস গঠিত হয় ?
উঃ । সাধারণত আগ্নেয় শিলা তৈরি হওয়ার সময় তার মধ্যে গরম খনিজ জল থেকে যায় যা শিলার মধ্যে শিরার মতো অবস্থান করে । শিলা ঠান্ডা হলে এই শিরার আকারে খনিজ জলের অণু কেলাস গঠন করে ।
15. জীবাশ্ম কী ? এটি কোন্ শিলায় দেখা যায় ?
উঃ । স্তরে স্তরে জমাট বেঁধে পাললিক শিলা সৃষ্টির সময় কখনো কখনো সামুদ্রিক উদ্ভিস বা প্রাণী তার মধ্যে চাপা পড়ে যায় । পরে পাললিক শিলার মধ্যে ওই উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ প্রস্তরীভূত হলে তাদের দেহাবশেষ ছাপ থেকে যায় , একে বলে জীবাশ্ম । জীবাশ্ম পাললিক শিলায় দেখা যায় । জীবাশ্ম
16. রেগোলিথ কী ?
উঃ । বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন — নদী , বায়ু , বৃষ্টিপাত , সমুদ্রতরঙ্গ , হিমবাহ দ্বারা বহুদিন ধরে শিলা গঠনকারী খনিজগুলো ক্ষয় হয়ে সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণ রূপে অবস্থান করে । পরে এর সাথে জল , বায়ু ও জৈবপদার্থ মিশে গিয়ে মাটির সৃষ্টি করে , এই ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাচূর্ণ হল রেগোলিথ ।
17. গ্রানাইট শিলা চিক চিক করে কেন ?
উঃ । গ্রানাইট শিলার মধ্যে থাকা খনিজগুলির মধ্যে মাইকা অত্যন্ত মসৃণ ও চকচকে । তাই গ্রানাইট শিলায় আলো পড়লে চিকচিক করে ।
18. ছোটনাগপুরকে খনিজ সম্পদের ভাঙার বলে কেন ?
উঃ । ভারতে ছোটনাগপুর অঞ্চলে বিভিন্ন খনিজ সম্পদ যেমন — লোহা , তামা , বক্সাইট , ম্যাঙ্গানিজ , ডলোমাইট , প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বলে একে ভারতের খনিজ সম্পদের ভাঙার বলে ।
19. স্ট্যালাগটাইট কাকে বলে ?
উঃ । চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে পাথরের মতো দেখতে সূঁচালো জিনিস নীচের দিকে নেমে আসে । এই ধরনের চুনের স্তরকে বলে স্ট্যালাগটাইট ।
20. ভার ঢল কাকে বলে ?
উঃ । পাললিক শিলার স্তরগুলি একটি অপরটির সঙ্গে যে তলে মিলিত হয় সেই সংযোগ তলকে স্তরায়ন তল বলে ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরঃ
1. শিলাচক্র কাকে বলে ?
উঃ । আগ্নেয় ও পাললিক শিলা ভীষণ তাপ , চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় । আবার বহু বছর পর এইসব শিলা ভূ - আলোড়নের ফলে ভূগর্ভে প্রবেশ করে ম্যাগমাতে পরিণত হয় , আবার তা থেকে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় । আবার কখনো রূপান্তরিত শিলা প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয় পেয়ে ও অপসারিত হয়ে নদী বা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয় বা জমাট বেঁধে পাললিক শিলা তৈরি করে । প্রকৃতিতে শিলার উৎপত্তি ও এক শিক্ষা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তর একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলেছে । এইভাবে ক্রমান্বয়ে তিন প্রকার শিলার বিভিন্ন পদ্ধতিতে চক্রাকারে আবর্তনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হল শিলাচক্র ।
2. পাললিক শিলার অপরিহার্যতা আলোচনা করো ।
উঃ । প্রায় 30-35 কোটি বছর আগে ভূ - আন্দোলনের ফলে পৃথিবীর অরণ্য ভূগর্ভে চাপা পড়ে যায় এবং সেখানকার চাপ ও তাপে উদ্ভিদের কাণ্ডে সঞ্চিত কার্বন স্তরীভূত হয়ে কয়লায় পরিণত হয় । 7 থেকে 10 কোটি বছর আগে পাললিক শিলাস্তরে নানা প্রাণী চাপা পড়ে ও সেখানকার চাপ ও তাপে তাদের দেহাবশেষ হাইড্রোজেন ও কার্বনের দ্রবণে পরিণত হয়ে নিজ তেলের সৃষ্টি হয় । খনিজ তেলের ওপরের স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি দেখা যায় । একমাত্র সচ্ছিদ্র পাললিক শিলান্তরই খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ।
3. কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ । কোয়ার্টজ — গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট শিলার মূল উপাদান , খুব কঠিন , সাদা , বড়ো ভূজাকৃতি কেলাসাকার । গয়না তৈরি , কাচ ও পাথর কাটতে এটি ব্যবহৃত হয় ।
● ফেসপার - সাদা বা গোলাপি রঙের ফেল্ডসপার গ্রানাইট ও ব্যাসন্টের অন্যতম উপাদান । ফেল্ডসপার প্লেটের মতো মসৃণ , সেরামিক শিল্প , কাচ তৈরিতে এর ব্যবহার হয় । অম্ল – চকচকে , পাতলা , মসৃণ ও ভঙ্গুর হয় । তাপ ও বিদ্যুতের কুপরিবাহী , বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম , প্রতিমার সাজ ও রং তৈরিতে অভ্র ব্যবহৃত হয় । এর উপস্থিতি থাকার ফলে গ্রানাইট শিলা চিকচিক করে ।
● জিপসাম - বেশ নরম হালকা হলুদ রঙের হয় । সিমেন্ট শিল্পে , সার তৈরি ও নির্মাণ কার্যে এর ব্যবহার হয় ।
4. প্রধান দুটি আগ্নেয় শিলার পরিচয় দাও ।
উঃ । গ্রানাইট ও ব্যাসন্ট হল প্রধান দুটি আগ্নেয় শিলা । গ্রানাইট : মহাদেশীয় ভূত্বক এই আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত । কোয়ার্টজ , ফেসপার , মাইকা ও হর্নব্রেন্ড খনিজ দ্বারা গঠিত গ্রানাইট শিলা হালকা সাদা , ধূসর থেকে গোলাপি রঙের হয়ে থাকে । এই শিলা অপ্রবেশ্য , খুব ভারী ও শক্ত হওয়ায় ফলে গ্রানাইটের ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি । ভূ - অভ্যন্তরে অতি ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বাঁধায় গ্রানাইট শিলার দানাগুলো কিছুটা বড়ো হয় । এই শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ সাধারণত গোলাকার হয় ।
ব্যাসল্ট ঃ মহাসাগরীয় ভূত্বক এই আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত । ব্যাসল্ট শিলা গঠনকারী প্রধান খনিজগুলি হল কোয়ার্টজ , ফেল্ডসপার , অলিভিন ও পাইরক্সিন । খুব ভারী ও শক্ত এবং ক্ষয় প্রতিরোধী এই শিলা গাঢ় ধূসর থেকে কালো রঙের হয়ে থাকে । ব্যাসন্ট শিলার উল্লখ দারণ ও ফাটলের সংখ্যা খুব বেশি থাকায় এর প্রবেশ্যতা যথেষ্ট বেশি । খুব দ্রুত জমাট বেঁধে গঠিত হওয়ার ফলে এই শিলার দানাগুলো বেশ সুক্ষ্ম । এই শিলাদ্বারা গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপ সাধারণত গোলাকার হয় ।
5. শিলার ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করো ।
উঃ । মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপে শিলার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
আগ্নেয় শিলার ব্যবহার : ( 1 ) বাড়ি ও তার মেঝে তৈরিতে গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয় । ( II ) রাস্তাঘাট , রেল লাইন ও ট্রামলাইনে ব্যাসল্ট শিলার ব্যবহার দেখা যায় । ( III ) জলাধার ও বাঁধ নির্মাণে আগ্নেয় শিলার ব্যবহার হয় । ( iv ) সোনা , রূপা , দত্তা ও সিসা প্রভৃতি খনিজ আগ্নেয় শিলা থেকে সংগৃহীত হয় । ( v ) কৃষিকাজের ক্ষেত্রে ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি কালো মাটিতে তুলো ও গম চাষ ভালো হয় ।
পাললিক শিলার ব্যবহার : ( i ) প্রাচীনযুগে বিভিন্ন দুর্গ , প্রাসাদ প্রভৃতি নির্মাণ কার্যে বেলেপাথরের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । ( II ) সিমেন্ট , লৌহ - ইস্পাত , রাসায়নিক শিল্পে এবং গৃহনির্মাণে চুনাপাথর ও ডলোমাইট ব্যবহৃত হয় । ( iii ) পাললিক শিলা থেকে সৃষ্ট পলিমাটি কৃষিকাজের অত্যন্ত উপযোগী । ( iv ) রাসায়নিক তৈরিতে পাললিক শিলা যেমন চিনামাটির ব্যবহার দেখা যায় । ( v ) পাললিক শিলায় কয়লা , খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ।
রূপান্তরিত শিলার ব্যবহার : ( I ) মার্বেল পাথর থেকে নানা নির্মাণকার্য হয়ে থাকে । পাহাড়ি অঞ্চলে প্লেটপাথর থেকে মেঝে ও ছাদ তৈরি হয় । ( ii ) শিল্পক্ষেত্রে প্রানাইট থেকে পেনসিলের সিস , স্লেটপাথর প্রভৃতি লেখার কাজে ব্যবহার হয় । ( iii ) রূপান্তরিত শিলা থেকে খনিজ সংগৃহীত হয় ।
Geography question answer
ReplyDeleteOpp
ReplyDeleteHi
ReplyDelete