❒ লেখক পরিচিতি: কুস্টিয়া জেলার লাহিড়ী পাড়ায় গ্রাম ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মীর মোয়াজ্জম হোসেন। তাঁর পারিবারিক উপাধি ছিল মীর। তিনি ফরিদপুর এবং দেলদুয়ার নবাব এস্টেটে ম্যানেজারের চাকুরি করতেন। লেখক শৈশবে বাংলার সঙ্গে আরবি, ইংরাজি, ফারসি ভাষাতে শিক্ষালাভ করেন। তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন কোলকাতায়। 'বিষাদ সিন্ধু' বাংলা সাহিত্যে তাঁর অমরকীর্তি। আলোচ্য রচনাটি 'বিষাদ সিন্ধুর' মহরম পর্ব থেকে গৃহীত। ১৯১২ খ্রিঃ লেখকের জীবনবসান ঘটে।
❒ বিষয় পরিচিতি: আলোচ্য অংশে কারবালার প্রান্তরের এক হৃদয় বিদারক চিত্র চিত্রিত হয়েছে। এজিদের সৈন্যবাহিনী মদিনা নগরে প্রবেশ করলে মদিনাবাসী এজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, সেই যুদ্ধের আয়োজনে মদিনাবাসী ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হাসানের কথায় ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রহণের প্রেরণা ও উৎসাহ আরও তীব্রতর হয়। পবিত্রভূমি মদিনার সম্মান রক্ষার্থে পুর-বাসিনীদের অটল প্রতিজ্ঞা আলোচ্য অংশে ব্যক্ত হয়েছে।
❑ সারাংশ: হাসান-হোসেন ও আবদার রহমান অশ্বারোহণের সমরক্ষেত্রে যাত্রার জন্য যখন মনস্থির করিতেছেন তখন হঠাৎ একটি দৃশ্য দেখে হাসান আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। তিনি আবদার রহমান ও হাসানকে মদীনাবাসীদের সঙ্গে লইতে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি অবলাগণকে সান্ত্বনা দিয়া চলিলেন। তিনি অশ্ব থেকে নামিয়া অতি বিনীতভাবে নারীগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন। 'ভগ্নীগণ! আজ নগরের প্রান্তভাগে মহাশত্রু। মাতৃভূমি আজ বিপন্ন, নগরবাসীরা শত্রু বধে উন্মত্ত ও বিপদের সময় তোমাদের আর বাড়িতে থাকার প্রয়োজন নাই। আমরাও অস্ত্র হাতে শত্রু নিধনে প্রস্তুত। আপনি আমাদের আজ্ঞা করুন।" তখন হজরত তাদের সান্ত্বনা দিলেন এবং বাড়িতে বসিয়া যোদ্ধাদের জন্য আল্লার নিকট প্রার্থনা করিতে বলিলেন, যাতে আল্লাহ মদিনার সম্মান রক্ষা করেন। হজরতের কথায় পুর-বাসিনীরা সম্মত হয়ে যে যার গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন। তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন যে হাসানের প্রাণ রক্ষা করো এবং মদিনার পবিত্রতা রক্ষা করো।
❐ শূন্যস্থান পূরণ করো : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)
(ক) নগরের ------- মহাশত্রু।
উত্তর: নগরের প্রান্তভাগে মহাশত্রু।
(খ) এলাহি ------ প্রাণ রক্ষা করো।
উত্তর: এলাহি হাসানের প্রাণ রক্ষা করো।
(গ) আমি ------ আসিতেছি। সান্ত্বনা করিয়া
উত্তর: আমি অবলাগণকে সান্ত্বনা করিয়া আসিতেছি।
(ঘ) এই ------ সময়ে তোমরা এ বেশে কোথা যাইতেছ?
উত্তর: এই বিপদের সময়ে তোমরা এ বেশে কোথা যাইতেছ?
(ঙ) এই হস্ত ------ সক্ষম। মস্তক চূর্ণ করিতেও
উত্তর: এই হস্ত বিধর্মীর মস্তক চূর্ণ করিতেও সক্ষম।
❐ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
(ক) মীর মশারফ হোসেনের বিখ্যাত গ্রন্থ (সাহাজান/বিষাদসিন্ধু/আনন্দ-নগরী/জমিদার দর্পণ)।
উত্তর: মীর মশারফ হোসেনের বিখ্যাত গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধু।
(খ) এজিদ ও হোসেনের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল (পলাশি/খাইবার/কারবালা/মদিনা) প্রান্তরে।
উত্তর: এজিদ ও হোসেনের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল কারবালা প্রান্তরে।
(গ) মদিনা (পাহাড়ের/নদীর/নগরীর/গ্রামের) নাম।
উত্তর: মদিনা নগরীর নাম।
(ঘ) নগরবাসীরা আজ শত্রু বধে (আনন্দিত/উন্মত্ত/ভীত/উল্লসিত)।
উত্তর: নগরবাসীরা আজ শত্রু বধে উন্মত্ত।
❐ বাক্যের ভুল অংশটি সংশোধন করে লেখো: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)
(ক) এমাম হাসান অতি উগ্রভাবে নারীগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন।
উত্তর: এমাম হাসান অতি বিনীতভাবে নারীগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন।
(খ) স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে চারজন বলিলেন।
উত্তর: স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে একজন বলিলেন।
(গ) ভীত হইয়া হাসান বলিলেন।
উত্তর: বিস্মিত হইয়া হাসান বলিলেন।
(ঘ) সে প্রাণে রক্ষা হইলেই সকল ধ্বংস হইবে।
উত্তর: সে প্রাণ রক্ষা হইলেই সকল রক্ষা হইবে।
❑ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-১)
(ক) হাসান সকলকে একত্র করে কোথায় যেতে চেয়েছিলেন?
উত্তর: হাসান সকলকে একত্র করিয়া সমর ক্ষেত্রে যেতে চেয়েছিলেন।
(খ) "জন্মভূমি রক্ষা করিতে মহাব্যস্ত।"-জন্মভূমি রক্ষা করতে কারা ব্যস্ত?
উত্তর: জন্মভূমি রক্ষা করতে নগরবাসীরা মহাব্যস্ত।
(গ) "হাসানের প্রাণ আমাদের প্রার্থনীয়”-এ কথা কে বলেছেন?
উত্তর: প্রথমা স্ত্রী ঈশ্বরের কাছে হাসানের প্রাণ প্রার্থনা করে একথা বলেছেন।
(ঘ) 'নগরের প্রান্তভাগে মহাশত্রু?'-কোন্ নগরের প্রান্তে মহাশত্রু?
উত্তর: মদিনা নগরের প্রান্তে মহাশত্রু।
(ঙ) ভক্তরা মদিনায় কী দর্শন করতে যায়?
উত্তর: মদিনা নগরের প্রান্তভাগে পবিত্র রওজা শরিফ দর্শন করতে যায়।
❑ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-২/৩)
(ক) "তাহা আর হইল না,"কী হল না? কেন হল না?
উত্তর: হাসান সকলকে একত্র করে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে মনস্থ করেছিলেন, তা আর সম্ভব হল না। কারণ কেউই তার কথা শুনল না।
(খ) "এ বিপদ সময়ে তোমরা এ বেশে কোথায় যাইতেছ?-কারা, কোন্ বেশে, কোথায় যাচ্ছে?
উত্তর: মদিনা নগরের নারীগণ নগর রক্ষার জন্য যোদ্ধাবেশ ধারণ করে অস্ত্রহস্তে যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছে।
(গ) "আমরাও সেই পথের অনুসরণ করিব"-কারা, কোন্ পথের অনুসরণ করবে?
উত্তর: মদিনা নগরের নারীগণ নগর রক্ষার জন্য যোদ্ধাবেশ ধারণ করে অস্ত্রহস্তে যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছে।
(ঘ) "আপনার আদেশ প্রতিপালন করিলাম"-কার কী আদেশ? কে প্রতিপালন করেছিল?
উত্তর: হাসান মদিনার পুরনারীদের যুদ্ধযাত্রা করতে নিষেধ করেছিলেন এবং স্ত্রীলোকেরা তার সেই আদেশ প্রতিপালন করেছিল।
❑ রচনাধর্মী প্রশ্ন: (প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫)
(ক) ধর্ম ও জন্মভূমি রক্ষার জন্য মদিনার পুর-নারীদের যে অঙ্গীকার তাদের উক্তির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: মদিনার পুরনারীরা হজরতকে বলেছিলেন যে তারা অন্তঃপুরে আবদ্ধ থাকতে চান না। তারা স্বামী ভ্রাতা পুত্র সকলকে শত্রুর সামনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারা এও জানেন যে তারা হয়তো আর ফিরে আসবে না। মদিনার নারীরা সেইসব প্রিয় মানুষদের চিরবিদায় জানিয়েছেন। এই অবস্থায় তারা মনে করেন, যে তাদের আর পৃথিবীতে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বিপদের সময়ে অবশ্যই তারা কিছু না কিছু সাহায্য করতে পারেন, তাহলে তারাও কেন অস্ত্র ধারণ করবেন না? হজরত মহম্মদের স্ফূর্তিতে পবিত্র মদিনার মাটি বিধর্মীদের হাতে চলে যাবে, এটা তারা কিছুতেই সহ্য করবেন না। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। নারীরা পরাধীনা। তারা যাদের অধীনে থাকেন তারা যদি পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয় তাহলে তারা শূন্যদেহ নিয়ে কেন ঘরে থাকবেন।
(খ) হাসান কী বলে পুরবাসিনীদের যুদ্ধে যাওয়া থেকে নিরস্ত করেছিলেন?
উত্তর: হাসান মদিনাবাসী নারীদের বললেন যে তিনি সর্বদা মদিনার নারীদের আজ্ঞা বহন করতে প্রস্তুত। তিনি তাদের অনুগত। তার বংশের কেউ বেঁচে থাকতে মদিনার নারীদের অস্ত্র ধারণের প্রয়োজন হবে না। তারা যেন ঘরে বসে ঈশ্বরের কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেন যে তারা অর্থাৎ পুরুষেরা শত্রুর অস্ত্রের সামনে দাঁড়াবেন আর মদিনার নারীরা যেন ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ধর্ম ও জন্মভূমি রক্ষার জন্য প্রার্থনা করবেন।। তিনি বেঁচে থাকতে তাদের আর অস্ত্র ধরার প্রয়োজন নেই। তিনি বেঁচে থাকাকালীন স্ত্রী বা নারীগণ অস্ত্র ধারণ করিলে তাঁহার মনে ব্যথা লাগবে। এই কথা বলে তিনি পুরবাসিনীদের যুদ্ধে যাওয়া নিষেধ করেছিলেন।
(গ) মদিনার পুরবাসীরা হাসানের জন্য ঈশ্বরের কাছে কী বলে প্রার্থনা করেছিলেন?
উত্তর: মদিনার পুরবাসীরা ঈশ্বরের কাছে এই বলে প্রার্থনা করলেন যে হে ঈশ্বর (এলাহি) আজ আপনার নামের ওপর নির্ভর করে আমরা হাসানকে শত্রুর সামনে পাঠিয়ে দিলাম। হাসানের জীবন, পবিত্রভূমি মদিনার স্বাধীনতা এবং ধর্মরক্ষা করতে আমাদের যদি স্বামী, পুত্র, ভ্রাতা হারা হতে হয় তাহলে আমরা কাতর হব না, কিন্তু যদি পবিত্র মদিনা নগরে যদি বিধর্মীদের পা পড়ে তাহলে অকাতরে প্রাণ দেব। হে ঈশ্বর (এলাহি) তুমি হাসানের জীবন রক্ষা করো। মদিনার পবিত্রতা রক্ষা করো, হজরত মহম্মদের পবিত্র সমাধি ক্ষেত্র রক্ষা করো।
(ঘ) পুরবাসিনীদের আচরণ থেকে আমরা কোন্ শিক্ষা লাভ করতে পারি?
উত্তর: মদিনার নগরীর পুরবাসিনীরা যে আচরণ করেছিলেন তা থেকে আমরা ধর্ম রক্ষার্থে আত্ম বলিদানের সঙ্কল্পের শিক্ষালাভ করতে পারি। তারা তাদের সমস্ত প্রিয়জনকে শত্রুর তরোয়ালের সামনে পাঠিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি। শেষে নিজেরা বলেছিলেন আমরা ধর্ম ও পবিত্রভূমির রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যেতেও প্রস্তুত। যখন হাসান তাদের ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করলেন, তখন তারা ঈশ্বরের কাছে হাসানের প্রাণরক্ষার আবেদন জানালেন মদিনার পবিত্রতা রক্ষার কাতর অনুনয় জানালেন। একবারও তাদের স্বামী, পুত্র বা ভ্রাতার প্রাণরক্ষার আবেদন জানালেন না। এটা স্বার্থত্যাগের মহত্তম দৃষ্টান্ত।
❐ পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ:
(ক) সমাস নির্ণয় করো: সমরক্ষেত্র, চিরবিদায়, বিধর্মী, লোহিত তরঙ্গ, পদপৃষ্ট।
উত্তর: সমরক্ষেত্র = সমরের নিমিত্ত ক্ষেত্র-নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস।
চিরবিদায় = চিরকালের মতো বিদায়-মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
বিধর্মী = বিপরীত ধর্ম যার-বহুব্রীহি সমাস।
লোহিত তরঙ্গ = রক্তের মতো রং যার-বহুব্রীহি সমাস।
পদপৃষ্ট = পদের দ্বারা পৃষ্ট-তৎপুরুষ সমাস।
(খ) সন্ধি বিচ্ছেদ করো: অশ্বারোহণ, অবলাচার, পরাধীনা, কিঞ্চিৎ, সংবরণ।
উত্তর: অশ্বারোহণ অশ্ব আরোহণ।
কিঞ্চিৎ = কিম্ + চিৎ।
অবলাচার = অবলা + আচার।
সংবরণ = সম্ + বরণ।
পরাধীনা = পর অধীনা।
(গ) পদান্তর করো: বিনীত, প্রান্ত, উন্মত্ত, বিপদ, স্বীকার, শোভা, পবিত্রতা।
উত্তর: বিনীত-বিনয়।
প্রান্ত-প্রান্তভাগ।
উন্মত্ত-উন্মাদ।
বিপদ-বিপজ্জনক।
স্বীকার-স্বীকার্য।
শোভা-শোভিত।
পবিত্রতা-পবিত্র।
(ঘ) বচন নির্ণয় করো: শ্রেণিবদ্ধ, ভাই, মদিনাবাসী, পরাধীন, বিধর্মী।
উত্তর: শ্রেণিবদ্ধ-একবচন।
পরাধীনা-একবচন।
ভাই-একবচন।
বিধর্মী-বহুবচন।
মদিনাবাসী-বহুবচন।
(ঙ) বিপরীত শব্দ লেখো: শীঘ্র, পরাধীনা, বাঁচা, নিকট, স্থির।
উত্তর: শীঘ্র-বিলম্বে।
পরাধীনা-স্বাধীন।
বাঁচা-মরা।
নিকট-দূর।
স্থির-অস্থির।
No comments:
Post a Comment