👉(মন্ত্রের সাধন গদ্য প্রশ্ন উত্তর )
১। দিলাওয়ার সাহেব কেমন মানুষ ছিলেন?
উত্তরঃ দিলওয়ার সাহেব বড়ো লোক না হলেও গরীব ছিলেন না জায়গা জমি ছিল প্রচুর, আম, কাঁঠাল, সুপারি, নারিকেলের বাগান, পুকুর-ডোবা চা বাগানের শেয়ার, মুদির দোকানের অংশ ইত্যাদিতে তাঁর আমদানি ছিল ভালই। তিনি হিসাবী ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু কৃপণ ছিলেন না। গরীব দুঃখীর অসুখ-বিশুখ হলে তাদের পাশে দাঁড়াতেন এবং যথা সাধ্য ওষুধ, পথ্য কিনে দিয়ে সাহায্য করতেন। আপদে বিপদের সকলের অবলম্বন ছিলেন দিলাওয়ার সাহেব। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজান মাসের রোজা ছাড়াও নফল রোজা ও জাকাত ঠিক ঠিকভাবে পালন করতেন। আর্তের সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োগ করে রেখে ছিলেন। এমন কি শেষ জীবনে হজে যাওয়ার জন্য গচ্ছিত টাকা পর্যন্ত দান করেছেন, হঠাৎ হজরত নগরে ঝড় তুফানের দরুণ মহামারী দেখা দিলে।
২। মুসলমানের পাঁচটি প্রধান কর্তব্য কী কী?
উত্তরঃ কলেমা বাদ দিলে মুসলমানের চারটি প্রধান কর্তব্য হল, নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ।
৩। হুজুরের দোসরা খানা বলতে কী কী খানা বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ হুজুরের দোসরা খানা বলতে পাঁচসের দুধ, আট দশ সের পেস্তা, বাদাম, আঙুর, বেদানাকে বোঝানো হয়েছে।
৪। দিলাওয়ার হজে যেতে চাননি কেন?
উত্তরঃ পীর সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী দিলুমিয়া হজে যাওয়া মনস্থ করেন। এবং সমস্ত আয়োজন এক প্রকার সমাপ্ত করেন। এমন সময় হঠাৎ হজরত নগরের উপর দিয়ে ঝড়-তুফান সাইক্লোন বয়ে যায়। সব বাড়িঘরভেঙে চুরে ছারখার হয়ে যায়। চতুর্দিকে কান্নার রোল ওঠে, মহামারী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। প্রত্যহ দলে দলে দুস্থ, চাষি, মজুররা দুর্দিনের বন্ধু দিলুমিয়ার কাছে ছুটে আসতে লাগল। এমন সময় দিলুমিয়ার পাশের বাড়ির এক বিধবা মহিলার মৃত্যু দিলুমিয়ার হৃদয়কে টলিয়ে দিয়ে ছিল। তিনি দেখলেন কলেরা গ্রস্থ মা মরে পড়ে আছে, আর তার দুই শিশুর এক শিশু কাপড় ধরে টানছে, ছোটোটি, মরা মায়ের দুধ খাওয়ার চেষ্টা করছে, দিলাওয়ার সাহেবের হৃদয় ভারাক্রান্ত হল, হাত পা অবশ হয়ে চক্ষু অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠল। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না, সোজা বাড়ি ফিরে হজে যাওয়ার জন্য গচ্ছিত দশ হাজার টাকার ব্যান্ডিল বার করে কিছু টাকা নিয়ে শহরে লোক পাঠালেন ওষুধ পথ্য ডাক্তার আনতে বাকি টাকার চাল কিনে বাড়ি বাড়ি বিলিয়ে নিজের হজযাত্রা বাতিল করলেন।
৫। দিলুমিয়া হজযাত্রার জন্য কত টাকা গচ্ছিত রেখে ছিলেন? সেই টাকা দিয়ে তিনি কী করলেন?
উত্তরঃ দিলুমিয়া হজযাত্রার জন্য দশ হাজার টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। হঠাৎ ঝড় তুফান, সাইক্লোনের ফলে হজরত নগরের মহামারী দেখা দিলে, দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষের সেবার জন্য সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে শহরে লোক পাঠালেন, ওষুধ পথ্য ডাক্তার আনতে এবং বাকি টাকার চাল কিনে বাড়ি বাড়ি বণ্টন করতে লাগলেন।
৬। দিলাওয়ার সাহেবের চরিত্রের যেদিকটা গল্পে ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ দিলওয়ার সাহেব বড়োলোক না হলেও তিনি গরীব ছিলেন না, তাঁর জমি জমা, চা বাগানের শেয়ার ইত্যাদি থেকে আমদানি ভালই ছিল। তিনি খুব হিসাবী ছিলেন কিন্তু কৃপণ ছিলেন না। আলোচ্য গল্পে দিলওয়ার সাহেবের দানশীলতা ও গরীব দুঃখির প্রতি গভীর সহানুভূতির দিকটা ফুটে উঠেছে। কোনো মানুষ বিপদে পড়লে তিনি ছুটে যেতেন পাশে দাঁড়াতেন ও সাধ্য মত দান করতেন। আপদে বিপদে সকলের অবলম্বন ছিলেন দিলুমিয়া।
এক সময় দিলুমিয়া হজে যাওয়ার জন্য সমস্ত বন্দোবস্ত পাকা করেন, কিন্তু সেই সময় হঠাৎ হজরত নগরের উপর ঝড় তুফান বয়ে যায়। সমস্ত বাড়ি ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ঘরে ঘরে কান্নার রোল ওঠে। চতুর্দিকে মহামারী কলেরা দেখা দেয়। দলে দলে, গরীব দিন-মজুর লোকেরা তাদের চির দুর্দিনের বন্ধু দিলুমিয়ার কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে আসে। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে দিলুমিয়া হজযাত্রা বাতিল করেন এবং হজে যাওয়ার জন্য রাখা গচ্ছিত দশ হাজার টাকা, শতশত দুস্থ প্রতিবেশীর ত্রাণ কার্যে উজাড় করে দেন।
সুতরাং এই গল্পে দিলাওয়ার সাহেবের চরিত্রে যে বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে তা হল তিনি যে শুধু দানশীলতা ছিলেন তা নয়, প্রতিবেশীর আপদে বিপদে তাদের দুরাবস্থার সময় পাশে দাঁড়াতেন।
নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে তাদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের দুঃখ কন্ঠ ব্যথা বেদনাকে ভাগ করে নিতেন।
৭। 'হজ্জে আকবর' কথাটির অর্থ কী? কার হজকে হজ্জে আকবর বলা হয়েছে?
উত্তরঃ হজ্জে আকবর শব্দটির অর্থ হল 'শ্রেষ্ঠহজ্ব' এখানে দিলাওয়ায় সাহেব বা দিলুমিঞার হজ্বকে হজ্জে আকবর বলা হয়েছে। কেন না দিলুমিঞা দীর্ঘদিন ধরে, কিছু কিছু করে প্রায় দশ হাজার টাকা সঞ্চয় করে ছিলেন হজ্বে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎ তার প্রিয় গ্রাম হজরত নগরের উপর দিয়ে ঝড় তুফান বয়ে যায়, সব লন্ডভন্ড হয়ে বাড়ি ঘর ভেঙে যায়, দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ গ্রামের মানুষের এই বিপদের সময় দিলুমিঞা স্থির থাকতে না পেরে হজে যাওয়ার জন্য তার সঞ্চিত টাকা ব্যায় করেন। তাই তিনি হজ্বে না গিয়ে হজ্বে যাওয়ার সঞ্চিত অর্থ যে ভাবে গরীব দুঃখির কাজে ব্যায় করে দিলো, তাঁর হজ্ব সেবা ওখানেই অর্থাৎ হজরত নগরেই কবুল হয়ে গেল। এর জন্য আর মক্কা মদিনায় যেতে হল না। সেইজন্য এই মহৎ কাজকে হজ্জে আকবর বলা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment