অসুখী একজন
প্রশ্ন উত্তর
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
দশম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন | দশম শ্রেণীর বাংলা অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর | দশম শ্রেণীর বাংলা অসুখী একজন কবিতার গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 10th Bangla Osukhi Ekjon Kabitar Important Questions And Answers | দশম শ্রেণীর বাংলা গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class 10th Bangla Osukhi Ekjon Kabitar Questions And Answers #Class 10th Bangla Questions And Answers
⬛ অসুখী একজন' কবিতার বহুবিকল্পিক প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -১
1. বৃষ্টি কি ধুয়ে দিয়েছিল ?
ক. রাস্তার ধুলো
খ. রক্তের দাগ
গ. কথকের পায়ের দাগ
ঘ. কাঠকয়লার দাগ
উত্তরঃ গ. কথকের পায়ের দাগ
2. তারপর যুদ্ধ এল'- 'যুদ্ধ এল'-র অর্থ—
ক. যুদ্ধ শেষ হল
খ. যুদ্ধ হবে এমন
গ. যুদ্ধ শুরু হল
ঘ. যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়
উত্তরঃ গ. যুদ্ধ শুরু হল
3. 'তারপর যুদ্ধ এল'-
ক. পাহাড়ের আগুনের মতো
খ. রক্তের সমুদ্রের মতো
গ. আগ্নেয় পাহাড়ের মতো
ঘ. রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো
উত্তরঃ ঘ. রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো
4. ‘রক্তের এক মতো।' (শূন্যস্থান)
ক. ধসের
খ. অক্ষরের
গ. গিরিখাতের
ঘ. আগ্নেয় পাহাড়ের
উত্তরঃ ঘ. আগ্নেয় পাহাড়ের
5. ‘সে জানত না’– সে কী জানত না ?
ক. কথক ফিরে আসবে
খ. কথক আর কখনও ফিরে আসবে না
গ. কথক কখন আসবে
ঘ. কথক শীঘ্রই ফিরে আসবে
উত্তরঃ খ. কথক আর কখনও ফিরে আসবে না
6. ‘অসুখী একজন' কবিতায় কবি ক-টি সপ্তাহ কেটে যাওয়ারউল্লেখ করেছেন ?
ক. একটি
খ. দুটি
গ. চারটি
ঘ. তিনটি
উত্তরঃ ক. একটি
7. ‘অসুখী একজন' কবিতায় কে হেঁটে চলে গেল?
ক. গল্পের কথক
খ. একজন সৈনিক
গ. গির্জার এক নান
উত্তরঃ গ. গির্জার এক নান
8. 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি পরিত্যক্ত রাস্তায় কী জন্মানোর কথা বলেছেন ?
ক. ঘাস
খ. তরুলতা
গ. গাছ
ঘ. শস্য
উত্তরঃ ক. ঘাস
9. 'অসুখী একজন' কবিতায় একটার পর একটা বছর কীভাবে নেমে এল বলে কবি মনে করেছেন?
ক. পাথরের মতো
খ. জলের মতো
গ. ফুলের মতো
ঘ. গানের মতো
উত্তরঃ ক. পাথরের মতো
10. 'তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।'- কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?
ক. দেবতারা
খ. শয়তানরা
গ. মানুষেরা
ঘ. যক্ষরা
উত্তরঃ ক. দেবতারা
11. 'অসুখী একজন' কবিতায় কে মিষ্টি বাড়ির বারান্দার ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিল ?
ক. মেয়েটি
খ. বন্ধুটি
গ. কবি
ঘ. ভাইটি
উত্তরঃ গ. কবি
12. 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি বারান্দার যে-বিছানাটিতে ঘুমিয়েছিলেন, সেটি ছিল—
ক. জ্বলন্ত
খ. উড়ন্ত
গ. বাড়ন্ত
ঘ. ঝুলন্ত
উত্তরঃ ঘ. ঝুলন্ত
14. অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল-
ক. দরজায়
খ. ছাদে
গ. বারান্দায়
ঘ. রাস্তায়
উত্তরঃ ক. দরজায়
15. পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম হল-
ক. নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো
খ. রিকার্দো বাসওআলতো
গ. রেয়েন্স রিকার্দো নেকতালি বাসোয়ালতো
ঘ. পল ভেরলেইন নেরুদা
উত্তরঃ ক. নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো
16. ‘সে জানত না’– 'সে' হল-
ক. পরাজিত সৈনিক
খ. কবিতার কথক
গ. কবির ভালোবাসার জন
ঘ. কবির মা
উত্তরঃ গ. কবির ভালোবাসার জন
17. ‘অসুখী একজন' কবিতায় একটা কী চলে গেল বলতে কবি কোন্ জন্তুর উল্লেখ করেছেন ?
ক. মানুষ
খ. কুকুর
গ. হরিণ
ঘ. বিড়াল
উত্তরঃ খ . কুকুর
18. 'অসুখী একজন' কবিতায় শিশু আর বাড়িরা-
ক. খুন হল
খ. হারিয়ে গেল
গ. বেঁচে রইল
ঘ. জেগে রইল
উত্তরঃ ক. খুন হল
19. ‘অসুখী একজন' কবিতায় সব ধ্বংস হলেও অপেক্ষমান সেই মেয়েটির কী হল না ?
ক. অসুখ হল না।
খ. মৃত্যু হল না
গ. খুন হল না
ঘ. জ্বলে গেল না
উত্তরঃ খ. মৃত্যু হল না
20. 'অসুখী একজন' কবিতায় কীসে সমস্ত সমতল ধ্বংস হল?
ক. ভূমিকম্পে
খ. আগুনে
গ. ধসে
ঘ. বন্যায়
উত্তরঃ খ. আগুনে
21. অসুখী একজন' কবিতায় দেবতাদের চেহারা ছিল—
ক. শান্ত-হলুদ
খ. লাল-নীল
গ. অশান্ত নীল
ঘ. ধীর-হলুন
উত্তরঃ ক. শান্ত-হলুদ
22. ‘অসুখী একজন' কবিতায় শাস্ত-হলুদ দেবতারা কত বছর ধ্যানে ডুবে ছিল?
ক. একশো
খ. দু-হাজার
গ. পাঁচশো
ঘ. হাজার
উত্তরঃ ঘ. হাজার
23. 'অসুখী একজন' কবিতায় শান্ত হলুদ দেবতারা কীভাবে মন্দির থেকে উলটে পড়ল?
ক. গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে
খ. টুকরো টুকরো হয়ে
গ. অর্ধেক হয়ে
ঘ. ভেঙে ভেঙে
উত্তরঃ খ. টুকরো টুকরো হয়ে
⬛ অসুখী একজন' কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -১/২
1. ‘তারপর যুদ্ধ এল-যুদ্ধ এল কীসের মতো?
উত্তর: নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতা অনুসারে 'রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছিল। অর্থাৎ এখানে যাবতীয় ধ্বংস ও বিনাশের প্রতীক হয়ে ওঠে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
2. ‘অসুখী একজন' কবিতায় কবি অপেক্ষারতাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলেন ?
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি অপেক্ষারতাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য বহুদূরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে চলে গেলেন।
3. ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।—কেন মেয়েটির মৃত্যু হল না?
উত্তর : ‘অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ, মৃত্যু ও হিংসা যেন মেয়েটিকে স্পর্শ করতে পারে না। কারণ ভালোবাসা অবিনাশী। তাই সে নিজস্ব ধারায় সময় থেকে সময়াস্তর অতিক্রম করেও অমলিন থাকে।
4. ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।–কোন্ মেয়েটির?
উত্তর: নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় কবির জন্য তাঁর স্ববাসভূমিতে অপেক্ষারতা মেয়েটির ভয়াবহ যুদ্ধেও মৃত্যু হল না।
5. ‘সেই মিষ্টি বাড়ি, সেই বারান্দা – সেই বারান্দাটির পরিচয় দাও।
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবির মিষ্টি বাড়ির বারান্দাটিতে ছিল একটি ঝুলন্ত বিছানা; যেখানে তিনি একদা ঘুমিয়েছিলেন।
6. 'যেখানে ছিল শহর/ সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা রক্তের একটা কালো দাগ – এই চিত্রকল্প কবি কেন ব্যবহার করেছেন?
উত্তর: ‘অসুখী একজন' কবিতায় বিপর্যয় ও বিধ্বংসের বিকৃত রূপ, বহু ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু বোঝাতে কবি এই চিত্রকল্পের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। যুদ্ধের বীভৎসতায় যেন রক্তও তার স্বাভাবিক রূপ হারিয়েছে।
7. ‘আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায় । - "আর শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী?
উত্তর: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ-দাঙ্গা-হিংসার আগুন পেরিয়ে কথকের প্রিয়তমার ভালোবাসা ও চিরন্তন অপেক্ষাকে বোঝাতেই শেষ পঙ্ক্তিতে 'আর' শব্দটির ব্যবহার হয়েছে।
8. 'রক্তের একটা কালো দাগ।– কোথায় রক্তের একটা কালো দাগ দেখা গিয়েছিল?
উত্তর: যুদ্ধের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথার সঙ্গে রক্তের কালো দাগ দেখা গিয়েছিল।
9. ‘সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন—কেন এমন হয়েছিল?
উত্তর : ‘অসুখী একজন' কবিতা অনুসারে আগ্নেয়পাহাড়ের মতো ভয়াবহ যুদ্ধ আসার ফলে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গিয়েছিল।
10. ‘বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ — পায়ের দাগ ধুয়ে দেওয়া বলতে কী বোঝ?
উত্তর: নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় বৃষ্টিতে পায়ের দাগ ধুয়ে যাওয়া বলতে স্ববাসভূমিতে কথকের স্মৃতি ক্রমশ ফিকে ও মলিন হয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
11. ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল,—কী কী চূর্ণ হয়ে গেল?
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবির মিষ্টি বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ— যুদ্ধে এইসব চূর্ণ হয়ে আগুনে জ্বলে গিয়েছিল।
12. 'অসুখী একজন' কবিতায় কবির বাড়িটি ছাড়াও আর কী ধ্বংসের উল্লেখ পাওয়া যায়?
উত্তর: ‘অসুখী একজন' কবিতায় কবির বাড়িটি ছাড়াও সম্পূর্ণ শহরটি ধ্বংসের উল্লেখ পাওয়া যায়।
13. ‘অসুখী একজন' কবিতায় যেখানে শহর ছিল সেখানে যুদ্ধের ফলে কী কী ছড়িয়ে রইল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় যেখানে শহর ছিল, সেখানে যুদ্ধের পর ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর পোড়া শুকনো রক্তের কালো দাগ।
ছড়িয়ে ছিল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস | মাথা আর রক্তের একটা কালো দাগ।
14. ‘হেঁটে গেল গির্জার এক নান— 'নান' কাদের বলা হয়?
উত্তর: গির্জায় বসবাসকারী খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীদের 'নান' বলা হয়।
15. ‘অসুখী একজন' কবিতাটির অনুবাদক কে?
উত্তর: ‘অসুখী একজন' কবিতাটির অনুবাদক নবারুণ ভট্টাচার্য।
16. 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের ছবিটি কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা ‘অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের ভয়াবহতাকে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
⬛ অসুখী একজন' কবিতার রচনা ধর্মী প্রশ্ন উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -3/5
1. ‘আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়। মেয়েটি কে? সে অপেক্ষা করে কেন? ১ + ২
উত্তরঃ মেয়েটির পরিচয়:- পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় ‘সেই মেয়েটি’ হল কথকের প্রিয়তমা, যাকে রেখে কবি বহুদূরে চলে গিয়েছিলেন।সুখী একজন কবি যে আর ফিরে আসবেন না এ কথা তাঁর প্রিয়তমা জানত না। তার অপেক্ষার বোঝা গভীর থেকে গভীরতর হলেও সে ভেঙে পড়েনি। এই মেয়েটিকে ধ্বংস যেন স্পর্শ করতে পারে না; মৃত্যু-যুদ্ধ-হিংসা, দাঙ্গার স্পর্শ পেরিয়েও তাই সে অমলিন থাকে। কারণ ভালোবাসার কখনও মৃত্যু হয় না; সেসময় থেকে অপেক্ষা করার উদ্দেশ্য সময়ান্তরে অপেক্ষা করে বয়ে চলে নিজস্ব ধারায়।
2. ‘তারা তো স্বপ্ন দেখতে পারল না। ‘তারা কারা? কেন তারা স্বপ্ন দেখতে পারল না? ১+২
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে ‘তারা’ বলতে শান্ত হলুদ দেবতাদের কথা বলা হয়েছে। মানুষের মতোই একইরকমভাবে যুদ্ধ-তাণ্ডবের ভয়াবহতায় তারাও নিরাশ্রয়, অস্তিত্বহীন এবং চূর্ণবিচূর্ণ হয়। তাই এককথায় দৈব ক্ষমতার ফানুস চুরমার হয়ে যাওয়ায় তাদের যেন মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতা লোপ পায়। আলোচ্য অংশে কবির এই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে।
3. ‘শান্ত হলুদ দেবতারা/যারা হাজার বছর ধরে ডুবেছিল ধ্যানে— কোন্ কবিতার অংশ? শান্ত হলুদ দেবতাদের হাজার বছর ধরে ডুবে থাকার অর্থটি বুঝিয়ে দাও । ১ + ২
উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত পক্তিটি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন ’কবিতা থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশের অর্থ এখানে ঈশ্বর বা দেবতা এক জীর্ণ বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। তাদের নিষ্ক্রিয় প্রাচীনতা কবি শান্ত হলুদ' শব্দবন্ধের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর দেবতাদের হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকার মধ্যে তিনি দৈবী-মহিমার ভূমিকাহীন অসারতার ভাবটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আসলে এই ক্রিয়াহীন, নিশ্চল ও ধ্যানস্থ অবস্থা আমাদের টের পাইয়ে দেয়; মানবজীবনের উত্থানপতনের সঙ্গে দেবত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।
4. ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।'- উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি পাবলো নেরুদার কবিতা 'অসুখী একজন' থেকে গৃহীত। এখানে কবি বিনাশ ও ধ্বংসের কলরোলে দৈবীমহিমার অসারতার প্রতি কটাক্ষপাত করেছেন। মানবতার অপচয়-প্রাণহানি কিংবা চূড়ান্ত বীভৎসতার সময় কোনো দৈব-মাহাত্ম্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। মানুষের মতোই একইরকমভাবে যুদ্ধ-তাণ্ডবের ভয়াবহতায় তারাও নিরাশ্রয়, অস্তিত্বহীন এবং চূর্ণবিচূর্ণ হয়। তাই এককথায় দৈব ক্ষমতার ফানুস চুরমার হয়ে যাওয়ায় তাদের যেন মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতা লোপ পায়। আলোচ্য অংশে কবির এই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে।
5. 'প্রাচীন জলতরঙ্গ/সব চূর্ণ হয়ে গেল,— উদ্ধৃতাংশে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ প্রশ্নোকৃত অংশটি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন' কবিতা থেকে গৃহীত। আগ্নেয়পাহাড়ের মতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের লেলিহান আগুন সমতলকেও গ্রাস করেছিল। কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত মিষ্টি বাড়িটিও যুদ্ধের নির্মম আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল। তার বারান্দার বুঝিয়েছেন ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা, চিমনি ও প্রিয় প্রাচীন জলতরঙ্গ— এইসব চূর্ণ হল, সম্পূর্ণ ভস্ম হল আগুনে। অর্থাৎ কবির আশ্রয় ও অস্তিত্বের একমাত্র প্রতীকচিহ্নটিও যুদ্ধের নিষ্ঠুর ধ্বংসলীলায় নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।
6. 'সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা'— বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতাটিতে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কবি প্রিয়তমা, ঘরবাড়ি, এমনকি তাঁর প্রিয় শহরও ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এরপরে একদিন আসে বীভৎস যুদ্ধ। যার করাল গ্রাসে কবির ঘরবাড়ি, দেবালয় সমস্ত কিছু চূর্ণ হয়ে আগুনে জ্বলে যায়। শহরটিও বাদ যায় না। এক সময়ের সুন্দর শহরে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের দাগ। আসলে শহরের বিধ্বংসী রূপটি তুলে ধরতেই উদ্ধৃতিটি ব্যবহৃত হয়েছে বুঝিয়েছেন.
7. ‘সে জানত না’— কী জানত না? না-জানা বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় অপেক্ষাতুরা মেয়েটির এ কথা জানা ছিল না যে, কবি আর কখনও স্ববাসভূমিতে ফিরে আসবেন না। না-জানা বিষয়টি হল পাঠ্য কবিতাটি শুরু হয় এক বিদায়দৃশ্যকে অবলম্বন করে। বাড়ির দরজায় প্রিয়তমাকে ফেলে রেখে কবি চলে যান বহুদূরের অজ্ঞাত কোনো স্থানে। এই যাত্রার কারণ কবিতায় উল্লিখিত হয় না। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে তিনি তাঁর ভালোবাসার নারী, প্রিয় ঘরবাড়ি এবং পছন্দের শহরটিকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে চিরবিচ্ছেদের এ ঘটনা কবিকে পীড়িত ও বিচলিত করে। অথচ মেয়েটি তা বুঝতে পারে না। মেয়েটির জীবনে প্রিয়তমের জন্য অন্তহীন অপেক্ষার পালা এভাবেই নীরবে নেমে আসে।
8. পাঠ্য কবিতাটি অতৃপ্ত মানবহৃদয়ের একান্ত আর্তির প্রকাশক— ‘অসুখী একজন কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো। অথবা, ‘অসুখী একজন' কবিতায় বিশ্বশান্তির বার্তা নিহিত—আলোচনা করো। ‘অথবা, ‘অসুখী একজন' কবিতাটিকে যুদ্ধবিরোধী কবিতা বলা যায় কিনা—বিশ্লেষণ করো। Marks - 5
উত্তরঃপাবলো নেরুদার কবিতা ‘অসুখী একজন’– এই ব্যঞ্জনাময় নামকরণ থেকেই বোঝা যায় যে, কবিতাটি অতৃপ্ত কোনো বাসনার প্রতিচ্ছবি। অনেক সময় কবি-সাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি যা সর্বজনের ভাবনার সঙ্গে মিলে যায় তা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। আমাদের পাঠ্য কবিতাটিতেও তা ঘটেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কবিতার কথক অর্থাৎ কবি চরম অতৃপ্তি নিয়ে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁর প্রিয় নারী তাঁর অপেক্ষায় থাকে, কেন-না সে জানে না যে, তার প্রিয়তম আর ফিরে আসবে না। কবিতার শেষ পর্যন্ত এই অপেক্ষাকেই আমরা দেখেছি। সময় অতিক্রান্ত হয়, আবছা হয় স্মৃতি, অপেক্ষার বছরগুলো ভারী হয়। প্রাণঘাতী যুদ্ধের বীভৎসতা তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে। দেবালয়, শহর সব কিছু ধ্বংস হওয়া সত্ত্বেও অতৃপ্ত হৃদয়ে সেই মেয়েটি অপেক্ষার আলোকশিখা দু-হাত দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে কবিও অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ফিরে আসতে চান তাঁর প্রতীক্ষমাণ ভালোবাসার কাছে। সব কিছু ধ্বংসের মাঝেও কবির হৃদয়ে অপেক্ষরতা নারীটির মৃত্যু নেই। চিরায়ত অতৃপ্ত মানবার্তিই এই নারী। কবির অতৃপ্ত মন তার কাছে বার বার ফিরে যেতে চায় বলেই তিনি বলে ওঠেন, ‘আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়। স্পষ্টতই কবিতাটিতে কবি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব নিয়ে বিশ্বশান্তির বার্তা প্রেরণ করেছেন পাঠকের কাছে।
9. ‘আমি তাকে ছেড়ে দিলাম— কোন্ কবিতার অংশ? “আমি কে? তাঁর ‘ছেড়ে আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ১ + ১ + ৩
উত্তরঃ চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতা থেকেউদ্ধৃত অংশটি গৃহীত
পাঠ্য কবিতায় 'আমি' বলতে কবিকে বোঝানো হয়েছে। কবি এখানে কথকের ভূমিকায় স্মৃতিচারণার মাধ্যমে বর্তমানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়া পড়েছে কবিতাটিতে। কখনও কর্মসূত্রে কখনও-বা রাজনৈতিক কারণে তাঁকে জীবনে বহুবার স্বদেশভূমি ছেড়ে আত্মগোপন করতে, কিংবা নির্বাসিত হতে হয়েছে। সেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যন্ত্রণা ও অনুভূতি পাঠ্য কবিতার কাব্যগুণে একটা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। কবি জীবিকা কিংবা জীবনের তাগিদে স্বদেশভূমি ত্যাগ করে প্রিয়তমাকে
10. ‘যেখানে ছিল শহর'— ‘যেখানে' শব্দটি প্রয়োগ করার কারণ কী? শহরটির কী হয়েছিল?
উত্তরঃ অপেক্ষায় রেখে বহুদূরে চলে যান। কবি যে ফিরে আসবেন না তা অপেক্ষরতা প্রিয়তমার জানা ছিল না। কবি দেশত্যাগ করা সত্ত্বেও প্রিয়তমার জীবন আপন গতিতেই চলে। এভাবেই সপ্তাহ থেকে বছর কেটে যায়। কবির পদচিহ্ন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, সেখানে ঘাস জন্মায়। বিচ্ছেদের বছরগুলো একটার পর একটা পাথরের মতো মাথায় নেমে আসে। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়, ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, মৃত্যু হয় শিশুদেরও। ক্রমে ধ্বংসের সেই আগুনে দেবালয়, কবির স্বপ্নের বাড়ি এবং শহর সব কিছু ছারখার হয়ে যায়। তবু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকে মেয়েটির ভালোবাসা। তার অপেক্ষা, চিরন্তন ভালোবাসা অবিনাশী- যা ধ্বংসস্তূপে আলোর মতো মানবহৃদয়ের বিশুদ্ধতাকে জ্বালিয়ে রাখে। কথক বা কবির বাসভূমি যে শহরে, এক্ষেত্রে সেখানকার কথা বলা 'যেখানে' শব্দ প্রয়োগের কারণ হয়েছে। এই শহরটি কবি বা কথকের কাছে স্মৃতিবিজড়িত, কারণ এখানেই তিনি তার প্রিয় উদ্ধৃতিটি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার অংশ। নারীটিকে অপেক্ষমাণ রেখে বহুদূরে পাড়ি দিয়েছিলেন। কবির এই বাসভূমি, প্রিয় মুখের সান্নিধ্যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, স্নিগ্ধতায় ও লাবণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। তখনও যুদ্ধের আঘাত এই শহরকে স্পর্শ করতে পারেনি বোঝাতেই কবি ‘যেখানে' শব্দটি প্রয়োগ করেছেন।
যুদ্ধের ভয়ংকর নিষ্ঠুরতায় কবির শহর ধ্বংসের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের আঘাতে সমস্ত সমতলজুড়ে আগুন লাগল। দেবালয়ও তার হাত থেকে রক্ষা পেল না। মানুষের মধ্যেকার যে দেবত্বের মিথ ছিল তা ধ্বংস হয়ে গেল। সেইসঙ্গে নিশ্চিহ্ন হল কবির মধুর স্মৃতিবিজড়িত সেই স্বপ্নের বাড়িটিও। কবির বারান্দায় যেখানে ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমিয়েছিলেন, তার প্রিয় গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি ও প্রিয় জলতরঙ্গ শহরের রূপ।
যুদ্ধ পরবর্তী সবই ধ্বংস হল যুদ্ধের আগুনে। গোটা শহরটাই পুড়ে গেল। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের বীভৎস মাথা ও রক্তের একটা কালো দাগ। কবির প্রিয় শহরের প্রতিচ্ছবি, যুদ্ধের বীভৎসতা— মানুষের লোভ, হিংসা এবং বর্বরতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে, যা পাঠককে স্তম্ভিত করেছে।
No comments:
Post a Comment