1. প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল?
উত্তরঃ সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে উল্কাপাতের ফলে যে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল, তার মাঝখান থেকে জনৈক তারক চাটুজ্যে শঙ্কুর ডায়রিটি খুঁজে পান।
2. লেখক শঙ্কুর ডায়রিটা কোথা থেকে পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ লেখক ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা পেয়েছিলেন তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে।
3. সুন্দরবনের কাছে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তরঃ একটা বড়ো উল্কাখণ্ড সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে এসে পড়েছিল।
4. প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রিটির বিশেষত্ব কী?
উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রির লেখার রং বদলায়। এটি ছেঁড়ে না, পোড়ে না, টানলে বড়ো হয়, আর ছাড়লে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়।
5. 'একটা বিশ্রী কাণ্ড ঘটে গেল'—কাণ্ডটি কী?
উত্তরঃ হঠাৎ বহু বছর পরে আয়নায় নিজেরই চেহারা দেখে প্রোফেসর শঙ্কু চমকে চিৎকার করে উঠেছিলেন, তাঁর কাছে এটাই বিশ্রী কাণ্ড।
6. প্রহ্লাদকে প্রোফেসর শঙ্কু শিক্ষা দিয়েছিলেন কেন?
উত্তরঃ আয়নার ওপর থেকে প্রহ্লাদ পুরোনো ক্যালেন্ডার সরিয়ে নেওয়ায়, শঙ্কু নিজের চেহারা দেখে চিৎকার করে ওঠেন এবং রেগে গিয়ে তাকে শিক্ষা দেন।
7. প্রহ্লাদকে কীভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন শঙ্কু?
উত্তরঃ প্রফেসর শঙ্কু নিজের 'Snuff-gun' দিয়ে প্রহ্লাদকে নস্যি ছুড়ে মেরেছিলেন। রাত্রি ১১টাতেও তার হাঁচি থামেনি এবং তেত্রিশ ঘণ্টার আগে সেই হাঁচি থামা সম্ভব ছিল না। এভাবেই শঙ্কু প্রহ্লাদকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
8. অবিনাশবাবু পাঁচশো টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন কেন?
উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কুর রকেটে অবিনাশবাবুর মুলোর খেত নষ্ট হওয়ার দরুন তিনি পাঁচশো টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন।
9. প্রোফেসর শঙ্কু কীভাবে অবিনাশবাবুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন?
উত্তরঃ অবিনাশবাবুকে চায়ে স্যাকারিনের বদলে শঙ্কু, ঘুম এবং অসম্ভব স্বপ্ন উদ্রেককারী স্বসৃষ্ট বড়ি মিলিয়ে খাইয়ে রেহাই পেয়েছিলেন।
10. প্রথমবার শঙ্কুর মহাকাশ অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ ঘড়িতে দম দেবার সময় প্রহ্লাদ ভুল করে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ফলে সময়মতো রকেটটা না ছাড়ায়। সেটা কিছুটা উঠেই পড়ে গিয়েছিল। সেইজন্যই শঙ্কুর মহাকাশ অভিযান প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছিল।
11. উল্কাপাতের ফলে গোলঞ্চ গাছটার কী হয়েছিল?
উত্তরঃ উল্কাপাতের পরে গোলঞ্চ গাছটায় আঙুলের মতো ঝোলা পাপড়িওলা একরকমের ফুল ফুটত, যা দিনের বেলায় কালো কিন্তু রাতের বেলায় ফসফরাসের মতো জ্বলে।
12. প্রফেসর শঙ্কু তাঁর মঙ্গল অভিযানে প্রহ্লাদকে নিতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তরঃ প্রহ্লাদ বোকা হলেও বেশ সাহসী ছিল। শঙ্কু জানতেন কমবুদ্ধির লোকেরা কখনো-কখনো খুব সাহসী হয়। কারণ ভয় পাবার কারণ কী সেটা বুঝতেও তাদের সময় লাগে। প্রহ্লাদকে এই জন্যই শঙ্কু তাঁর সঙ্গে অভিযানে নিতে চেয়েছিলেন।
13. মঙ্গলে যাওয়ার পথে মহাকাশযানে বসে প্রহ্লাদ কী করত?
উত্তরঃ বাইরের দৃশ্য সম্পর্কে নির্বিকার প্রহ্লাদ মহাকাশযানে বসে প্রথমে রামায়ণ ও পরে মহাভারত পড়ত।
14. 'ডায়রি লিখতে লিখতে এক কান্ড হয়ে গেল'-কান্ডটি কী ঘটেছিল?
উত্তরঃ মহাকাশযানে মঙ্গলে যাওয়ার পথে বিধুশেখর প্রথমে চুপচাপ থাকলেও একদিন হঠাৎ হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে রকেটটা উলটো দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে-এখানে সেই কান্ডের কথা বলা হয়েছে।
15. শঙ্কুর রকেটে কত মণ জিনিস নেওয়া যায়?
উত্তরঃ শঙ্কুর রকেটে কুড়ি মণ পর্যন্ত জিনিস নির্ভয়ে নেওয়া যায়।
16. শঙ্কুর রকেটের পোশাকের আস্তিনে কী ঢুকেছিল?
উত্তরঃ শঙ্কুর রকেটের পোশাকটার আস্তিনে কতকগুলি উচ্চিংড়ে ঢুকেছিল।
17. স্যাকারিনের মতো দেখতে সেই ঘুমের বড়ি খেয়ে শঙ্কুর কী হয়েছিল?
উত্তরঃ স্যাকারিনের মতো দেখতে সেই ঘুমের বড়ির চারভাগের একভাগ খেয়েছিলেন শঙ্কু। সকালে উঠে দেখেন ভয়ের চোটে স্বপ্ন দেখে তাঁর দাড়ির বাঁদিকটা একেবারে পেকে গেছে।
18. নিউটন কে? তাকে শঙ্কু কী খাইয়েছিলেন?
উত্তরঃ নিউটন হল শঙ্কুর পোষা বেড়াল। তাকে শঙ্কু মঙ্গল অভিযানে নিয়ে যাবার জন্য মাছের বদলে 'Fish Pill' খাইয়েছিলেন।
19. মঙ্গলে পদার্পণের আগে বিধুশেখর কী করেছিল?
উত্তরঃ মঙ্গলে পদার্পণের আগে বিধুশেখর বিপদের পূর্বাভাস দিয়ে প্রোফেসর শঙ্কুকে সতর্ক করতে চেয়েছিল।
20. মঙ্গলীয় সৈন্যরা দেখতে কেমন ছিল?
উত্তরঃ হাত তিনেক লম্বা, পা আছে, অথচ হাতের বদলে মাছের মতো ডানা। মাথায় দন্তহীন হাঁ-এর মাঝখানে প্রকান্ড সবুজ চোখ আর সর্বাঙ্গ মাছের মতো আঁশে ঢাকা।
21. মঙ্গলের লাল নদীর জলের স্বাদ কেমন ছিল?
উত্তরঃ মঙ্গলের নদীর জলের স্বাদ অমৃতের মতো, এক ঢোক খেলেই শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
22. নতুন গ্রহ টাফাকে দেখতে কেমন ছিল?
উত্তরঃ টাফার সর্বাঙ্গে যেন অসংখ্য জোনাকির আলো জ্বলছে এবং নিভছে, এই গ্রহকে মহাকাশযান থেকে অপূর্ব সুন্দর দেখায়।
23. প্রোফেসর শঙ্কুরা মঙ্গল থেকে টাফায় কীভাবে পৌঁছেছিলেন?
উত্তরঃ মহাকাশে নানা বস্তুর সঙ্গে কোনোক্রমে সংঘর্ষ এড়িয়ে মূলত রকেটের অজ্ঞাত কর্মকুশলতায় শঙ্কুরা মঙ্গল থেকে টাফায় পৌঁছেছিলেন।
24. 'টাফার অবস্থা যে পৃথিবীর তুলনায় আদিম'-প্রোফেসর শঙ্কুর এমন মনে হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ টাফায় ঘর-বাড়ি, গাছপালা কিছুই নেই, এমনকি এখনকার প্রাণীরা গর্ত দিয়ে মাটির মধ্যে ঢুকে বসবাস করে-এসব দেখে শঙ্কুর বিশ্বাস জন্মায় এরা মানুষের থেকে অনেক পিছিয়ে।
25. টাফার প্রাণীরা কেমন দেখতে ছিল?
উত্তরঃ বিরাট মাথা ও চোখ, সেই তুলনায় হাত-পা সরু-অনেকটা অতিকায় পিঁপড়ে জাতীয় কিছু কল্পনা করলে যেমন হয়, টাফার প্রাণীরা ঠিক সেরকম দেখতে।
26. টাফার প্রাণীরা শঙ্কুকে পছন্দ করেছিল কেন?
উত্তরঃ শঙ্কুর সহজ-সরল কথাবার্তা টাফার প্রাণীদের মন জয় করেছিল। যদিও তাঁর কাছে এ সমস্তই ছিল ন্যাকামি।
27. 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' গল্প অনুসরণে ডায়রির পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তরঃ 'অক্ষয় অবিনশ্বর' ডায়রিটিকে শ-খানেক ক্ষুধার্ত ঢেঁয়ো পিঁপড়ে নিমেষের মধ্যে খেয়ে শেষ করে ফেলেছিল।
❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'পড়ে দেখো। গোল্ড মাইন'-বক্তা কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন এবং প্রসঙ্গটাই বা কী ছিল? ১+২=৩
উত্তরঃ কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' গল্পের অন্যতম চরিত্র তারক চাটুজ্যে উদ্ধৃত কথাগুলি গল্পের লেখক অর্থাৎ কথককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
'গোল্ড মাইন' শব্দটির অর্থ স্বর্ণখনি। তারক চাটুজ্যে মাঝে মধ্যেই গল্পটল্প এনে লেখকদের কাছ থেকে পাঁচ-দশ টাকা আদায় করে নিয়ে যেতেন। এবার কিন্তু তিনি সঙ্গে করে যা এনেছেন তা একেবারে চমকে দেওয়ার মতো। একটি লালমলাটের খাতা, যেটি দীর্ঘ পনেরো বছর নিরুদ্দেশ থাকা প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি। আগাগোড়া সেটি পড়ে তারকবাবুর মনে হয়েছে লেখাটি চমকপ্রদ। তাই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
2. 'এবার তো আর কোনও ভুল নেই'-কোন্ ভুলের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ লেখক তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে ডায়রিটা পাওয়ার পর আলমারিতে সেটা তুলে রেখে দিয়েছিলেন। পুজো সংখ্যার ব্যস্ততা কমে যাওয়ায় একদিন আলমারি থেকে চলন্তিকা নামাতে গিয়ে ডায়রিটার দিকে চোখ যায় লেখকের। তখন সেটি খুলে দেখে ডায়রিটার কালির রং লাল। লেখকের মনে পড়ে যেদিন প্রথম তিনি ডায়রিটা দেখেছিলেন তখন কালির রং ছিল সবুজ, এসব সত্ত্বেও তিনি ভাবলেন কোথাও বুঝি ভুল হচ্ছে তাঁর। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই কালির রং চোখের সামনে বদলে নীল হয়ে গেল। এবারে আর তাঁর কোনো ভুল হল না।
3. 'প্রথমবারের কেলেঙ্কারিটার জন্য একমাত্র প্রহ্লাদই দায়ী'-কোন্ কেলেঙ্কারির কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ শঙ্কু মঙ্গলাভিযানের জন্য বহুকাল ধরেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন। রকেট তৈরি, যাবার দিনক্ষণও ঠিক হল। ঠিক সেই সময় প্রহ্লাদ ঘড়িতে দম দেওয়ার কাজটি ঠিকভাবে করে উঠতে পারেনি। সে ঘড়ির কাঁটা ভুল ঘুরিয়ে ফেলে, এসব ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাই প্রহ্লাদের ভুল দম দেওয়ার জন্য রকেটটি তিন ঘণ্টা লেট হয়ে যায় ফলে রকেট কিছুটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে পড়ে যায় এবং শঙ্কুর মঙ্গল অভিযান ব্যর্থ হয়। এই কেলেঙ্কারির কথা বলা হয়েছে।
4. 'আজ দিনের শুরুতেই একটা বিশ্রী কাণ্ড ঘটে গেল।'-বিশ্রী কান্ডটি বর্ণনা করো।
উত্তরঃ রোজকার-মতো প্রফেসর শঙ্কু সেদিনও নদীর ধারে মর্নিংওয়াক সেরে ফিরেছে। এমন সময় শোবার ঘরে ঢুকতেই সামনে দেখতে পেল এক বিদঘুটে চেহারার লোককে। চমকে উঠেই প্রফেসার বুঝতে পারে যে, ওটা আসলে একটা আয়না আর লোকটা আর কেউ নয় স্বয়ং তিনি অর্থাৎ আয়নার ওপর ভেসে ওঠা তাঁরই প্রতিচ্ছবি। এই কয় বছরে তার চেহারা যে এমন হয়েছে তা সে বুঝতে পারেনি কেননা এতদিন সে আয়নার সামনে দাঁড়ায়নি। আয়নার প্রয়োজন হয়নি বলে প্রহ্লাদ তার ওপর ক্যালেন্ডার টাঙিয়ে রেখেছিল। বছর শেষ হওয়ার কারণে প্রহ্লাদ সেটি নামিয়ে রেখেছিল, তাই তাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরই বিশ্রী প্রতিচ্ছবি দেখতে হয়েছিল।
5. এখন 'এখন মনে হচ্ছে যে প্রথমবারের কেলেঙ্কারিটার জন্য একমাত্র প্রহ্লাদই দায়ী'-কেলেঙ্কারিটা কী? তার ফল কী হয়েছিল? ১+২ = ৩
উত্তরঃ প্রোফেসার শঙ্কু মঙ্গলগ্রহে যাবার জন্য প্রথমবার যে রকেটটা বানিয়েছিল তা ব্যর্থ হওয়ার ঘটনাকেই কেলেঙ্কারি বলা হয়েছে। রকেটের ঘড়িতে প্রহ্লাদ দম দিতে গিয়ে ভুল করে ঘড়ির কাঁটাটাই ঘুরিয়ে ফেলে। যেখানে এক সেকেন্ডের হেরফেরে সব পণ্ড হয়ে যায় সেখানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লেট হয়ে যায় শুধুমাত্র কাঁটা ঘোরানোর ফলে। তাই ফল যা হবার তাই হয়েছে। রকেট খানিকটা উঠেই গোঁৎ খেয়ে অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে পড়ে, আর তার জন্য তিনি পাঁচশো টাকা ক্ষতিপূরণ চান।
6. 'তাই ভাবছি ওকে নেওয়াই ভালো'-বক্তা কে? কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? ১+২=৩
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' রচনার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কু।
প্রথমবার ঘড়ির কাঁটা উলটো ঘুরিয়ে প্রহ্লাদ মঙ্গল অভিযান * ব্যর্থ করে দিয়ে তার বোকামোর পরিচয় দেয়। প্রোফেসরের মতে, প্রহ্লাদ বোকা তবে সাহসী- কেননা যেভাবে সে বাইকর্ণিক অ্যাসিডকে প্যারাডক্সাইট পাউডারের সাথে কনট্রাক্ট হওয়ার আগেই হাসিমুখে মুছে নেয় তা অবাক করার মতো ব্যাপার। এতাই শঙ্কুর মতে, প্রহ্লাদকে নিয়েও ওজন সমস্যা যখন হচ্ছে না, তাই তাকে না নেওয়ার কোনো কারণই নেই।
7. 'একদিনের ঘটনা খুব বেশি করে মনে পড়ে।'-ঘটনাটি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ শঙ্কু যখন রকেট তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন তখন তার মনে হয় যে এটা কোনো সাধারণ ধাতু দিয়ে বানানো যাবে না। তাই প্রফেসর পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস আর কচ্ছপের ডিমের খোলা মিশিয়ে একটা কম্পাউন্ড তৈরি করেন এবং ভাবেন এতে ট্যানট্রাম বোরো-প্যাক্সিনেট, অথবা একুইয়স ভেলোসিলিকা মেশালেই জিনিসটা পাওয়া যাবে। প্রথমে ট্যানট্রামটাই দেখা যাক ভেবে এক চামচ ঢালতেই বিধু-শেখর তার লোহার মাথাটা প্রচণ্ড শব্দ করে নাড়তে থাকে, মানুষ কোনো কিছু বায়নার্থে যেমন মাথা নাড়ে ঠিক তেমন করে। পরে ভেলোসিলিকাটা হাতে নিতে আবার সেই শব্দ, তবে এবার মাথা নাড়াটা ছিল সম্মতিসূচক। শেষ পর্যন্ত ভেলোসিলিকাতেই ধাতুটা তৈরি হল।
8. 'দুটো কারণে খটকা রয়ে গেল'-কারণ দুটি লেখো।
উত্তরঃ প্রোফেসার শঙ্কু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্নের
প্রসঙ্গে তাঁর মাথায় দুটো খটকা থেকে গিয়েছিল। একটা হল বাইরের জগতের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ, যা থেকে রকেট তৈরির বিষয়টা শঙ্কুর মাথায় আসে। দ্বিতীয়টি হল গোলঞ্চ গাছ। স্বপ্ন দেখার পরদিন থেকেই গোলঞ্চ গাছে নতুন ধরনের ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ফুলগুলো আঙুলের মতো পাঁচটা ঝোলা পাপড়ি বিশিষ্ট। দিনেরবেলায় কালো কিন্তু রাতেরবেলায় হাওয়ায় দুললে ফসফরাসের মতো জ্বলে আর মনে হয় যেন কাছে ডাকছে।
9. 'আর একটা কথা আমার প্রায়ই মনে হয়'-বক্তা কে? কথাটাই বা কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটির বস্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের -। 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি'র অন্যতম চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুর।
কথাটা হল শঙ্কুর প্রায়ই মনে হত বাইরের কোনো জগতের প্রতি তাঁর যেন এক বিশেষ টান আছে। এই টানকে তাঁর মতে লিখে বোঝানো শক্ত। টানটা বুঝতে গেলে মাধ্যাকর্ষণের উলটো করে কল্পনা করলে একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। মনে হবে যেন পৃথিবীর প্রভাব ছাড়িয়ে যদি কিছু ওপরে ওঠা যায় তবে সেই টানটা আপনা থেকেই তাকে অন্য গ্রহে নিয়ে গিয়ে ফেলবে। ন এই টানটা অবশ্য চিরকাল ছিল না।
10. 'সে দিনটার কথা আজও বেশ মনে আছে।'-কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? ৩
উত্তরঃ ঘটনাটা বারো বছর আগের একদিনের। শঙ্কু শরৎকালে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এক রাত্রে খাবার পর, তাঁর বাগানে আরামকেদারায় শুয়ে মৃদু-মন্দ বাতাস উপভোগ করছিলেন। সেদিন তিনি একটা অন্যরকম উল্কা দেখলেন। একটা উল্কা ক্রমশ বড়ো হচ্ছে এবং মনে হচ্ছিল তাঁর দিকেই আসছে। অবশেষে সেটি বাগানের পশ্চিমদিকের গোলঞ্চ গাছটার পাশে থেমে একটা প্রকাণ্ড জোনাকির মতো জ্বলতে লাগল। দৃশ্যটি । ছিল ভীষণ আশ্চর্য।
11. টাফা কী? বিধুশেখরের কথায় টাফার প্রকৃতি ও প্রাণী সম্পর্কে কী জানা যায়? ১+২=৩
উত্তরঃ প্রখ্যাত কল্পবিজ্ঞানী সত্যজিৎ রায়ের 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি'তে টাফাকে একটি গ্রহরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেটি মহাকাশের একটি সাদা গ্রহ বলে পরিচিত। টাফাকে দূর থেকে দেখে বোঝা গেল তার সর্বাঙ্গো অসংখ্য । জোনাকি যেন জ্বলছে আর নিভছে। শঙ্কুর সৃষ্ট বিধুশেখরের মতে, - পৃথিবীর প্রথম সভ্য লোকেরা টাফায় বাস করেন। সেখানকার ২ প্রতিটি লোকই বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিমান। তাই তারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেদের সেখানে ভিন্ন গ্রহ থেকে এনে বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। তবে বাস্তবটা অন্য। টাফার মানুষগুলো পিঁপড়ে জাতীয়। এরা ভীষণ আদিম এবং এরা মাটির নীচে গর্তে বাস করত।
12. বিধুশেখর বলল, 'গবাক্ষ উদ্ঘাটন করহ!-বিধুশেখরের কথায় শঙ্কুর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
উত্তরঃ বিধুশেখরের কথায় শঙ্কু জানলা খুলতেই তাঁর সামনে । এক চোখ ঝলসানো দৃশ্য তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য যেন অন্ধকার করে দিল। যখন দৃষ্টি ফিরে পেলেন তখন তাঁর মনে হল, যেন তিনি অবিশ্বাস্য এক জগতের মধ্যে দিয়ে উড়ে চলেছেন। যতদূর তার চোখ যায়, দেখেন আকাশময় কেবল বুদ্বুদ ফুটছে আর ফাটছে। যেন অগুণিত সোনার বল আপনা থেকে বড়ো হতে হতে হঠাৎ ফেটে সোনার ফোয়ারা ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।
❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :
1. 'কুড়িটা টাকা দিলাম ভদ্রলোককে।-কথক ভদ্রলোককে কুড়িটা টাকা দিয়েছিলেন কেন? এর ফলে কী হয়েছিল? ৩+২ = ৫
উত্তরঃ 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' গল্পে আমরা দেখি গল্পকার কথকের মুদ্রণ ও প্রকাশনার ব্যাবসা। তিনি একদিন দুপুরে যখন অফিসে কর্মরত, ঠিক সেই সময় জনৈক তারক চাটুজ্যের প্রবেশ। তারক চাটুজ্যে সাধারণত গল্প লিখে থাকেন, কিন্তু এইবার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি। বিগত পনেরো বছর ধরে প্রোফেসর শঙ্কু নিরুদ্দেশ। অথচ তারক চাটুজ্যে সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চলে কয়েকটি গোসাপের ছালের সঙ্গে শঙ্কুর ডায়রিটি খুঁজে পান। তাঁর ডায়রিটি পড়ে ছিল উল্কাপাতের ফলে তৈরি হওয়া গর্তের ঠিক মাঝখানে। তারক চাটুজ্যের মতে, শঙ্কুর ডায়রিটি তাঁদের লেখা গল্পের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও মজাদার, যাকে বলে 'গোল্ড মাইন'। কথক তারক চাটুজ্যের কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করেও, এই কাজের পারিশ্রমিক ও সাম্মানিক হিসেবে তাঁকে কুড়ি টাকা দিয়েছিলেন। কথক পুজোর কাজে ব্যস্ত থাকায় ডায়রির কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন 'চলন্তিকা' অভিধান বের করতে গিয়ে আলমারি থেকে শঙ্কুর ডায়রিটিও বেরিয়ে পড়ে। ডায়রিটির বিশেষত্ব তাঁকে অবাক করে। এটির লেখা ঘন ঘন রং বদলায় এবং এর পাতা ছেঁড়ে না, পোড়ে না ও স্থিতিস্থাপকতা যুক্ত। এরপর সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ডায়রিটি পড়ে শেষ করে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে, তিনি তা সকলের জন্য ছাপিয়ে প্রকাশ করেন।
2. 'আমি মোটেই বিশ্বাস করি না যে এই ধরনের অভিযানে কেবলমাত্র বুদ্ধিমান লোকেরই প্রয়োজন'-এখানে কোন্ ধরনের অভিযানের কথা বলা হয়েছে? ওপরের মন্তব্য থেকে বক্তা সম্পর্কে তোমার মনে কী ধারণা গড়ে ওঠে? ১+৪=৫
উত্তরঃ এখানে বস্তা প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর নিজের তৈরি রকেটে চেপে মঙ্গল অভিযানের কথা বলতে চেয়েছেন।
মঙ্গল অভিযানে প্রোফেসর শঙ্কু তারা পোষা বেড়াল নিউটন, ভৃত্য প্রহ্লাদ এবং যন্ত্রমানব বিধুশেখরকে সঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় তিনি প্রহ্লাদ সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেন। শঙ্কুর মতে যে-কোনো অভিযানে শুধু বুদ্ধিমান মানুষ থাকলেই চলে না, সঙ্গে সাহসী লে লোকেরও প্রয়োজন হয়। অনেকসময় অপেক্ষাকৃত স্বল্পবুদ্ধির মানুষদের সাহস বেশি হয়, কেননা ভয়ের কারণটা ভেবে বের করতেও একটু সময় লাগে। এইজন্য টিকটিকির কেরামতিতে খন শঙ্কু নিশ্চল হয়ে পড়েন। অথচ সাহসী প্রহ্লাদ কিছু না জেনেও শ। ক্ষিপ্র হাতে গামছা দিয়ে অ্যাসিড মুছে ফেলে বিস্ফোরণের কাসম্ভাবনা সহজেই নির্মূল করতে পারে। সুতরাং শঙ্কু নিজে ব। বুদ্ধিমান ও বিখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও অন্যের গুরুত্ব এবং যোগ্যতাকে এক স্বীকৃতি দেন। তাই ওপরের মন্তব্যটি বক্তার দূরদর্শী, অভিজ্ঞ ও চার অ্যাসিডের শিশি উলটে পড়ায়, ভয়াবহ বিস্ফোরণের আশঙ্কায় র বিচক্ষণ মনের পরিচায়ক। ক
3. এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।-কোন্ ক প্রসঙ্গে বস্তার এমন মনে হয়েছে? এর থেকে তিনি কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কু রকেট তৈরি করার জন্য গবেষণাগারে নানারকম পরীক্ষা করে দেখছিলেন। এমন সময় একটি বিশেষ রাসায়নিক পরীক্ষা করার প্রাক্-মুহূর্তে যন্ত্রমানব বিধুশেখর ঘটাং ঘটাং শব্দে মাথা নাড়িয়ে তাঁকে বাধা দেয়। পরে ওই পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত (ভেলোসিলিকা) রাসায়নিকটিকে নির্বাচন করতেও সাহায্য করে। এভাবে শেষপর্যন্ত শঙ্কু রকেট নির্মাণের জন্য উপযুক্ত ধাতু সফলভাবে প্রস্তুত করেন। অথচ যন্ত্রমানবের সমস্ত কলকব্জা খুলে পরীক্ষা করে দেখেও তার এহেন আচরণের বা আওয়াজের কোনো যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা কিংবা কারণ খুঁজে না। পেয়ে তিনি উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।
এর ফলে কোনো কোনো সময় প্রোফেসর শঙ্কুর মনে হয়, কোনো এক অজ্ঞাত শক্তি অদৃশ্যভাবে তাঁর ওপর কাজ করছে। কিন্তু এধরনের ব্যাখ্যা আবার তাঁর নিজেরও মনঃপূত হয় না। তারপর একটু তলিয়ে দেখে শঙ্কুর মনে হয়েছে আসলে তাঁর ক্ষমতার দৌড় কতখানি সে সম্পর্কে তিনি নিজেও ওয়াকিবহাল নন। অর্থাৎ এক অনন্য প্রতিভার মধ্যে নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়ার যে অতিমানবিক বিরল গুণ লুকিয়ে থাকে, বড়ো বড়ো বৈজ্ঞানিকদের মতো শঙ্কুর ভেতরেও তা প্রচ্ছন্ন ছিল। তাই শঙ্কুর তৈরি বিধুশেখর কিংবা মঙ্গলযান বিপদের সময় অত্যাশ্চর্য দক্ষতার পরিচয় দিয়ে, তাঁকেই বারংবার অবাক করে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে।
4. 'একদিনের ঘটনা খুব বেশি করে মনে পড়ে'-কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ বিধুশেখরের কার্যকলাপ সম্পর্কেই এই মন্তব্যটি করেছেন শঙ্কু। বিধুশেখর শঙ্কুর নিজের হাতে তৈরি করা কলকব্জার মানুষ। তার কাজ, নির্দেশ অনুযায়ী চুপচাপ কাজ করে যাওয়া। কিন্তু কিছুদিন ধরে শঙ্কু ওর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করেন। মঙ্গল অভিযানে যাওয়ার জন্য রকেট তৈরি করার মুহূর্তে শঙ্কু জানতেন না ঠিক কোন্ রাসায়নিক মেশালে সেই ধাতুটি তিনি পাবেন। অনেক কষ্টে ব্যাঙের ছাতা, কচ্ছপের খোল, সাপের খোলস, আর ডিমের খোলা মেশানোর পর বুঝতে পেরেছিলেন ট্যানট্রাম, বোরোপ্যাক্সিনেট কিংবা একুইয়স ভেলোসিলিকা মেশালেই তিনি জিনিসটা পেয়ে যাবেন। ট্যানট্রাম মেশাতে গেলে বিধুশেখর ভয়ংকর শব্দ করে মাথা নেড়ে বারণ করতে থাকে। আবার ভেলোসিলিকা হাতে নিতেই মাথা নাড়িয়ে শব্দ করে সম্মতি জানায়। শেষ পর্যন্ত ভেলোসিলিকা মিশিয়েই রকেটের ধাতুটা তৈরি হয়েছিল। বিধুশেখরের এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কথাই বলা হয়েছে এই ঘটনাটির মাধ্যমে।
5. 'একটা বিশেষ দিন থেকে এটা আমি অনুভব করে আসছি'-উক্তিটি কার? কোন্ বিশেষ দিনের কথা বলা হয়েছে? বক্তা ওইদিন থেকে কী অনুভব করে আসছেন? ১+২+২= ৫
উত্তরঃ উদ্ধৃত উক্তিটি সত্যজিৎ রায়ের 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' রচনাংশের অন্যতম চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর।
বক্তা যে দিনটার কথা বলেছেন সেটা প্রায় বারো বছর আগের একদিনের কথা। বক্তার একটা অভ্যাস ছিল আশ্বিন-কার্তিক মাসের রাত্রিগুলিতে রাতের খাবার সেরে প্রত্যেকদিন প্রায় তিন ঘণ্টা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকতেন উল্কাপাত দেখার জন্য। হঠাৎ একদিন তিনি একটা উল্কাকে একটু অন্যরকম দেখলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল উল্কাটা ক্রমশ বড়ো হচ্ছে এবং তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। বক্তা সেটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখলেন উল্কা ক্রমে ক্রমে কাছে এসে বাগানের পশ্চিমদিকের গোলঞ্চ গাছটার পাশে থেমে প্রকাণ্ড একটা জোনাকির মতো জ্বলতে লাগল। উল্কাপাতের সে আশ্চর্য দৃশ্য দেখবেন বলে বক্তা চেয়ার ছেড়ে উঠতেই তাঁর ঘুম ভেঙে যায়।
সেই দিন থেকেই বক্তা অনুভব করেন যে পৃথিবীর বাইরের জগতের প্রতি তাঁর একটা আশ্চর্য টান আছে। তাঁর মনে হয়, কোনো একদিন যদি পৃথিবী ছাড়িয়ে একটু ওপরে উঠতে পারেন, -তবে সেই টান আপনা থেকেই অন্য কোনো গ্রহে তাঁকে নিয়ে গিয়ে ফেলবে।
6. 'ওকে আপাতত অকেজো করেই রেখে দেব'-কার কথা বলা হয়েছে? কেন তাকে অকেজো করে রাখা হবে? ১+৪=৫
উত্তরঃ শঙ্কুর নিজের হাতে তৈরি কলকব্জার মানুষ অর্থাৎ বিধুশেখরের কথা বলা হয়েছে।
শঙ্কু তাঁর দলবল নিয়ে যখন রকেটে চেপে মঙ্গলগ্রহে প্রায় পৌঁছে গেছেন ঠিক তখনই বিধুশেখর এক কাণ্ড ঘটিয়েছিল। রকেটের মধ্যে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎই সে একলাফে যন্ত্রপাতির বোর্ডটার কাছে উঠে গিয়ে উলটো দিকে ফিরে চলার হ্যান্ডেলটা ধরে প্রচন্ড টান দিয়েছিল। ঝাঁকুনির চোটে তখন সবাই রকেটের মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। কোনোরকমে বিধুশেখরকে শঙ্কু কাঁধের বোতাম টিপে বিকল করেন। বিধুশেখরের এই পাগলামির কারণ বুঝতে না পেরে শঙ্কু তাকে মঙ্গলে না পৌঁছোনো পর্যন্ত অকেজো করেই রাখবেন ঠিক করেন।
7. 'আমরা দু'ঘণ্টা হল মঙ্গলগ্রহে নেমেছি।'-'ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি' গল্প অবলম্বনে মঙ্গলগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, প্রোফেসর শঙ্কুরা কীভাবে মঙ্গলীয় সৈন্যদের কবলে পড়েছিলেন এবং তা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, তা সংক্ষেপে গল্প অনুসরণে লেখো। ৫
উত্তরঃ মঙ্গলগ্রহের গাছপালা, মাটি, পাথর সবই যেন নরম রবারের মতো। নরম পাথরের ঢিবির রং হলুদ। এ ছাড়া ওখানকার সমস্ত নদীর রং লাল। সেখানকার জল স্বচ্ছ পেয়ারার জেলির মতো, যার স্বাদ যেন অমৃত। একটু খেলেই মন ও শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবে জল বয়ে যাওয়ার কুল কুল শব্দ হয় না; কেমন একটা স্থির, শান্ত, থমথমে ভাব চারদিকে। আবহাওয়া গরমের দিকে হলেও, মাঝে মাঝে একটা ক্ষণস্থায়ী হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়। নতুন জগতের বিচিত্র গন্ধ পেয়েছিলেন শঙ্কু, যা গাছপালা-জলমাটির নয় একান্ত মঙ্গল গ্রহেরই গন্ধ, তার আবহাওয়ার সঙ্গে মিলে রয়েছে। আর এই মঙ্গলেই রয়েছে মানুষ, মাছ ও জন্তুর সংমিশ্রণে গঠিত একদল অদ্ভুত প্রাণী। হাত তিনেক লম্বা, মাছের মতো ডানা, মুখজোড়া দন্তহীন হাঁ, মাঝখানে প্রকাণ্ড সবুজ চোখ এবং এদের সর্বাঙ্গ মাছের আঁশে ঢাকা। এদের আক্রমণের মুখে পড়ে প্রোফেসর শঙ্কু এবং তাঁর সঙ্গী-সাথিরা অত্যন্ত সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।
8. 'ঘটনাটা ঘটল প্রথম দিনেই'—প্রথম দিনেই কী ঘটনা ঘটেছিল লেখো।
উত্তরঃ মঙ্গলগ্রহ যে তার নাম অনুযায়ী মোটেই মঙ্গলজনক নয়, বরং ভীষণ অমঙ্গলজনক তা প্রথম দিন মঙ্গলগ্রহে নেমেই বুঝতে পেরেছিলেন শঙ্কু। সেখানকার এক অদ্ভুত জীবের পাল্লায় পড়েছিলেন তিনি। একটা টিলার ওপর উঠে সকালবেলার আলোয় তিনি যখন সমস্তটা দেখে নেবেন ভাবছিলেন তখন একধরনের আঁশটে গন্ধ ও অদ্ভুত শব্দে চারদিক ভরে যেতে থাকে। হঠাৎই শঙ্কু প্রহ্লাদকে ডান হাতের মুঠোয় নিউটনকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে রকেটের দিকে ছুটে আসতে দেখেন। যে অদ্ভুত জন্তুটা তার পিছু নিয়েছে সেটা দেখতে না মানুষ, না জন্তু, না মাছ। হাতের বদলে তার রয়েছে অতিকায় মাছের মতো ডানা। মুখে কোনো দাঁত নেই। মাথার মাঝখানে প্রকাণ্ড একটা সবুজ চোখ। সর্বাঙ্গে মাছের মতো আঁশ। জন্তুটা ভালো করে ছুটতে পারে না। তাই প্রহ্লাদের নাগাল সে পায়নি। পরে হাজার হাজার ওই ধরনের মঙ্গলীয় সৈন্য তাদের তাড়া করেছিল। এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।
9. 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' অনুসরণে মঙ্গল থেকে টাফা অভিযানের যাত্রাপথের বিবরণ লেখো। ৫
উত্তরঃ প্রোফেসর শঙ্কু মঙ্গলীয় সৈন্যের কবল থেকে বিধুশেখরকে উদ্ধার করে, কোনোক্রমে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে রকেটে উঠেই জ্ঞান হারান। পরে জ্ঞান ফিরে আসার পর তিনি দেখেন রকেট স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মহাকাশের অচেনা পথে উড়ে চলেছে। প্রহ্লাদ কিছুটা সামলে নিলেও তার অসংলগ্নতা কাটেনি আর মঙ্গলীয়দের আঁশটে মেছো শরীরে দাঁত বসানোয় বেড়াল নিউটনের মুখে অরুচি। যদিও এখন তা খানিকটা কম। সকলেরই শরীর-মন ক্লান্ত ও অবসন্ন। একমাত্র ব্যতিক্রম বিধুশেখর। তাকে সচল করা মাত্রই সে ধন্যবাদ জানায় এবং প্রহ্লাদের মুখে রামায়ণ-মহাভারত শুনে শুনে শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করে কথা বলতে শুরু করে। এই বিধুশেখরের কথায় মহাকাশযানের জানলা খুলে তারা অবাক হয়ে যায়। এক বিচিত্র জগতের মধ্যে ওরা এসে পড়েছে। আকাশময় আলোর বুদ্বুদ ফুটছে আর ফাটছে, যেন সোনার বল ফোয়ারা হয়ে ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। ব বারবার এই দৃশ্য বদলাতে থাকে, এমন দৃশ্য প্রহ্লাদকেও মুগ্ধ তি করেছে আর নিউটন জানলার কাচ খামচে বুঝিয়েছে সে বাইরে তৈ যেতে চায়। এইভাবে আশ্চর্য তৎপরতায় অগ্ন্যুদ্গার, পাথরের নি চাঁইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে শঙ্কুর তৈরি মহাকাশযান তাঁদের দে নিয়ে নিরাপদে নতুন গ্রহ টাফায় পৌঁছোয়। আনন্দিত নিশ্চিন্ত চে বিধুশেখরের মুখ থেকে জানা যায় অসংখ্য জোনাকির আলোয় সজ্জিত এই নতুন গ্রহটির নাম টাফা।
10. 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' গল্পে বিধুশেখর মত চরিত্রটির পরিচয় দাও। ৫
উত্তরঃ 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি'তে বিধুশেখর হল প্রোফেসর অন শঙ্কুর হাতে তৈরি এক যন্ত্রমানব। সে প্রায় সব কাজেরই কাজি। পে সবরকম যন্ত্রের প্রয়োগ করে শঙ্কু তাকে বানালেও আলাদা করে প্রভকোনো শব্দ করা, হাত-পা নাড়ানো কিংবা নিজস্ব চিন্তাশক্তি থাকার নিয় কথা নয়। শুধুমাত্র নাড়াচাড়া করে কাজকর্ম করার সময় ঠং ঠং সম্প শব্দ হতে পারে- শঙ্কু বিধুশেখর সম্পর্কে এটাই জানতেন কিন্তু মঙ্গলগ্রহে যাবার প্রস্তুতি শুরু হতেই বিধুশেখরের মধ্যে - এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করা গেল, যা রীতিমতো তাজ্জবের - কথা। এমনকি সে শঙ্কুকে রকেট তৈরির জন্য কোন্ ধাতু নিরাপদ না তা নিয়ে নির্দেশও দিয়েছে। বিধুশেখরের মধ্যে হাস্যরসও ছিল - যথেষ্ট। তাই-তো প্রহ্লাদকে অবিনাশের পোশাক পরাতে গেলে সে হেসেছে। স্পষ্ট উচ্চারণ করতে না পারলেও শঙ্কু তাকে যে বাংলা শিখিয়েছেন তাতে সে নিজের মতো উচ্চারণ করে পথ নির্দেশ করেছে। ভবিষ্যতের বিপদ সম্পর্কে শত্রুকে সে সাবধান করেছে। তার প্রমাণ মঙ্গলগ্রহের অদ্ভুত আকৃতিবিশিষ্ট জন্তুদের কবলে পড়া। আবার মঙ্গল থেকে বেরিয়ে সৌরজগতের বিচিত্র পরিবেশের দৃশ্য বিধুশেখরের হাত ধরেই শঙ্কু প্রত্যক্ষ করেছেন। শঙ্কুকে বিধুশেখরই জানিয়েছে, তারা মঙ্গলের থেকে বেরিয়ে নতুন গ্রহ টাফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। কিন্তু টাফায় মানুষদের সম্পর্কে বিধুশেখর যা বলেছিল তা মেলেনি। তার কথায় টাফায় সবাই বৈজ্ঞানিক এবং ওদের সভ্যতা পৃথিবীর তুলনায় বেশি পুরোনো, যার সঙ্গে বাস্তবের মিল ছিল না।
11. ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' গল্পের উল্লেখযোগ্য চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কু। গল্পে তাঁর কার্যকলাপ সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তরঃ 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি'তে সুন্দরবনের মাথারিয়া অঞ্চল থেকে তারক চাটুজ্যের আবিষ্কৃত ডায়রি থেকে প্রোফেসর শঙ্কুর কথা জানতে পারা যায়। এই ডায়রিতে শঙ্কুর মঙ্গলগ্রহে যাত্রার সমস্ত তথ্য লেখা ছিল। আর এরই ভিত্তিতে শঙ্কুর নানান গতিবিধি আমরা জানতে পারি। তাঁকে নিয়ে নানান গল্প চালু ছিল। প্রায় পনেরো বছর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। কেউ বলেন, তিনি গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন, আবার কেউবা বলেন, তিনি এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে মারা গেছেন। তিনি একজন বৈজ্ঞানিক। তিনি এতটাই আত্মভোলা এবং নানান পরীক্ষানিরীক্ষা নিয়ে মগ্ন থাকতেন যে দীর্ঘদিন নিজের চেহারাটাই ভালোভাবে দেখা হত না তাঁর। আর এজন্যই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারার বিদঘুটে পরিবর্তনে নিজেই নিজেকে চিনতে পারেননি তিনি। মঙ্গল অভিযান তাঁর বহুদিনের শখ। আগে একবার মঙ্গল অভিযানের আয়োজন করেও স্রেফ প্রহ্লাদের ভুলে কিছুটা উঠেই রকেট অবিনাশবাবুর মুলোর খেতে ভেঙে পড়ে। প্রফেসর শঙ্কু মঙ্গল অভিযানে কী কী নিতে হবে জানতেন, তাই দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিসে অযথা রকেট ভারী করেননি। এক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারগুলি কাজে লেগেছিল- যেমন পোষা বিড়ালের খাদ্য হিসেবে ফিস পিল, যন্ত্রমানব বিধুশেখর প্রভৃতি। শঙ্কুর কর্মকাণ্ড পাঠককে হতচকিত করলেও তাঁর নিয়মিত ডায়রি লেখার অভ্যাস আমাদের মঙ্গলের আবহ ইত্যাদি সম্পর্কে উৎসাহিত করে। কাল্পনিক হলেও শঙ্কুর কার্যকলাপ আমাদের এক রসবোধে উত্তীর্ণ করে।
No comments:
Post a Comment